জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: চিরঘুমে শায়িত প্রিয়তমা। আর তাঁর সিঁথি রাঙিয়ে দিচ্ছেন তাঁর ভালোবাসার মানুষটি। সেইসঙ্গে তাঁর প্রিয়তমা শুনতে পাবে না জেনেও, তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তাঁর কাছে প্রতিজ্ঞা করছেন জীবনে আর কোনওদিনও তিনি বিয়ে করবেন না বলে। তাঁর স্ত্রীর আসনে চিরকাল তাঁর প্রিয়তমা-ই থাকবে। এমনই এক ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঘটেছে অসমে। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

অসমের মরিগাঁও জেলার বাসিন্দা ২৭ বছরের ওই হতভাগ্য প্রেমিকের নাম বিটুপান তামুলি। বিটুপান মরিগাঁও জেলারই কৌসুভা গ্রামের মেয়ে ২৪ বছরের যুবতী প্রার্থনা বোরার প্রেমে পড়ে। সেই থেকে দুজনের সম্পর্ক। একে অপরকে প্রবলভাবে ভালোবেসেছিল দুজনেই। একসাথে পথ চলার স্বপ্ন দেখেছিল দুজনে। দুই পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হওয়ারও কথা ছিল যুগলের। একসঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল যুগল। কিন্তু আচমকাই তাতে ছন্দপতন হয়। অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রার্থনা। বাড়িতে অচেতন হয়ে যান প্রার্থনা। তড়িঘড়ি তাঁর পরিজনরা তাঁকে নিয়ে গুয়াহাটির হাসপাতালে ছোটেন। সেখানেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। 


প্রেমিকা প্রার্থনা বোরার এই অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারেননি বিটুপান। প্রার্থনার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন বিটুপান। কাঁদতে কাঁদতেই প্রার্থনার নশ্বর দেহের সঙ্গে তালির বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন। গলায় পরিয়ে দেন বরমালাও। বিয়ে করেন চিরঘুমে শায়িত প্রেমিকাকে। প্রতিজ্ঞা করেন, আর কোনওদিন বিয়ে করবেন না। সিঙ্গল থাকবেন। কারণ প্রার্থনা-ই তাঁর স্ত্রী। তারপর অন্তিম বিদায় জানান তাঁর স্ত্রী প্রার্থনাকে। স্বামী হিসেবে সম্পন্ন করেন শেষকৃত্য। বিটুপানের এই সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই প্রথমে চমকে উঠেছিলেন প্রার্থনার বাড়ির লোকেরা। পরে তাঁরা বুঝতে পারেন, বিটুপান কতটা ভালোবাসেন প্রার্থনাকে!
 
একদিকে দিল্লিতে লিভ-ইন পার্টনার আফতাব আমিন পুনেওয়ালার হাতে তাঁর প্রেমিকা শ্রদ্ধা ওয়াকার, উত্তরপ্রদেশের আজমগড়েও প্রাক্তন প্রেমিকের হাতে যুবতীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড যখন দেশবাসীকে স্তম্ভিত করেছে, তখন অসমের এই ঘটনা দৃষ্টান্তস্বরূপ। বিয়ের জন্য জোরাজুরি করায় প্রেমিকা শ্রদ্ধা ওয়াকারকে খুন করে তাঁর দেহ ৩৫ টুকরো করে জঙ্গলে ফেলে দেয় ফুড ব্লগার লিভ-ইন পার্টনার আফতাব। অন্যদিকে আজমগড়েও প্রাক্তন প্রেমিক যুবতীকে খুনের পর দেহ ৬ টুকরো করে। সম্পর্ক-প্রেম-ভালোবাসার নামে এই ঘটনাগুলি যে কলঙ্ক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উল্টোদিকে অসমের এই ঘটনা, একজন সাধারণ প্রেমিকের নিজেকে উজাড় করা এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা প্রেমের জয়গান লিখে যায়। 


প্রসঙ্গত, রবিবারই প্রয়াত হয়েছেন ক্যানসার আক্রান্ত অভিনেতা ঐন্দ্রিলা শর্মা। ক্যানসারের সঙ্গে অভিনেতার দীর্ঘ লড়াইয়ে সবসময়ই তিনি পাশে পেয়েছেন তাঁর প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরীকে। যুগলের প্রেমকে কুর্নিশ জানিয়েছে সবাই। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অভিনেতা হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই দিন-রাত হাসপাতালেই কাটিয়েছেন সব্যসাচী। সঙ্গী হয়েছেন অভিনেতার অন্তিম যাত্রাতেও। বিদায়লগ্নে ঐন্দ্রিলার পায়ে মাথা ছুঁইয়ে প্রণাম করতে দেখা যায় সব্যসাচীকে। অন্তিমক্ষণে ভালোবাসার মানুষটির পা জড়িয়ে ধরে চুম্বন করেন। কপালে পরিয়ে দেন চন্দনের টিপও। 


তবে, সব্যসাচীর কথাতেই তিনি এমন বেশি কিছু-ই করেননি। প্রিয়জন অসুস্থ হলে প্রত্যেকটা মানুষ যেমন তাঁর সেই প্রিয়জনের পাশে থাকে, তিনিও সেটাই করেছেন। ঐন্দ্রিলা যখন অসুস্থ, হাসপাতালে, সব্যসাচী লিখেছিলেন, 'এসএসকেএম-এ গেলে এরকম অনেক মানুষকে আমরা দেখতে পাই, যাঁরা একইরকভাবে তাঁদের প্রিয়জনের সুস্থ হয়ে ওঠার অপেক্ষায়। আমি তাঁদের থেকে আলাদা নই।' সত্যিই, একদিকে সব্যসাচী আর অন্য়দিকে এই বিটুপানের মত মানুষেরা আছে বলেই বোধহয় মানুষ তাই এখনও ভালোবাসায় বিশ্বাস করতে ভরসা পায়। 


আরও পড়ুন, Aindrila Sharma-Sabyasachi Chowdhury : না ফেরার দেশে ঐন্দ্রিলা, ফেসবুক প্রোফাইল মুছলেন শোকবিহ্বল সব্যসাচী


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)