জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ভোটমুখী গুজরাটের জন্য বড় ঘোষণা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। মোদী-রাজ্যের মেহসেনা ও আনন্দ জেলায় যেসব অমুসলিম শরনার্থীরা বসবাস করছেন তারা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। এর জন্য তাঁদের পাঁচ বছর ভারতে থাকার শংসাপত্র দেখাতে হবে না। এ ব্যাপারে ওই দুই জেলা প্রশাসনকে এনিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের হিন্দু, জৈন, পার্সি, শিখ, খ্রিষ্টানরা ওই সুযোগ পাবেন। সিএএ আইন সংসদে পাস হয়ে গিয়েছে। এনিয়ে এখনও রুল তৈরি করতে পারেনি কেন্দ্র। তাই তা এখনও দেশজুড়ে লাগু করতে পারেনি সরকার। কিন্তু ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী ভোটের আগে গুজরাটের জন্য ওই ঘোষণা করল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এনিয়ে শুরু হল চাপানউতোর। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হল বিরোধীরা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন-"যারা দুর্নীতিতে ডুবে আছেন তাঁরা সেতু ইস্যুর নিচে আশ্রয় নিতে চাইছেন", কটাক্ষ দিলীপের


এদিকে, কেন্দ্রের এই ঘোষণায় সুর চড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, রাজনীতি ও ভোট বড় বালাই। দেশের মানুষ দেখছে রাজনীতি করতে গিয়ে আর কত নাটক করবে বিজেপি। হিমাচল প্রদেশের সঙ্গে গুজরাটেও নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করার কথা ছিল। তা হয়নি। গত এক সপ্তাহে ৭০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প পেল গুজরাট। গুজরাটের জন্য আরও ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার উপহার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মোরবিতে ব্রিজ ভেঙে শাখানেক মানুষের মৃত্যু হল। সেসব চাপা দেওয়ার জন্য ও ধর্মের নামে মানুষকে বিভাজন করতে গিয়ে এই ঘোষণা করা হল। এভাবেই এক শ্রেণির মানুষকে অন্য এক শ্রেণির বিরুদ্ধে উত্সাহ দেওয়া হল।


তিন দেশের অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণা নিয়ে সরব হয়েছেন অধীর চৌধুরী। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, মোরবি ব্রিজ দুর্ঘটনার পর গুজরাটের মানুষ প্রতিবাদে নিন্দায় গুজরাট সরকারকে ভরিয়ে দিচ্ছেন। তখন সেই একই কায়দা। ভোটে সব বিষয় ভুলিয়ে দাও। সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে সামনে নিয়ে এস। ২০২১ সালে বাংলায় এ জিনিসই হয়েছিল। মোদী, দিদি লাভবান হয়ে গেল। এখন সিএএ, এনআরসি ঘুমাচ্ছে। এর পরের নির্বাচনে তা ফের উঠবে। গুজরাটে ভোট হচ্ছে বলেই সিএএ জেগেছে। সিএএ আইন তৈরি হয়ে গিয়েছে। এখনও তা কার্যকর হয়নি। পাকিস্তানে মানুষ এদেশে এসেও নাগরিকত্ব না পেয়ে ফিরে গিয়েছে। 


কেন্দ্রের ওই ঘোষণাকে নতুন কিছু নয় বলে বিরোধীদের নিশানা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এক যাত্রায় পৃথক ফল হবে কেন? এটা তো সিএএ-র পার্ট। পশ্চিমবঙ্গেও এজিনিস হবে। সিএএ আইন তো পাস করাই রয়েছে। একই আইনে মতুয়ারাও নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। সিএএ তো চালু হয়ে গেল।


এনিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, শুভেন্দু অধিকারী কবে থেকে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন জানি না। সিএএ নিয়ে সরকারের কোনও নেটিফিকেশন নেই। রুল এখনও ফ্রেম হয়নি। ওরা ভোটের সময় এক কথা বলে। ভোট ফুরোলে অন্য কথা। অসমে বিজেপির একরকম মত। অন্যরাজ্যের বিজেপির অন্যরকম মত। সিএএ নিয়ে নানাবিধ সমস্যার মধ্যে রয়েছে বিজেপি। অথচ বিভাজন করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। গুজরাটে চালু হয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গে চালু হবে? তাহলে নোটিফিকেশন কোথায়? এখান যারা রয়েছে, ভোট দেয় তারা নাগরিক। গুজরাটের জন্য এক আইন, বাংলার জন্য অন্য, হিন্দুদের জন্য এক আইন, মুসলিমদের জন্য অন্য আইন, এমন কিছু করার  অধিকার সংবিধান দেয়নি। এটা ভোটের জন্য করা হয়েছে। শুভেন্দু না বুঝে কথা বলছে।  


উল্লেখ্য, হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোট হবে গুজরাটেও। কিন্তু মোদী রাজ্যের কোনও নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হয়নি। এনিয়ে আগেই সরব হয়েছিল বিরোধীরা। তাদের দাবি ছিল কোনও ভোটমুখী ঘোষণার জন্যই নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হচ্ছে না। মঙ্গলবারের রাজ্যের ২ জেলায় নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণায় বিরোধীদের সেই আশঙ্কায় সিলমোহর পড়ল। তাদের আরও অভিযোগ মোরবি ব্রিজ ভাঙা থেকে মানুষের মন ঘোরাতে এই ঘোষণা করা হয়েছে। এনিয়ে আজ একটি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টিও আজ এনিয়ে তাদের বিবৃতি দেবে। এদিকে বিজেপির দাবি, কেন্দ্রের এই ঘোষণা নতুন কোনও বিষয় নয়। ২০১৮ ও ২০২০ সালে এরকম সিদ্ধান্ত একাধিক রাজ্যে নেওয়া হয়েছে। ওইসব রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, হরিয়ানা ও পঞ্জাব। এর আগে আহমেদাবাদে ৪০টি হিন্দু পরিবারকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। ২০১৬ থেকে এখনওপর্যন্ত ১০৩৭ জন হিন্দুকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে আহমেদাবাদে। গোটাটাই হয়েছে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুয়ায়ী।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)