ওয়েব ডেস্ক: জুড়ি মেলা ভার জুড়ি গাড়ির। ভারতের রাষ্ট্রপতির ট্রেডমার্ক বাহন এই জুড়ি গাড়ি (পোশাকী নাম-বাগী) যেমন দর্শণে জুড়িহীন, তেমনই ঐতিহাসিক দিক থেকেও বেনজির। আজও দেখা গেল, বৃটিশ শাসনাধীন ভারতের ভাইসরয়ের এই চার চাকার উন্মুক্ত বাহনে চড়েই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে সংসদে এলেন প্রণব মুখোপাধ্যায় ও রামনাথ কোবিন্দ। সেসময় তখনও পর্যন্ত 'প্রেসিডেন্ট' প্রণব মুখোপাধ্যায় বসেছিলেন গাড়ির বাম দিকের আসনে এবং ডানদিকে 'প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট' রামনাথ কোবিন্দ। এরপর শপথ পাঠ করে 'পুরোদস্তুর রাষ্ট্রপতি' হয়ে যখন কোবিন্দ রাজাজি মার্গের বাড়িতে পৌঁছে দিতে গেলেন সদ্য প্রাক্তন প্রণববাবুকে তখন বদলে গেছে দু'জনের আসন। এই অবস্থায় 'বামাচারী' শ্রী কোবিন্দ এবং 'দক্ষিণপন্থী' অবস্থানে শ্রীমুখার্জ্জী। আসলে 'কলোনিয়াল প্রোটোকলে'র ঐতিহ্যের জুড়ি গাড়িতে এটাই রীতি। কিন্তু, দেশ যখন ভাগ হল তখন তো স্থাপত্য বাদ দিয়ে প্রায় সবই ভাগ হয়ে গিয়ে গিয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। তাহলে এই গাড়ি কেন রয়ে গেল ভারতেই? এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই রয়েছে আস্ত একটা ঐতিহাসিক অধ্যায়।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING


দেশ ভাগের সময় যখন ভাইসরয়ের একমাত্র জুড়ি গাড়ির মালিকানা নিয়ে বচসা বাধে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে, তখন তা সমাধানের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন ভারতের পক্ষ থেকে লেফটেন্যান্ট কলোনেল ঠাকুর গোবিন্দ সিং এবং পাক সেনা শাহাবজাদা ইয়াকুব খান। দায়িত্ব না হয় নিলেন এই দুই সেনা, কিন্তু কী করবেন তাঁরা? গাড়ি তো মাত্র একটাই। অবশেষে ঠিক হল, টস হবে দুই পক্ষের মধ্যে। যে পক্ষ জিতবে, গাড়ির মালিকানা সেদেশের। হল টস এবং বলার অপেক্ষা রাখে না যে তাতে জয় হল ভারতের। ফলে ভাইসরয়ের রাইসিনা হিলসেই রয়ে গেল তাঁর ঐতিহ্যের জুড়ি।



তবে ১৯৮৪ সালের পর থেকে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো হয়ে যাওয়ার পর থেকে জুরি গাড়ির ব্যবহার প্রায় থেমেই যায়। কেবল মাত্র নির্দিষ্ট দু'একটি আনুষ্ঠানিক কাজে ব্যবহার হতো এই জুড়ি গাড়ি। কিন্তু ২০১২ সালে দেশের ত্রয়োদশ তথা প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাইসিনার বাসিন্দা হওয়ার পর তাঁর ইচ্ছায় শাপমুক্তি ঘটে জুড়ি গাড়ির। শ্রীমুখোপাধ্যায় ব্যবহারের জন্য প্রাধান্য দিতে থাকেন জুড়ি গাড়িকেই এবং ধীরে ধীরে প্রণববাবুর রাষ্ট্রপতিত্বের সময়কালে রাষ্ট্রপতির মোট ৩২০ একর 'প্রেসিডেন্সিয়াল স্পেস' জুড়ে নিয়মিত চলতে থাকে ঐতিহাসিক জুড়ি গাড়ি। (আরও পড়ুন- ঔপনিবেশিক রেওয়াজে রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ)