ওয়েব ডেস্ক: হিন্দু ধর্মের অন্যতম জনপ্রিয় দেবতা জগন্নাথ। আমাদের দেশের উড়িষ্যাও বিখ্যাত জগন্নাথদেবের জন্যেই। জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা, আমরা প্রত্যেকে নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছি যে তাঁদের কারও হাত নেই। কিন্তু এটা কি জানেন যে কেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার হাত দেখা যায় না?


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

হিন্দু ধর্মের অন্যান্য দেবতাদের মূর্তি বা প্রতিমার সঙ্গে জগন্নাথের বিগ্রহের বিশাল তফাত্‌ রয়েছে। দেবতাদের বিগ্রহ সাধারণত আমরা সোনা, রুপো, তামা কিংবা বিভিন্নরকম ধাতু এমনকি মাটি দিয়েও তৈরি হয়। কিন্তু জগন্নাথের বিগ্রহ তৈরি হয় নিম কাঠ দিয়ে। বিগ্রহের আকারও বিচিত্র। চৌকো মাথা, বড় বড় চোখ এবং অসম্পূর্ণ হাত। জগন্নাথের এই অসম্পূর্ণ হাতের পিছনে চলতি অনেক গল্প রয়েছে। কিন্তু আসল কারণটি বেশিরভাগ মানুষেরই জানা নেই।


বলা হয়, জগন্নাথ ভগবান বিষ্ণুরই অন্য রূপ। বিশ্বাস করা হয়, রাজা ইন্দ্রদুম্ন ভগবান বিষ্ণুর মন্দির তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিগ্রহের কেমন আকার দেবেন তা নির্ধারণ করতে পারছিলেন না। তখন তিনি এই সমস্যার কথা সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার কাছে জানান। তখন ভগবান ব্রহ্মা ইন্দ্রদুম্নকে বলেন যে, ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান করে তাঁর কাছ থেকে জেনে নিতে যে, তিনি বিগ্রহের কেমন আকৃতি চাইছেন। ব্রহ্মার কথামতো রাজা ইন্দ্রদুম্ন ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান শুরু করেন।


গভীর ধ্যান করার পর স্বপ্নে ভগবান বিষ্ণু রাজাকে জানান যে, পুরীর কাছে একটি নদীতে একটি কাঠের টুকরো ভেসে যাচ্ছে। সেই কাঠের টুকরো দিয়ে তাঁর বিগ্রহ তৈরি করতে হবে। স্বপ্নাদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজা সেই জায়গায় দ্রুত যান। গিয়ে দেখতে পান সত্যিই নদীতে একটি কাঠের টুকরো ভেসে যাচ্ছে। কাঠের টুকরোটি তুলে নিয়ে এসে তিনি শিল্পীকে দিয়ে বিগ্রহ তৈরি করানোর কাজ শুরু করেন। কিন্তু যতবারই সেই শিল্পী কাঠের টুকরোটি কাটতে যাচ্ছেন, ততবারই সেটি ভেঙে যাচ্ছে।


এমনভাবে কীকরে বিগ্রহ তৈরি হবে? চিন্তায় পড়ে যান রাজা। তখন বিশ্বকর্মা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু বিশ্বকর্মার একটাই শর্ত ছিল যে, তিনি যতক্ষণ কাজ করবেন, তাঁকে কোনওরকম বিরক্ত করা চলবে না। রাজা সেই শর্তে রাজি হয়ে যান। একটি বন্ধ ঘরের মধ্যে বিশ্বকর্মাও বিগ্রহ তৈরির কাজ শুরু করেন। দু- সপ্তাহ পরে হঠাত্‌ একদিন সেই বন্ধ ঘর থেকে কোনও আওয়াজ আসছিল না। রাজা ইন্দ্রদুম্নের স্ত্রী বলেন যে, তাঁদের এখনই ঘরের ভিতরে গিয়ে দেখা উচিত্‌ যে সব ঠিকঠাক আছে কিনা।


এদিকে রাজা ইন্দ্রদুম্নের ঘরে প্রবেশের কোনও ইচ্ছাই ছিল না। আবার কোনও আওয়াজ না পাওয়ায় তিনি চিন্তাতেও ছিলেন। তাই তাঁর কাছে ঘরে প্রবেশ করা ছাড়া আর কোনও উপায়ও ছিল না। অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও তিনি ঘরে প্রবেশ করেন। ঘরে ঢুকে দেখেন, সেখানে কোনও কারিগর নেই। শুধু অসম্পূর্ণ একটি বিগ্রহ রয়েছে। রাজা বিশ্বকর্মার আদেশ অমান্য করার জন্য অনুতাপ করেন। তখনই দৈববাণী হয়। সম্ভবত ভগবান বিষ্ণুই দৈববাণী করে বলেন, যে আকৃতির বিগ্রহ তৈরি হয়েছে, সেই বিগ্রহই যেন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভগবান বিষ্ণুর আদেশ মতো রাজা ইন্দ্রদুম্ন সেই বিগ্রহই প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার হাত-হীন অসম্পূর্ণ বিগ্রহের মাহাত্ম দেশ জুড়ে ছেয়ে যায়।