ভর্তি নেয়নি কোনও হাসপাতাল, ৪ জায়গায় ঘুরে করোনায় `বিনা চিকিৎসায়` মৃত্যু দিল্লির কনস্টেবলের
`এই মহামারীর সময়ে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে দিল্লিবাসীর সুরক্ষায় কর্তব্যে অবিচল ছিলেন অমিত রানা। সমগ্র দিল্লিবাসীর পক্ষ থেকে এই বীর শহিদকে আমি স্যালুট জানাচ্ছি। দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারকে ১ কোটি টাকা সাম্মানিক হিসেবে দেওয়া হবে।` টুইট কেজরীর।
নিজস্ব প্রতিবেদন : ভর্তি নেয়নি কোনও হাসপাতাল। কেউ সরাসরি ফিরিয়ে দিয়েছিল। কেউ আবার পরামর্শ দিয়েছিল সেল্ফ-আইসোলেশনের। দিল্লির ভারত নগরের ৩১ বছর বয়সী কনস্টেবল অমিত রানার মৃত্যুর ঘটনায় সামনে এল এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। ঘনিষ্ঠমহলের অভিযোগ, হাসপাতালের অসহযোগিতায় কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে অমিত রানার।
ভাইরাল অডিও ক্লিপ
কনস্টেবল অমিত রানার মৃত্যুর পর ভাইরাল হয়েছে একটি অডিও ক্লিপ। সেখানে সম্ভবত অমিত রানার এক সহকর্মীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, প্রথমে একটি হাসপাতাল তাঁকে ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেয়। তারপর একটা হাসপাতাল তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে দেখেও প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়। ওই সহকর্মীকে আরও বলতে শোনা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় ডিউটি থেকে ফেরার পরই অসুস্থ বোধ করেন অমিত। তখন প্রাথমিকভাবে কিছু ওষুধপত্র খেয়ে তিনি শুতে চলে যান।
হয়রানির শিকার, চূড়ান্ত অমানবিকতা
কিন্তু শরীর ঠিক না হওয়ায় মঙ্গলবার ভোরেই অমিত রানাকে অশোক বিহারের করোনা পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, সেখানে তাঁকে শুধুমাত্র কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে কিন্তু ভর্তি নেওয়া যাবে না বলা হয়। ভর্তি হওয়া যাবে না শুনে সেখান থেকে অমিত রানাকে নিয়ে বাবা সাহেব আম্বেদকর হাসপাতালে যাওয়া হয়। অভিযোগ, সেখানেও তাঁকে ভর্তি নেওয়া যাবে না বলে কর্তৃপক্ষ। এরপরই দিল্লি পুলিসের এক উচ্চপদস্থ কর্তা কিছু ফোন করেন। তাঁর সেই ফোনের পর অমিত রানাকে নিয়ে যাওয়া হয় দীপ চাঁদ বন্ধু সরকারি হাসপাতালে সেখানেও তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য বলা হয়।
এরপর ফের অশোক বিহার পরীক্ষাকেন্দ্রে ফিরে আসেন অমিত রানা। সেখানে তাঁর পরীক্ষা হয়। কিন্তু পরীক্ষার পর তাঁকে ভর্তি না নিয়ে সেল্ফ-আইসোলেশনে যেতে বলা হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরই অমিত রানার শারীরিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে। সেইসময় তাঁকে রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য, করোনায় আক্রান্ত হয়ে দিল্লি পুলিসে প্রথম মৃত্যু হল অমিত রানার। এখনও পর্যন্ত দিল্লি পুলিসের ৭০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯ জন।
আদতে হরিয়ানার সোনিপাতের বাসিন্দা ওই কনস্টেবল উত্তর-পশ্চিম দিল্লির ভারত নগর থানায় কর্মরত ছিলেন। পরিবারে তাঁর স্ত্রী ও ৩ বছরের পুত্রসন্তান রয়েছে। কনস্টেবল অমিত রানার আকস্মিক মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন দিল্লি পুলিসের সুপার এস এন শ্রীবাস্তব। এদিন টুইট করে অমিত রানার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞান করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল। তিনি লিখেছেন, "এই মহামারীর সময়ে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে দিল্লিবাসীর সুরক্ষায় কর্তব্যে অবিচল ছিলেন অমিত রানা। সমগ্র দিল্লিবাসীর পক্ষ থেকে এই বীর শহিদকে আমি স্যালুট জানাচ্ছি। দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারকে ১ কোটি টাকা সাম্মানিক হিসেবে দেওয়া হবে।"
আরও পড়ুন, 'অনেক আগেই করোনা সঙ্কটের গুরুত্ব বুঝে গিয়েছিলেন মোদী,' প্রশংসায় পঞ্চমুখ অমর্ত্য সেন