জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ভারতীয় বিমান বাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সবচেয়ে উন্নত সামরিক বাহিনীর মধ্যে একটি। তবুও, পুরানো MiG-21 যুদ্ধবিমান যা একাধিক ক্র্যাশের সাক্ষী সেই বিমানের ব্যবহার আইএএফর প্রতি মানুষের মনভাব বিরুপ করে তুলেছে। Sukhoi Su-30MKI, Rafale এবং ভারতের নিজের তৈরি তেজস LCA-এর মতো আরও উন্নত বিমান থাকা সত্ত্বেও, ভারতীয় বিমান বাহিনী সোভিয়েত-নির্মিত MiG-21 এখনও ব্যবহার করে চলেছে। ২০১২ সালে, প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি সংসদে বলেন যে রাশিয়া থেকে কেনা ৮৭২ মিগ বিমানের অর্ধেকেরও বেশি ভেঙে পড়েছে। যাতে ১৭১ জন পাইলট, ৩৯ জন বেসামরিক এবং আরও আটজন পরিষেবার লোক সহ ২০০ জনেরও বেশি মানুষ তাদের জীবন হারিয়েছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এর ফলে কেন ভারতীয় বিমান বাহিনী এখনও মিগ -২১ ব্যবহার করছে তা নিয়ে অনেক জল্পনার জন্ম হয়েছে। এই বিমানকে প্রায়ই সমালোচকরা 'উড়ন্ত কফিন' বা 'বিধবা মেকার' হিসাবে অভিহিত করেন। যদিও ভারতের বিমান বাহিনী থেকে অনেক আগেই মিগ-২১-এর অবসর নেওয়া উচিত ছিল কিন্তু আইএএফের এখনও ফাইটার জেট চালানোর নিজস্ব কারণ রয়েছে। কেন MiG-21 এখনও আইএএফ-এ কাজ করছে এবং এর বিকল্প কী?


যুদ্ধবিমানের সংকট


IAF এখনও কেন MiG-21 উড়ছে তার একটি প্রাথমিক কারণ হল বাহিনীর হাতে যুদ্ধবিমানের ঘাটতি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে তেজস এলসিএ এবং রাফায়েলকে অন্তর্ভুক্ত করা সত্ত্বেও, আইএএফ অনেকাংশে বাহিনীতে প্রাথমিক ফাইটার জেট হিসাবে থাকা মিগ-২১ এর উপর নির্ভরশিল। আইএএফ-এর এখন পর্যন্ত ৩২টি স্কোয়াড্রন রয়েছে। অন্যদিকে চিন এবং পাকিস্তানের সম্মিলিত হুমকি মোকাবেলায় আইএএফ বক্তব্য অনুযায়ী আনুমানিক ৪২টি স্কোয়াড্রন প্রয়োজন।


এই ৩২টি স্কোয়াড্রনের মধ্যে, মিগ-২১, জাগুয়ার এবং মিরাজের মতো পুরানো-জেনারেশনের এয়ারক্রাফ্টগুলি নিয়েই বেশিরভাগ ইউনিট গঠিত। এই মুহূর্তে এই বিমানগুলিকে অবসর দিলে তা বিমানবাহিনীতে বিমানের তীব্র ঘাটতি তৈরি করবে। বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনের ওয়েস্টার্ন কমান্ডের কাছে ২০০টি ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের কাছে প্রায় ৩৫০টি ফাইটার জেট রয়েছে। হুমকি মোকাবেলায়, ন্যূনতম সংখ্যক স্কোয়াড্রন সক্রিয় থাকা অপরিহার্য, এবং শুধুমাত্র MiG-21-এ সাতটি সক্রিয় স্কোয়াড্রন রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাতিল করা হবে।


পুরনো বিমান নয়


প্রযুক্তিগতভাবে বলতে গেলে, MiG-21-এর বর্তমান ভার্সনের নাম MiG-21 Bison যা আসলে ১৯৬৩ সালে কেনা বিমানের একটি উন্নত সংস্করণ। এটি একটি আপগ্রেড সংস্করণ এবং আগের তুলনায় বেশি নিরাপদ। এই বিমানে সর্বশেষ এভিওনিক্স এবং অস্ত্র বহন ক্ষমতা রয়েছে। এতগুলি মিগ-২১ ভেঙে পরার প্রাথমিক কারণ পুরনো বিমান নয় বরং এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক কারণ হল মিগ-২১-এর করা সর্টির সংখ্যা।


রিপোর্ট অনুযায়ী, IAF মিগ -২১-এ সর্বাধিক সংখ্যক সর্টি করে। এই বিমান নতুন IAF পাইলটদের জন্য প্রশিক্ষক বিমান হিসাবেও কাজ করে। এর ফলে অন্য যেকোনও বিমানের তুলনায় বেশি ক্র্যাশ করে মিগ-২১। IAF-এর জন্য প্রশিক্ষণ অনুশীলনের জন্য MiG-21 মোতায়েন করার কারণ হল MiG-21-এর ব্যবহারের শেষ কয়েকটি বছর বাকি রয়েছে এবং অন্যান্য বিমানগুলি প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা খুব কঠিন কারণ সেগুলির দাম অনেক বেশি।


ধীর গতিতে তেজস ডেলিভারি


পুরানো MiG-21 বদল করার জন্য এবং ভারতে তৈরি প্রতিরক্ষা সরঞ্জামগুলিতে মনোযোগ দেওয়ার জন্য, সরকার ১৯৮০ এর দশকের প্রথম দিকে, তেজস এলসিএ (হালকা যুদ্ধ বিমান) প্রোগ্রাম শুরু করে। সরকার ADA প্রতিষ্ঠা করে, যেটি HAL কে চুক্তি দেয় এবং ৯০ এর দশক জুড়ে, তৈরি করা হয়েছিল। ২০০১ সালে তার প্রথমবার ওড়ে তেজস এলসিএ।


আরও পড়ুন: Earthquake Strikes Ladakh: কেঁপে উঠল লাদাখ, দুলে উঠল কার্গিল! বার বার কম্পন সন্নিহিত অঞ্চলে


যদিও, তেজস এলসিএ এমকে১-এর সঙ্গে প্রথম স্কোয়াড্রনটি ২০১৬ সালে সক্রিয় করা হয়েছিল। সেই সময় আইএএফ এই সক্রিয় করার আইওসি দেয়। এরপর থেকে, আইএএফ ১২৩টি বিমানের অর্ডার থেকে প্রায় ৩০টি বিমান অন্তর্ভুক্ত করেছে। এটি মূলত মাত্র দুটি স্কোয়াড্রন গঠন করে। IAF এখনও ৯০টি বিমানের জন্য অপেক্ষা করছে। এই বিলম্বিত ডেলিভারির ফলে MiG-21, IAF এর সঙ্গে পরিষেবার এক্সটেনশন পেয়েছে।


রাফালে স্কোয়াড্রন কমানো হয়েছে


Dassault-নির্মিত Rafale ফরাসি ফাইটার জেট হল ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে থাকা সবচেয়ে উন্নত বিমান এবং IAF-এর একমাত্র ৪.৫ জেন প্লেন। যদিও এটি MiG-21-এর বদলি নয়, কারণ এটি আরও ব্যয়বহুল এবং এর বিভিন্ন অপারেশনাল ক্ষমতা রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ১২৬ রাফালে অন্তর্ভুক্ত করা মিগ-২১ বিমানের সময়মতো অবসরে সাহায্য করতে পারে।


সরকার প্রাথমিকভাবে ১২৬টি এমএমআরসিএর অর্ডার দিয়েছিল, কিন্তু জরুরি আদেশের কারণে মাত্র ৩৬টি রাফালে বিমান কেনা হয়। যদিও এটি ভারতকে চিনের দুঃসাহসিক অভিযানগুলি প্রতিহত করতে সাহায্য করলেও স্কোয়াড্রনের সংখ্যা সাত থেকে দুইয়ে নেমে এসেছে। এর ফলে MiG-21-এর উপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)