নিজস্ব প্রতিবেদন: অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলার ঐতিহাসিক রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেছিলেন, ’৯২ সালে মসজিদ ভাঙা আইনবিরুদ্ধ কাজ ছিল। বাবরি মসজিদ ভাঙা নিয়ে মামলা চলছে লখনউয়ের সিবিআই আদালতে। এ দিনের সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট তাত্পর্য বলে মনে করা হচ্ছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ভারতীয় জনতা পার্টি তৈরির ৪ বছর পর ১৯৮৪ সালে নতুন উদ্যমে রামমন্দির আন্দোলন শুরু করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। দু-বছর পর, আদালতের নির্দেশে তালা খুলে যাওয়ায়, তুঙ্গে ওঠে মন্দিরের দাবি। ১৯৮৯। প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন.ডি তিওয়ারি। বিতর্কিত জমির কাছেই রাম মন্দিরের শিলান্যাস করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। পরের বছর অযোধ্যায় মন্দিরের দাবিতে দেশজুড়ে রথযাত্রায় বেরোন লালকৃষ্ণ আডবাণী।


১৯৯০ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর সোমনাথ থেকে অযোধ্যা, যাত্রা শুরু করেন তিনি। সোমনাথ, আমেদাবাদ, সুরাট, মুম্বই, পুণে, হায়দরাবাদ, নাগপুর, ভোপাল, ইনদওর, উদয়পুর, রোহতক, দিল্লি, ধানবাদ, রাঁচি, গয়া, সমস্তিপুর হয়ে অযোধ্যা। যাত্রা চলাকালীন সারা দেশে দেড়শোর বেশি হিংসার ঘটনায় পাঁচশোর বেশি মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।


সমস্তিপুরে লালুপ্রসাদ যাদবের পুলিস আডবাণীকে গ্রেফতার করলেও করসেবকরা পৌছে যান অযোধ্যায়।  ৩০শে অক্টোবর তাঁরা জোর করে বাবরি মসজিদে ঢুকতে গেলে, গুলি চালায় মুলায়ম সিং যাদবের পুলিস। ২০ জন করসেবকের মৃত্যু হয়। ৯১-এর জুনে উত্তরপ্রদেশের কুর্সিতে বসেন কল্যাণ সিং। দিল্লির কুর্সিতে নরসিমা রাও।


আরও পড়ুন- রামলালার পুজোর ফুল, সাধুদের খড়ম আসে মুসলিম বাড়ি থেকেই, অযোধ্যার অলি-গলিতে লুকিয়ে অন্য গল্প


রাম মন্দিরের জন্য জমি অধিগ্রহণও করে কল্যাণ সিং সরকার। ৯২-এর ৩০শে অক্টোবর ভিএইচপি ঘোষণা করে, ৬ই ডিসেম্বর হবে করসেবা। নির্ধারিত দিনে বেলা ১০টার মধ্যেই প্রায় ২ লক্ষ করসেবক বাবরি মসজিদ চত্বরে জড়ো হন।  পৌঁছে যান লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশী, উমা ভারতী, অশোক সিঙ্ঘল এবং বিনয় কাটিয়ার-সহ অন্য নেতারা। দুপুর ১২টা নাগাদ বাবরি মসজিদের ভিতর করসেবকরা ঢুকে পড়েন। ভেঙে দেওয়া হয় মসজিদ। 



সুপ্রিম কোর্টে প্রতিশ্রুতি দিলেও সেদিন করসেবকদের নিয়ন্ত্রণে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেননি কল্যাণ সিং। ৮০ কোম্পানি আধাসেনা পাঠিয়ে দায় সারেন, তত্‍কালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও। পরে, তদন্তের জন্য ১৬ই ডিসেম্বর লিবেরহান কমিশন গঠন করেন তিনি। ২০০৯-এর ৩০শে জুন, ১৭ বছর পর মনমোহন সিং সরকারের কাছে কমিশন রিপোর্ট জমা দেয়। 


তাতে বলা হয় সবটাই ষড়যন্ত্র। সব জানতেন আডবাণী-জোশী-কল্যাণরা। যদিও, পরে আডবাণী দাবি করেন, সেদিন তাঁরা চেষ্টা করেও করসেবকদের মসজিদে ঢোকা আটকাতে পারেননি। বাবরি মসজিদ ধ্বংসে, আডবাণী-জোশীদের বিরুদ্ধে, লখনউয়ের সিবিআই আদালতে এখনও চলছে মামলা।


সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ জানুয়ারির মধ্যে শুনানি শেষ করে এপ্রিলের মধ্যে রায় দিতে হবে। রায়দানের জন্য বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদবের অবসরও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাক্ষীদের মধ্যে অনেকেই মৃত। ২৭ বছর পরও ঢিমেতালে চলছে মামলা। অযোধ্যা জমি বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কোনও প্রভাব বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় পড়ে কিনা, তা নিয়ে এখন নানা মহলে চলছে জল্পনা।