নিজস্ব প্রতিবেদন : ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭-র ৬ ডিসেম্বর। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে ২৫টা বছর। কিন্তু আজও অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। এখনও চূড়ান্ত হয়নি অযোধ্যার ওই বিতর্কিত জমিতে মন্দির হবে না মসজিদ? মঙ্গলবার অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করেছে ২০১৮-র ৮ ফেব্রুয়ারি। অন্যদিকে, ২০১৮-র অক্টোবর থেকে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মাণ শুরু করা হবে বলে দাবি করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একনজরে দেখে নেওয়া যাক এই বিতর্কের ফেলা আসা দিনগুলি:


১৫২৮- মুঘল সম্রাট বাবরের নির্দেশে অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণ করেন মির বাকি। হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি করে, ভগবান রামের জন্মভূমি অযোধ্যার ওই জমিতে রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তরের উপরই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল।


১৮৮৫- বাবরি মসজিদ নিয়ে দায়ের হয় প্রথম মামলা। মসজিদের পাশেই রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি চান মোহান্ত রঘুবর দাস। কিন্তু ফইজাবাদের ডেপুটি কমিশনার সেই আর্জি খারিজ করে দেন। এরপরই মসজিদের বাইরের দিকের জমিতে মন্দির নির্মাণের অনুমতি চেয়ে মামলা দায়ের করেন রঘুবর দাস।


১৯৪৯- মসজিদের মূল গম্বুজের ভিতরে রাম মূর্তির খোঁজ মেলে। হিন্দু মহাসভার স্বেচ্ছাসেবকরা সেই মূর্তি রেখে এসেছিলেন বলে দাবি করা হয় মুসলিমদের একাংশের তরফে। শুরু হয় বিতর্ক। দুই সম্প্রদায়ই মামলা দায়ের করে। এরপরই সরকার অযোধ্যার ওই জমিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়।  


১৯৫০- মসজিদের ভিতরে রাম মূর্তির আরাধনা করার অনুমতি চেয়ে মামলা দায়ের হয়।


১৯৫৯- বিতর্কিত জমির অধিকার দাবি করে মামলা দায়ের করে নির্মোহী আখড়া।


১৯৮৬- তালা খুলে দেওয়া হয় ও ওই জমিতে হিন্দুদের ধর্মাচারণের অধিকার দেওয়া হয়। বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির নির্মাণের দাবিতে জোরদার প্রচার শুরু করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।


১৯৯০- সেপ্টেম্বর মাসে অযোধ্যার উদ্দেশে রথযাত্রা শুরু করেন লালকৃষ্ণ আদবানি। যদিও অযোধ্যা পৌঁছানোর অনেক আগেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। এরপরই মসজিদে হামলার চেষ্টা করেন করসেবকরা। আধা-সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন করসেবকরা।


৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২- দেড় লাখেরও বেশি করসেবকদের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় বাবরি মসজিদ। সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপি নেতা এল কে আদবানি, মুরলী মনোহর যোশী ও উমা ভারতীর বিরুদ্ধে। হিংসা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।


আরও পড়ুন, ফিরে দেখা গোধরা কাণ্ড : দেড় দশকের 'পোড়া' ইতিহাস


১৯৯৩- বিতর্কিত জমির দখল নেয় উত্তরপ্রদেশ সরকার। একইসঙ্গে ১৫০০ শতাব্দীতে বাবরের নির্দেশে মসজিদ নির্মাণের আগে অযোধ্যার ওই স্থানে হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল কিনা, সুপ্রিম কোর্টকে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়। পাশাপাশি, আদবানি সহ বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে 'ষড়যন্ত্র'-এর অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করে সিবিআই।


৪ মে, ২০০১- ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে আদবানি ও অন্যান্যদের মুক্তি দেয় বিশেষ আদালত। বিশেষ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টে পাল্টা আবেদন করে সিবিআই।


২০ মে, ২০০১- বিশেষ আদালতের রায়ই বহাল রাখে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদবানি ও অন্যান্য বিজেপি নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সিবিআইয়ের মামলা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়।
 
সেপ্টেম্বর, ২০১০- অযোধ্যার বিতর্কিত জমির দুই-তৃতীয়াংশ রাম লাল ও নির্মোহী আখড়াকে এবং এক-তৃতীয়াংশ ওয়াকফ বোর্ডকে দেওয়ার নির্দেশ দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট।


ফেব্রুয়ারি, ২০১১- এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে সিবিআই। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ জারি করে দেশের শীর্ষ আদালত।


১৯ এপ্রিল, ২০১৭- বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় এল কে আদবানি, মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতী সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অভিযোগ প্রাসঙ্গিকভাবেই খারিজ করা যায় না বলে পর্যবেক্ষণে জানায় সুপ্রিম কোর্ট।


মে, ২০১৭- বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় আদবানি, মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতী ও বিনয় কাটিহারের বিরুদ্ধে 'অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র'-এর অভিযোগ দায়ের হয়।


৮ অগাস্ট, ২০১৭- উত্তরপ্রদেশ কেন্দ্রীয় শিয়া ওয়াকফ বোর্ড সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, রামের জন্মভূমি বলে দাবি করা এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদ নির্মাণে তারা রাজি। (আরও পড়ুন, মন্দির হোক অযোধ্যায়, বাবরি বিতর্কে নতুন সমাধানসূত্র শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের)


১১ অগাস্ট, ২০১৭- অযোধ্যার বিতর্কিত জমি সংক্রান্ত ১৩টি আবেদনের শুনানি ৫ ডিসেম্বর থেকে হবে বলে স্থির করে সুপ্রিম কোর্ট।


৫ ডিসেম্বর, ২০১৭- ওয়াকফ বোর্ডের তরফে ২০১৯ লোকসভা ভোটের পর শুনানির দাবি জানানো হয়। সেই দাবি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলায় চূড়ান্ত শুনানির দিন পিছিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ করার কথা ঘোষণা করে দেশের শীর্ষ আদালত।


আরও পড়ুন, অযোধ্যায় রামমূর্তির রক্ষণাবেক্ষণ করেন সংখ্যালঘুরাই