``প্রশাসন বলছে যা পাচ্ছ এখন নিয়ে নাও, বাথরুমেও যেতে দিচ্ছে না আমাদের``
সে এসে বলছে, ``আমিও দলিত। এখন যা হচ্ছে সব ঠিকঠাক হচ্ছে। যা পাচ্ছো চুপচাপ নিয়ে নাও। পরে আর কিছুই পাবে না। মিডিয়ার সামনে বলে দাও, সব ঠিকই চলছে। এখন সব ঠিক আছে। আর কোনও অসুবিধা নেই।``
নিজস্ব প্রতিবেদন- ''এখনও সময় আছে। ভেবে দেখুন। আপনার মেয়ে যদি করোনায় মারা যেত, তাহলে কি ক্ষতিপূরণ পেতেন! এই মুহূর্তে যা পাচ্ছেন নিয়ে নিন। এরপর হয়তো এটাও পাবেন না।'' স্বয়ং জেলাশাসক এসে বারবার এই কথাগুলোই বলে যাচ্ছেন হাথরসের নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনকে। কখনো প্রশাসনের তরফে পাঠানো হচ্ছে অন্য কাউকে। সে এসে বলছে, ''আমিও দলিত। এখন যা হচ্ছে সব ঠিকঠাক হচ্ছে। যা পাচ্ছো চুপচাপ নিয়ে নাও। পরে আর কিছুই পাবে না। মিডিয়ার সামনে বলে দাও, সব ঠিকই চলছে। এখন সব ঠিক আছে। আর কোনও অসুবিধা নেই।'' কিন্তু হাথরসের নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনের দাবি, ক্ষতিপূরণ চাই না। বাড়ির মেয়ের মৃত্যুর জন্য ন্যায় বিচার চাই। মেয়েকে যারা নৃশংসভাবে খুন করেছে তাদের শাস্তি চাই।
নির্যাতিতার ভাই দাবি করেছেন, পুলিস প্রশাসন তাঁদের ঘরবন্দি করে রেখেছে। এমনকী পরিবারের সদস্যদের বাথরুম যেতে হলেও পুলিসের অনুমতি নিতে হচ্ছে। ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলার কোনও প্রশ্নই নেই। সারাদিন নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে তাঁদের। প্রশ্ন উঠছে, উত্তরপ্রদেশের পুলিস প্রশাসন কি বড় কোনো তথ্য লুকানোর চেষ্টা করছে! ইতিমধ্যে হাথরাসের জেলাশাসকের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, জেলাশাসক নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনকে বয়ান বদলের জন্য চাপ দিচ্ছেন। যদিও ১৯ বছর বয়সী নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন কোনোভাবেই বয়ান বদল করতে রাজি নয়। তাঁরা এই ঘটনার শেষ দেখতে চান। তবে এভাবে পুলিস ও প্রশাসনিক কর্তাদের সাঁড়াশি চাপের মুখে কতক্ষণ তাঁরা রুখে দাঁড়াতে পারবেন, সেটাই এখন সবথেকে বড় কথা!
আরও পড়ুন- এনসিবি-র রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর দাবি, প্রতি ১৬ মিনিটে এদেশে অন্তত একজন মেয়ে ধর্ষিতা হয়!
নির্যাতিতার বৌদি বলেছেন, ''আমরা পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন আপনারা রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে আমাদের মেয়ের দেহ সৎকার করলেন! পুলিশ কোনো উত্তর দেয়নি। একই প্রশ্ন আমরা জেলাশাসককে করেছিলাম। তখন উনি বললেন, তোমরা ময়নাতদন্তের মানে জান? ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তোমরা হাতে নিয়ে কী করবে! তোমরা তো পড়াশোনা জানো না। আর ময়নাতদন্ত করার সময় হাতুড়ি দিয়ে মৃতদেহের মাথার খুলি ফাটানো হয়। বুক থেকে পেট পর্যন্ত কেটে দেওয়া হয়। তারপর চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তোমাদের মেয়ের মৃতদেহের অবস্থা ভাল ছিল না। সেটা দেখলে তোমরা আঁতকে উঠতে। পলিথিনে মুড়ে ওর দেহ আনা হয়েছিল। তাই আমরা আর তোমাদের দেখাযইনি।'' নির্যাতিতার পরিবার অবশ্য এমন ঠুনকো দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, জেলাশাসকের নিজের মেয়ের সঙ্গে যদি এমন হত তা হলেও তিনি এসব কথা বলতে পারতেন তো! তবে পুলিস প্রশাসনের আপাতত মন গলছে না। নির্যাতিতার গ্রাম ঘিরে রাখা হয়েছে। সেই গ্রাম থেকে কাউকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। আর সেই গ্রামে কারো প্রবেশও নিষেধ।