৩৫ হাজার মানুষের এক বছরের খাবার নিমেষে খেয়ে ফেলতে পারে পঙ্গপাল! সতর্কবার্তা রাষ্ট্রসঙ্ঘের
এই মুহূর্তে কার্যত ঘরবন্দি জনজীবন। তার উপর পঙ্গপালের হানা! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার থেকেও নাকি ভয়ঙ্কর পঙ্গপাল হানা! দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পারে পঙ্গপাল।
নিজস্ব প্রতিবেদন: ক্ষিতিবাবুর ক্ষেতে একটি ঘাস নেই। অক্ষয়বাবুর বাগানে কপির পাতাগুলো খেয়ে সাঙ্গ করে দিয়েছে। পঙ্গপাল না তাড়াতে পারলে এবার কাজে ভঙ্গ দিতে হবে.... লাইনগুলো চেনা লাগছে নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, পঙ্গপালের হানার অভিজ্ঞতা বাংলার আছে। তবে আজ থেকে ২৬ বছর আগে পর্যন্ত। ক্ষেতের পর ক্ষেত এভাবেই উজার করে দিত পঙ্গপাল। এখন আফ্রিকা, ইরান, পাকিস্তান হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে ঘাস ফড়িংয়ের দল। সম্প্রতি ভারতের বুক দিয়ে বয়ে গিয়েছে আমফান। তছনছ করে দিয়েছে বাংলা-ওড়িশার উপকূল। প্রতিদিন করোনার থাবা অব্যাহত। আক্রান্ত লক্ষাধিক মানুষ। এই মুহূর্তে কার্যত ঘরবন্দি জনজীবন। তার উপর পঙ্গপালের হানা! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার থেকেও নাকি ভয়ঙ্কর পঙ্গপাল হানা! দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পারে পঙ্গপাল।
কী এই পঙ্গপাল?
পঙ্গপাল কোনও বিশেষ কীট নয়। বিভিন্ন পতঙ্গ বা ঘাস ফড়িংয়ের ঝাঁক। জোটবদ্ধ হয়ে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে হানা দেয়। এই ধরনের আক্রমণকে ‘গ্রেগারিয়াস’ বলা হয়। ইতিহাস বলছে, পঙ্গপালের আক্রমণের পরই দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ।
ঘাস ফড়িংরা সাধারণত লাজুক প্রকৃতির। ইংরেজিতে লোকাস্ট বলা হয়। দৈর্ঘ ইঞ্চি খানেক হলেও একদিনে ২ গ্রাম খাবার সাবাড় করতে পারে একটি পতঙ্গ। একটা ঝাঁকে কয়েক লক্ষ পতঙ্গ থাকতে পারে। কখনও ৪ কোটি থেকে ৮ কোটি পতঙ্গও থাকে।
বাতাসের উষ্ণতার গতি অনুযায়ী ধাবিত হয় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। এক জায়গার খাবার ফুরলেই অন্য জায়গায় হানা দেয়। সম্পূর্ণ খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনত্র তারা যায় না। দিনে ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে তাদের গতিবিধি থাকে।
পঙ্গপালের যাত্রা:
সুদূর পূর্ব আফ্রিকা থেকে যাত্রা পথ শুরু হয় তাদের। ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, কেনিয়া-সহ আফ্রিকার বেশি কিছু দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। তারপর সৌদি আরব হয়ে পাকিস্তান। ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয় পাকিস্তানে। বাধ্য হয়ে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয় ইমরান খানকে।
ভারতে হানা:
বলা হচ্ছে, ভারতে যে ব্যাপকতা নিয়ে পঙ্গপাল হানা দিয়েছে, গত ২৬ বছরে এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ বিপর্যস্ত পঙ্গপালের হানায়। ড্রোন ও বিমানে রাসায়নিক প্রয়োগ করে পঙ্গপাল মারার পরিকল্পনা করছে রাজস্থান সরকার। রাজস্থানের ১৮টি এবং মধ্য প্রদেশের ১২ জেলার জমি কার্যত মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রেও তাণ্ডব চালাচ্ছে পঙ্গপাল। সতর্ক করা হয়েছে গুজরাট এবং পঞ্জাবের চাষিদের।
করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর পঙ্গপাল?
একটি পূর্ণ বয়স্ক পতঙ্গ নিজের ওজনের খাবার খেতে পারে। অর্থাত্ দিনে প্রায় ২ গ্রাম শস্য খেতে পারে। এক বর্গ কিলোমিটারে ৪ কোটি থেকে ৮কোটি পতঙ্গ থাকে। যদি দিনে ১৩০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার জুড়ে তাণ্ডব চালায় তাহলে ৩৫ হাজার মানুষের এক বছরের খাবার কেড়ে নিতে পারে বলে জানাচ্ছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন।
জলবায়ুর উপর নির্ভর করে একটি মরু পতঙ্গ বাঁচে ৩ থেকে ৪ মাস। ১২০ মাইল পর্যন্ত জমির ফসল খেতে পারে। একই সঙ্গে করে প্রজননও। রাষ্ট্রসঙ্ঘ এক নির্দেশিকায় ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ বলে উল্লেখ করে অর্থাত্ বেশি বৃষ্টিপাত হলে পঙ্গপালের বংশবিস্তার ব্যাপক পরিমাণে হয়। ভারতেও বর্ষা সন্নিকটে। তাই আফ্রিকার পরিস্থিতি ভারতে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন- জুলাই থেকে স্কুল খোলার প্রস্তাব কেন্দ্রের, তবে শুধুই নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য
ভারত কতটা ক্ষতি হতে পারে?
করোনার পরিস্থিতি আসার আগেই ঝিমোচ্ছিল ভারতের অর্থনীতি। নানা দাওয়াই দেওয়া সত্ত্বেও অসুখ সারাতে পারছিল না মোদী সরকার। এরপর করোনা বিপর্যয়। টানা দু’মাস লকডাউনে জেরে স্তব্ধ দেশের উত্পাদন। রুটিরুজি নেই মানুষের। এমতাবস্থায় কৃষিপ্রধান ভারতে পঙ্গপালের হানা বিপর্যয় ঘনিয়ে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ জানাচ্ছে, ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পশ্চিম আফ্রিকায় পঙ্গপালের হানায় ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার ফসল ক্ষতি হয়েছে। ভারতের কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হলে অর্থনীতি ভেঙে পড়বে বলে সতর্ক করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ।