ওয়েব ডেস্ক: কথায় আছে একটা ছবি ১০০০ শব্দের থেকেও বেশি কিছু বলে। সত্যি তাই। ছবিকে অস্ত্র করেই বিচার পেল নির্যাতিতা, যে কথা মুখে বলে বোঝানো সম্ভব নয়, তা সবার কাছে স্পষ্ট করে দিল একটা ছবি। নিজের ধর্ষক কাকাকে সাজা দিতে ১০ বছরের নাবালিকা 'হাতিয়ার' হিসেবে আদালতে পেশ করল নিজের আঁকা একটি স্কেচ। কীভাবে টানা দুবছর ধরে 'পিতৃসম' কাকার হাতে নির্যাতিত হতে হয়েছে 'কন্যাসমা' ভাইজি, তারই সচিত্র প্রমাণ দেখে বিস্মিত গোটা কোর্ট রুম। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সাদা পাতাটায় একটা মর্চে ধরা ভাব। একটু হলদেও হয়ে গেছে। তবে কালো রঙের দাগগুলো এখনও মুছে যায়নি, যেমন মুছে যায়নি নির্যাতিতার শরীরে নির্যাতনের আঁচর। খুদের হাতে আঁকা ছবিতে যে বিষয়টা গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে বিচারপতি বিনোদ যাদবেকে সেটা হল, ছবিতে মেয়েটি এঁকেছে একটা জামা মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে... আর গোটা ছবির এই অংশকেই সবথেকে শক্তিশালী যুক্তি হিসেবে পেশ করেছিলেন আইনজীবী চন্দ্র সুমন কুমারও। সমস্ত কিছু আতস কাঁচের তলায় বিচার করার পর বিচারপতি বিনোদ যাদব অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫ বছর কারাবাসের সাজা ঘোষণা করেন। তাছাড়াও আদালত ওই নির্যাতিতার দেখভাল করার জন্য ৩ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দোষী ব্যক্তিকে। 


ঘটনার সূত্রপাত ২০১৪ সাল থেকে। তখন নির্যাতিতার বয়স ছিল মাত্র ৮। মা মারা যাওয়ার পর মাতাল বাবা মেয়েকে তুলে দেয় কাকু-কাকিমার জিম্মায়। সেই থেকেই দিল্লিতে কাকার বাড়িতেই থাকতে শুরু করে নির্যাতিতা। কাকিমার দ্বারা মানসিক নির্যাতন তো ছিলই, সুযোগ পেলেই কাকার কামুক লোভের শিকার হত ৮ বছরের ওই ছোট্ট মেয়ে। কোনও প্রতিবাদ করেতে পারত না সে। তবে মনের ভিতর তৈরি হওয়া গভীর ক্ষতকে সে এঁকে রাখত খাতার পাতায়। এভাবেই চলছিল। সহ্যের বাঁধ একদিন ভাঙল। কোনও উপায়ই না পেয়ে দিল্লিতে কাকুর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সে, পরে তাকে উদ্ধারও করা হয়। এরপরই সক্কলের সামনে আসে কাকার এমন নির্দয় নির্যাতনের কথা। ২০১৬ সালে কাকাকে গ্রেফতার করে পুলিস। শুরু হয় মামলা। অবশেষে অভিযুক্ত কাকা আখতার আহমেদের দোষ প্রমাণ হল, বিচার পেল নির্যাতিতা। 


আদালত জানিয়েছে, "মেয়েটির 'পরিত্রাতা'ই তার ওপর নারকীয় নির্যাতন চালিয়েছে"। বিচারপতি ওই ছবির বিষয়ে বলেন, "হাতে আঁকা ছবির সমস্ত বিষয়কে পারিপার্শ্বিক উপাদান হিসেবে দেখলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, কেউ তার ঘরে আসত এবং তাকে বিবস্ত্র করে তার ওপর বারে বারে নির্যাতন চালাতো। এটাই তার উপর হওয়া নির্যাতনের সবথেকে বড় প্রমাণ। আমি এই ছবিকে শিশুর উপর হওয়া যৌন নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করছি"। 


আইনি লড়াইয়ে বড় জয়ের পর নির্যাতিতার আইনজীবী চন্দ্র সুমন কুমার জানিয়েছেন, "আইনি লড়াই শেষ। এখন থেকে মেয়েটি একটি চিলড্রেন হোমে থাকবে। স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গেই কিশোরী জুড়ে থাকবে প্রতিদিনের পড়াশুনার সঙ্গে। আশা রাখছি ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে টাকাটা ওর জন্য ফিক্সড ডিপোজিট করে দেওয়ার নির্দেশ মহামান্য আদালত দিয়েছে, তা আগামী দিনে ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগবে"।