সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

রাগ, রসুই অর পাগড়ি কভি কভি বন যায়ে! এ তো বাচ্চা ছেলেও জানে। বাংলার পুলিশ এটা জানে না, এ হতে পারে? তা হলে এ নিয়ে 'ফেক নিউজ' কেন!


তার ওপর পাগড়ি যখন শুধুই শোভাবর্ধনের বস্তু না হয়ে ধর্মীয় অনুষঙ্গ বহন করে, তখন যে তা নির্মল ও পবিত্র এবং যে কোনও ধরনের অশোভনতার অযুত ঊর্ধ্বে, স্বাভাবিক বোধসম্পন্ন প্রতিটি মানুষই যদি এটুকু জানেন, পুলিশের তা না-জানার দাবি আশ্চর্যের তো বটেই, পরিকল্পিতও কি নয়! তা হলে এ নিয়ে 'ফেক নিউজ' কী ভাবে!


বেশ, তবে নিউজটি কী?


বারাকপুরের বিজেপি নেতা প্রিয়াংশু পাণ্ডে বৃহস্পতিবারে বিজেপির 'নবান্ন চলো' অভিযানে অংশ নেন। তিনি হাওড়ার দিক থেকে আসা মিছিলে ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী বলবিন্দর সিং । বলবিন্দরের কাছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র মেলে। তার বৈধতা নিয়ে পুলিসের সঙ্গে তাঁর বচসা বাধে। অভিযোগ, বলবিন্দরকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়, খসে পড়ে তাঁর পাগড়ি। অভিযোগ, পুলিস তাঁর চুল ধরে টানে। ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। সৌজন্য এক সর্বভারতীয় মিডিয়া হাউস। দেশ জুড়ে নিন্দার মুখে পড়ে বাংলা পুলিস। অকালি দলের তরফে নিন্দা করা হয়। ক্রিকেটার হরভজন সিং ক্ষুব্ধ হন। যদিও পুলিস জানায়, তারা বলবিন্দরের ধর্মীয় আবেগে আঘাত করেনি।


'ফেক' কী ঘটল এখানে? 


সত্যকে বিকৃত করা, 'ডিসটর্ট' করা, 'ফেব্রিকেট' করা-- ঠিক যা ঘটেনি সেটাকেই 'ঘটেছে'র তকমা দিয়ে এক শ্রেণির নিভৃত আবেগকে বিপথে পরিচালিত করা। পাগড়ি-কাণ্ডকে জড়িয়ে অভিসন্ধিমূলক এক টুইটের সূচ ক্রমে যে ভাবে ফাল হয়ে বেরোতে থাকল, তাতে আগুনে ঘি পড়ারই অবস্থা! কেননা ওই টুইটটি-ই 'রি-টুইটেড' হতে হতে সাত হাত ঘুরে সাত ঘাটের জল খেয়ে শেষ পর্যন্ত যে নীড়ে এসে ঢুকে পড়ছিল সেখানে সাক্ষাৎ যম, সেখানে অন্ধ মৃত্যু।


চরমতম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। কেননা, ঘোলা জলে মাছ ধরতে গিয়ে সাধারণ বোধটুকু খুইয়ে বসা হলৎ এ খবর এ ভাবে ছড়ালে দেশ জুড়ে দাঙ্গা লাগতে পারে, আগুন জ্বলতে পারে, বইতে পারে রক্তস্রোত! তার দায় ও দায়িত্ব তখন কার?



পুলিশ জোর করে এক শিখের পাগড়ি খুলে নিচ্ছে-- ঘটনা এমন হলে, তা অন্যায়, তা অপরাধ, তা অসহিষ্ণুতা, তা অসভ্যতাও। কিন্তু ঘটনা কি সত্যিই তাই? বাংলা পুলিসের দাবি, বলবিন্দরের কাছে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তাই পুলিস তাঁকে গ্রেফতার করতে চায়। বলবিন্দর বাধা দেন। ফলত ধস্তাধস্তি। বলবিন্দরের পাগড়ি খুলে পড়ে। বাংলা পুলিসকে বিবৃতি দিতেই হয়েছে! যে বিবৃতিতে তারা জানায়, ঘটনায় জড়িত তাদের পুলিসকর্মী মোটেই ওই আগ্নেয়াস্ত্র বহনকারী শিখব্যক্তির পাগড়ি ধরে টানাটানি করেননি। তবে ধাক্কাধাক্কিতে তা পড়ে গিয়ে থাকবে, এর পিছনে ওই পুলিসকর্মীর ইচ্ছাকৃত অভিসন্ধি কাজ করেনি! কোনও সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আবেগকেই আঘাত করার কোনও সংকল্পই তাদের ছিল না। পর পর করা কতগুলি টুইটে পুলিসের তরফে জানানো হয়েছে, বাংলা পুলিস সমস্ত ধর্মকে সম্মান করে। সংশ্লিষ্ট পুলিস অফিসার ধৃতকে অনুরোধ করেছিলেন গ্রেফতারের আগে পাগড়িটা খুলে ফেলতে!



ফেকের আসলে অনেক রকম'ফেক' (র) আছে। অনেক রকম ভাবে এই নিত্য নিয়ত ঘটে-চলা ঘটনার নির্মাণ-বিনির্মাণ চলে। তাতে রাজনৈতিক দলগুলি, ওরফে, তাদের নিষ্পাপ সমর্থকেরাও ধোয়া তুলসীপাতা নয় বলেই জানা যায়। বাম ও তৃণমূল সমর্থকেরাও বিষয়টি নিয়ে যারপরনাই খিল্লি করেছে। ওই বলবিন্দরকেই অনেক তৃণমূল সমর্থক 'হনুমান' অভিধায় ভূষিত করেছেন, এবং মাটিতে গড়িয়ে পড়া  বলবিন্দরের পবিত্র পাগড়িকে হনুমানের লেজের সঙ্গে তুলনা করেছেন। চরম অসংবেদনশীলতার পরিচয়! বাংলার সহিষ্ণু ভাবমূর্তির সঙ্গে যা যায় না। এবং যে মন্তব্য একই ভাবে ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে আশপাশ, জ্বালাতে পারে আগুন, বহাতে পারে রক্ত।



অতএব হে ভারতীয় রাজনীতি, হে ভারতীয় মিডিয়া, ফেক বানানোর মনোভাবনা থেকে শতহস্ত দূরে থেকে দেশকে নিরাপদ রাখুন! খবরকে খবরের মতো থাকতে দিন।