নিজস্ব প্রতিবেদন: ২৬ নভেম্বর সন্ধের মধ্যেই মুম্বই ‘মৃত্যুপুরী’-তে পরিণত হয়েছিল। লিওপোল্ড ক্যাফে, ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসে জঙ্গিদের হানায় মৃত্যু মিছিল বাড়তে বাড়তে প্রায় ৭০ ছাড়িয়েছিল। আহত হয়েছিল আরও শতাধিক। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেনি। এরপর রাত গড়াতেই তাজ হোটেল, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট এবং নরিম্যান হাউজে শুরু হয় জঙ্গিদের তাণ্ডব। যা দেখে গোটা দেশ শিহরিত হয়েছিল। এক দশক পরেও তার ক্ষত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেশবাসী।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING


 চার দিন ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে টানা গুলির লড়াইয়ে শেষমেশ জয় হয়েছিল দেশের নিরাপত্তারক্ষীর। কিন্তু ততক্ষণে প্রাণ চলে যায় পুলিস- এনএসজি কম্যান্ডো-সহ ১৬৩ জনের। জীবনকে বাজি রেখে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন তুকারাম ওম্বলে, হেমন্ত কারকারে, অশোক কামতে-র মতো পুলিস কর্তারা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন এনএসজি কম্যান্ডো মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন-ও। ডান হাতে গুলি লেগে লুটিয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “কেউ উপরে উঠে এসো না, আমি একা হাতে সামলে নেব।”


আরও পড়ুন- বিদেশ থেকে ফিরল কত কালো টাকা, জানাতে অস্বীকার প্রধানমন্ত্রীর দফতরের


অভিযানে সন্দীপের সঙ্গীরাও সেই দৃশ্যকে স্মরণ করে মেনে নিচ্ছেন, সত্যিই তিনি এক হাতে জঙ্গি নিধনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এনএসজি-র ৫১ স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ (এসএজি) যে অভিযানে নেমেছিল, সেই দলের মুখ্য দায়িত্বে ছিলেন মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন।



১০ জন কম্যান্ডোরের একটি দল নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করেন তিনি। সিঁড়ি বেয়ে দলটি পাঁচ তলায় পৌঁছনর চেষ্টা করে। কিন্তু মাঝ পথেই জঙ্গিরা গুলি চালায়। সন্দীপ দেখতে পান, দোতলার একটি ঘরে কয়েকটি মহিলাকে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁদের উদ্ধার করার চেষ্টা চলে। জঙ্গির গুলিতে গুরুতর জখম হন সন্দীপের এক সহকর্মী সুনীল যাদব। পাল্টা গুলির জবাব দিতে থাকেন সন্দীপ। পাশাপাশি, ‘বন্ধু’ সুনীলকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান তিনি। সে সময় পালানোর চেষ্টা করে জঙ্গিরা। নাছোড় সন্দীপও ধাওয়া করে জঙ্গিদের। হঠাত্ ডান হাতে গুলি লেগে লুটিয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু সতীর্থদের নিরাপদে রাখতে তিনি বলতে থাকেন, “কেউ উপরে উঠে এসো না, একা হাতে সব সামলে নেব।”


আরও পড়ুন- মুম্বই হামলার ১০ বছর, জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য দিলে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার


সন্দীপের এই বীরত্বের কাহিনি-ই এনএসজি কম্যান্ডো দফতরে সবার মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু অনেকেই জানতেন না সন্দীপের ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে। এমনকি তাঁর বাবা ইসরোর প্রাক্তন অফিসার উন্নিকৃষ্ণন-ও।



তিনি বলেন, এক দিন ছেলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দেখে হতবাক। তাঁর অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে মাত্র ৪ হাজার টাকা। কিন্তু সন্দীপের রোজগার খারাপ ছিল না। পরে তাঁর বাবা জানতে পেরেছেন, যে বিপদে পড়ত, তাঁকে দরাজ হাতে সাহায্য করত ছেলে। সন্দীপের এক সহকর্মী বলেন, তাঁর মা হাসপাতালে ভর্তি হলে, মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে সাহায্য করেন সন্দীপ। এমন অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দু’হাত ভরে সাহায্য করতেন তিনি। এক মেজরের কথায়, সন্দীপ এতটাই সন্তর্পণে সাহায্য করতেন, যে তাঁর অন্য হাতও টের পেত না। 



তবে, সন্দীপ বরাবরই জয় করতে ভালবাসতেন। তাঁর বাবা বলেন, ইসরোর কোনও প্রোজেক্ট ব্যর্থ হলে, ছেলে আমাকে সান্ত্বনা দিত। কখনও পরাজয় স্বীকার করত না। যে দিন ভারত হারত, বেজার মুখ করে বসে থাকত। সচিন তেন্ডুলকর ছিল তাঁর অনুপ্রেরণা। সবকিছুতেই ছিল অদম্য জয়ের নেশা...তাই হয়ত ২৮ নভেম্বর রাতে মাটিতে লুটিয়ে গিয়েও জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়ে গিয়েছেন মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন।