জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সময় এগিয়ে যায়, পুরনো প্রথা পুরনো হয়ে গিয়ে পিছনে পড়ে থাকে। অনেকেই সেসব পালন করতে কুণ্ঠা করেন। ভাবেন, সমাজে হয়তো তিনি একজন পিছিয়ে-পড়া মানুষ হিসেবে গণ্য হবেন। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায়, পুরনো এই সব নিয়ম-কানুনের মধ্যে কোনও গভীর চিন্তার প্রকাশ আছে। তেমনই একটা প্রথা হল শাঁখা-সিঁদুর পরা। ইদানীং অনেক হিন্দু স্ত্রী শাঁখা-সিঁদুর পরতে লজ্জা পান। অনেক নব-পরিণীতাই শাঁখা-সিঁদুরকে নতুন দিনের আধুনিক সংস্কৃতির পরিপন্থী বলে মনে করেন। কেউ কেউ কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিতেও কুণ্ঠা বোধ করেন না। এরই মধ্যে এমন কয়েকজন থাকেন যাঁরা নিয়ম-রক্ষার  জন্য শাঁখা-সিঁদুর ধারণ করেন। কেউ কেউ সিঁদুর ধারণ করেন বটে কিন্তু বিশেষ কেশ-বিন্যাসে তা আড়াল করে রাখেন। এমন ভাবে, যেন এটি দৃষ্টিগ্রাহ্য না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: Chocolate Day 2023: প্রেম উদযাপনের এই আতপ্ত সপ্তাহে আলাদা করে একটি চকোলেট ডে-ও কেন পালিত হয় জানেন?


তবে সমাজের হালচাল নিয়ে, লোকাচার নিয়ে চর্চা করা মানুষজনের দাবি, শাখা-সিঁদুর-নোয়া-পলা পরার রীতিনীতিকে বা এই হিন্দু-সংস্কারকে ঠিক কুসংস্কার বলা চলে না। তাঁরা বলেন, এই সব সংস্কারের পিছনে এক সূক্ষ্ম ও গভীর দর্শন লুকিয়ে আছে। যা অতি মহৎ ও উদার।


একজন নারীর শাঁখা-সিঁদুর ধারণ করার অর্থ সহজ কথায় তিনি একজন বিবাহিত মহিলা। অর্থাৎ তিনি সংসারজীবনে প্রবেশ করেছেন। কেউ কেউ বলে থাকেন, স্ত্রী তাঁর স্বামীর মঙ্গলকামনায় শাঁখা-সিঁদুর পরে থাকেন। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। কারণ কোনো স্বামী তো তাঁর স্ত্রীর মঙ্গলকামনায় নিজেদের শরীরে বিশেষ কিছু ধারণ করেন না!মঙ্গল কামনার দায় স্ত্রীর একার হবে কেন?


আরও পড়ুন: Sankashti Chaturthi 2023: চলছে সংকষ্টী চতুর্থী, জেনে নিন বিরল এ তিথির বিশেষত্ব, পূজাবিধি, তাৎপর্য...


এখানেই শাস্ত্রকারদের বা লোকাচার বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য বিশ্লেষণ করে শাঁখা-সিঁদুরের সমর্থকেরা বলছেন-- সংসারী মানুষ মাত্রেই সত্ত্ব রজো ও তমো এই তিনগুণের অধীন। সত্ত্ব উত্তম, রজো মধ্যম এবং তমো অধম গুণ। এই গুণগুলি একে অন্যের পরিপূরক। জ্ঞান-বুদ্ধি হল সত্ত্বগুণ, কর্ম রজোগুণ এবং অবিদ্যা বা অজ্ঞানতা তমোগুণকে নির্দেশ করে। সাদা বর্ণ দ্বারা সত্ত্ব গুণ, লাল বর্ণ দ্বারা রজো গুণ এবং কালো বর্ণ দ্বারা তমো গুণ প্রকাশ করা হয়ে থাকে।


এর মধ্যে রজোগুণকে সংসারের চালিকাশক্তি বলে মনে করা হয়। অধিকন্তু সংসারকালেই, অর্থাৎ, বিবাহিত জীবনে নারীরা প্রকৃতির নিয়মে এবং শরীরের স্বভাবেই রজঃস্বলা হন। যা এক হিসেবে রজোগুণেরই পরিচায়ক। জীবধর্ম রক্ষার্থে বিবাহিত নারী তাঁর স্বামীর সঙ্গে যে শারীরিক মিলনে রত হন তাকেও রজোগুণেরই পরিচায়ক বলে মনে করা হয়। সংসারে নারীদের রজোগুণেরই প্রাধান্য। সেই প্রাধান্যকে মূর্ত করে তোলা হয় শাখা-সিঁদুর-নোয়া-পলা ধারণ করে। এর মধ্য়ে মস্তক হল দেহের প্রধান অঙ্গ। সুতরাং মস্তকে, অর্থাৎ, কপালে লালবর্ণের সিঁদুর ধারণ করা হয়। হাত কর্মের প্রতীক। সংসারের বিপুল কর্মভার মেয়েদের এই হাত দিয়েই বহন করতে হয়। অতএব মেয়েদের হাতে সাদা শাঁখা ও লাল পলা পরার রীতি। এখানে সত্ত্ব ও রজোগুণের সমন্বয়। সাদা শাঁখা সত্ত্ব ও লাল পলা রজোগুণের প্রতীক। কিন্তু তমোগুণকেও তো উপেক্ষা করা যায় না! সংসারের নানা কাজে তমোগুণেরই প্রাধান্য। এর মধ্যে নিদ্রা আছে (মৈথুনকেও তমোর প্রভাব বলে কোনও কোনও মতে মনে করা হয়)। এজন্য বিবাহিত মেয়েরা হাতে লোহনির্মিত নোয়া পরেন। 


মোট কথা, নারীর মধ্যেই প্রকৃতির তিন গুণ এই সত্ত্ব, রজো ও তমো সুন্দর রূপে ফুটে ওঠে। এই কারণেই নারীকে অনেকে প্রকৃতি বলে থাকেন। নারীরা রজোগুণকে আশ্রয় করেই কর্ম করেন বটে, তবে তাঁর মধ্যে তিনগুণই সময়ভেদে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর এই সবটা বোঝাতেই তাঁরা যথাক্রমে সাদা, লাল ও কালো রংযুক্ত শাঁখা, পলা-সিঁদুর ও নোয়া পরে থাকেন।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)