নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে বিজেপি-বিজেডি সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত মিলেছিল। কিন্তু, তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পের 'সৌজন্যে' সেই সম্পর্ক আবারও খাদের কিনারে। ওড়িশায় ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি)-এর ৯,৭৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে এই মূহূর্তে চরমে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

চলতি বছরের ১১-১৫ নভেম্বর নবীন পট্টনায়কের রাজ্যে সরকারি আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে 'মেক ইন ওড়িশা' নামের শিল্প সম্মেলন। এই সম্মেলনে দেশের তাবড় শিল্পপতিদের আমন্ত্রণ জানাতে দিল্লি ও মুম্বইয়ে 'রোড শো'র কর্মসূচি নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজু জনতা দলের (বিজেডি) প্রধান নবীন পট্টনায়ক। ৮ অগস্ট মুম্বইয়ের রোড শো হয়ে গিয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুকেশ আম্বানি, আনন্দ মাহিন্দ্রা এবং আদি গোদরেজের মতো দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরা। আর আজ অর্থাত্ বুধবার দিল্লির রোড শো-র সূচি নির্ধারিত রয়েছে। আর ঠিক এই সময়েই এনটিপিসি-র ৯,৭৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ওড়িশা সরকারের 'গড়িমসি'র সমালোচনায় সরব হয়েছেন সে রাজ্যের বিজেপি বিধায়করা। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অনুমতির ব্যবস্থা করে তা দ্রুত রূপায়নের জন্য সরাসরি চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ককে। এই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে লেখা চিঠিতে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী লিখেছেন, "১৫ মাস ধরে এমন বৃহত্ প্রকল্প অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছে! এর ফলে শিল্প ও বিনিয়োগকারী মহলে রাজ্য সম্পর্কে ভুল বার্তা যেতে পারে...এই প্রকল্পের দ্রুত রূপায়নের জন্য (আপনার) হস্তক্ষেপই কেবল মাত্র ওড়িশা সম্পর্কে সঠিক বার্তা দিতে পারবে"। আর সরকারি এবং রাজনৈতিক স্তরে বিজেপি-র এমন আচরণেই তুমুল ক্ষুব্ধ নবীনের দল। আরও পড়ুন- সব সীমা ছাড়িয়েছে মোদী সরকার, তোপ মনমোহনের


নবীন পট্টনায়ক যে দিন (গতকাল, মঙ্গলবার) দিল্লির সফরের জন্য রাজ্য ছেড়েছেন, সে দিনই এনটিপিসি-র প্রকল্প নিয়ে বিধানসভায় রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করেছেন ওড়িশার বিজেপি বিধায়করা। এ দিন সভার প্রশ্নোত্তর পর্বে এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিজেপি বিধায়করা। তবে শুধু প্রশ্ন করেই ক্ষান্ত হননি তাঁরা, রীতিমতো স্লোগান দিতেও দেখা যায় ক্ষুব্ধ বিধায়কদের। এর ফলে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে ওড়িশা বিধানসভার অধ্যক্ষ প্রদীপ আমাত সভা মুলতুবি করে দিতে বাধ্য হন। এরপর সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে ফের সভা শুরু হলে এনটিপিসি-র প্রকল্পে সরকার অনুমতি না দেওয়ায় বিজেপি-র পরিষদীয় দলনেতা কেভি সিং দেও তীব্র আক্রমণ হানেন। তিনি বলেন, এই মনোভাবের জন্যই 'ইস অফ ডুয়িং বিজনেস' তালিকায় দেশের মধ্যে ওড়িশার পতন হয়েছে (২০১৬ সালে ১১তম স্থান থেকে ২০১৭-তে ১৪তম স্থানে)।


ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী যখন বিনিয়োগ আনতে জাতীয় স্তরে এমনভাবে সচেষ্ট হয়েছেন ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এমন চিঠিই বরং ভুল বার্তা ছড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রেরিত বলে মনে করছে বিজেডি। দলের মুখপাত্র সস্মিত পাত্র বলেন, "যেদিন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসাবে তুলে ধরতে দিল্লি যাচ্ছেন, ঠিক সেদিনই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও তাঁর দলীয় সতীর্থদের এমন প্রয়াস আসলে রাজ্যকে সাফল্যের রাস্তা থেকে দূরে সরানোর উদ্দেশ্য নিয়ে পরিকল্পিত। রাজ্য সরকার সবরকম বিনিয়োগ প্রস্তাবই সঠিক নিয়ম মেনে খতিয়ে দেখছে। কিন্তু, এ কী ধরনের নেতিবাচক রাজনীতি"! আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রীর দফতরে হাই-প্রোফাইল জালিয়াতির তালিকা পাঠিয়েছিলাম, রাজনের মন্তব্যে বিপাকে বিজেপি-কংগ্রেস


প্রসঙ্গত, ওড়িশার সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে রীতিমতো ভাল ফল করেছিল বিজেপি। সে রাজ্যে বিজেপি-র এতটাই উত্থান হয়েছে যে, এই মুহূর্তে তারাই প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতির দাবিদার। এমন আবহে মোদী সরকারের সঙ্গে বেশ দূরত্বই বজায় রাখছিল নবীন পট্টনায়কের দল। কিন্তু, সম্প্রতি রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচনে মোদীর অনুরোধে এনডিএ প্রার্থী হরিবংশ নারায়ন সিং-এর সমর্থনেই ভোট দেয় বিজেডি। ফলে মনে করা হয়েছিল, বিজেপি-বিজেডি দূরত্ব বোধ হয় এবার ঘুচতে চলেছে। এই জল্পনায় হাওয়া জুগিয়েছিল অ-বিজেপি জোটের বিষয়ে নবীন পট্টনায়কের মৌনতা। কিন্তু, এনটিপিসি-র প্রকল্প নিয়ে এই মুহূর্তে এই দুই দলের যা অবস্থান, তাতে সম্পর্কের বরফ আবারও জমতে শুরু করেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কিন্তু, শুধুই কি 'শিল্পের স্বার্থে' এমন অবস্থান গ্রহণ করল বিজেপি? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, ২০১৯ সালের ভোটে আর সেভাবে মোদী হাওয়ার আশায় বসে থাকা যাবে না বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছেন খোদ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তিনি বরং সংগঠনে জোর দিতে বলেছেন। পাশাপাশি, যেসব রাজ্যে বিজেপি এই মুহূর্তে ক্ষমতায়, সেখানেও প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে এছাড়া গো-বলয়ের রাজ্যগুলিতে (বিশেষত উত্তরপ্রদেশে) ২০১৪ সালে প্রচুর আসন জেতায়, এখন সেখানেও প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া আর তার উপরে যদি সপা-বসপা-কংগ্রেস এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোট হয় তাহলে রীতিমতো সমস্যার মুখে পড়তে হবে বিজেপি-কে। তাই পূর্ব ভারতের যেসব রাজ্যে বিজেপি এখনও তেমনভাবে জয় পায়নি, এবার সেগুলিকেই পাখির চোখ করতে চাইছে মোদী-শাহ জুটি। আর সম্ভবত সে জন্যই ডেপুটি চেয়ারম্যান ভোটে বিজেডির থেকে পাওয়া সাহায্যের কথা 'ভুলে গিয়ে', বিনা যুদ্ধে ময়দান না ছাড়ার পণ করেছে গেরুয়া শিবির।