গঙ্গা বাঁচাতে ১১২ দিন অনশনের পর মৃত্যু পরিবেশবিদের
প্রধানমন্ত্রী বারবার চিঠি লিখেও মেলেনি জবাব।
নিজস্ব প্রতিবেদন: গঙ্গা বাঁচাতে অনশনে বসেছিলেন। ১১২দিন অভুক্ত থাকার পর ধকল সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু হল পরিবেশবিদ জিডি আগরওয়াল।
নদীর প্রাণ ফেরাতে একাই আন্দোলনে নেমেছিলেন ৮৭ বছরের অধ্যাপক। বন্ধ করতে চেয়েছিলেন গঙ্গার জলবিদ্যুত্ প্রকল্পগুলি। তবে শেষরক্ষা হল না। ম্যারাথন অনশনে বৃহস্পতিবার মৃত্যু হল পরিবেশবিদ, অধ্যাপক জিডি আগরওয়ালের। সরকার তো দূর অস্ত, তাঁর প্রতিবাদ, আন্দোলনের কথা দেশের কটা মানুষই বা জানতে পেরেছেন? হরিদ্বারে বসে গঙ্গা বাঁচানোর দাবিতে টানা ১১১ দিন অনশন করেছেন। শেষপর্যন্ত একাই লড়ে গিয়েছেন। তবে লাগাতার ধকল শরীরে সহ্য হয়নি।
কে এই জেডি আগরওয়াল? পেশায় ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। আর নেশায়, পরিবেশবিদ। প্রাক্তন আইআইটি অধ্যাপক জি ডি আগরওয়ালের আর এক নাম স্বামী জ্ঞানস্বরূপ সানন্দ। তাঁর মূল দাবি ছিল, গঙ্গার জলকে বাধাহীন ভাবে বইতে দিতে হবে, কোনও জলবিদ্যুত্ প্রকল্পের জন্য সেই জল ব্যবহার করা যাবে না। জানা গিয়েছে, অনশনে থাকাকালীন 'স্বচ্ছ গঙ্গা' আন্দোলনকারী মধু দিয়ে জল খাচ্ছিলেন জেডি আগরওয়াল।
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে 'স্বচ্ছ গঙ্গা'র ধুয়ো তুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বারাণসীতে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে দাবি করেছিলেন, গঙ্গা মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে এসেছেন। ক্ষমতায় আসার পর আলাদা 'নমামি গঙ্গা' কর্মসূচি শুরু করেন মোদী। কিন্তু, তার লাভ মেলেনি। গঙ্গা দূষণের কোনও পরিবর্তন হয়নি। সুপ্রিম কোর্টও কেন্দ্র দুষে মত দিয়েছিল, এভাবে চলতে থাকলে কোনওদিনই গঙ্গা সাফ হবে না। 'গঙ্গাপ্রেমী' প্রধানমন্ত্রীকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছিলেন আগরওয়াল। কিন্তু তাঁর চিঠির কোনও জবাব আসেনি। প্রাক্তন আইআইটি পড়ুয়ার সঙ্গে কথা প্রয়োজনও বোধ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। তবে মৃত্যুর পর শোকবার্তা দিয়েছেন মোদী। তিনি লিখেছেন, ''জেডি আগরওয়ালের প্রয়াণে শোকাহত। শিক্ষা, পরিবেশ বিশেষ করে গঙ্গা সাফাই নিয়ে তাঁর উত্সাহ স্মরণে থেকে যাবে''।
মোদীকে খোঁচা দিয়ে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের মন্তব্য, গঙ্গা বাঁচাতে ১০৯ দিন ধরে অনশন চালাচ্ছেন জেডি আগরওয়াল। কিন্তু তাঁর কোনও আবেদনেই কর্ণপাত করেননি মোদী। আপনার মতো ভাল মানুষের জায়গা এটা নয়।
২০১০ সালে ন্যাশনাল রিভার গঙ্গা বেসিন অথরিটির সদস্য ছিলেন তিনি। ভাগীরথীর উপর নাগপাল-প্রকল্পের বিরোধিতা করে আগেও ৩৮ দিন অনশন করেন এই অধ্যাপক। বুধবার হরিদ্বারের মাতৃ সদন আশ্রম থেকে অসুস্থ অধ্যাপককে এইমসে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় তাঁর। যখন লড়াই করছিলেন, তখনও কেউ খোঁজ রাখেনি। ফিরে তাকায়নি সরকার। শেষটাও হলো সেই লোকচক্ষুর অন্তরালেই।