নিজস্ব প্রতিবেদন: প্রাইভেট ইক্যুইটি সংস্থা ও ব্যাঙ্কের দেনা। সঙ্গে আয়কর দফতরের প্রাক্তন ডিজি-এর ক্রমাগত চাপ। প্রচণ্ড মানসিক অশান্তির আর সহ্য করতে পারেননি সিসিডি কর্ণধার। সে কারণেই নিলেন চরম সিদ্ধান্ত। নেত্রাবতী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার আগে চিঠিতে এমনই অভিযোগের কথা বলেছেন ক্যাফে কফি ডে-এর প্রতিষ্ঠাতা ভিজি সিদ্ধার্থ। এবার তাঁর উপর ক্রমাগত চাপ দেওয়ার জন্য উঠে এল প্রাইভেট ইক্যুইটি সংস্থা 'কেকেআর'-এর নাম। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ঘটনার পরেই সেবি-র আতসকাঁচের তলায় এসেছে একাধিক প্রাইভেট ইক্যুইটি সংস্থা। কফি ডে এন্টারপ্রাইজের যে পরিচালকরা নমিনির পদে আছেন, তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছেন সেবি কর্তারা। নিখোঁজ হওয়ার কয়েক দিন আগে ২৭ জুলাই নিজের সংস্থার বোর্ডের সদস্য ও কর্মীদের একটি চিঠি দিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। সেখানেই তাঁর উপর ক্রমবর্ধমান চাপের কথা জানান। ওই চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, এক প্রাইভেট ইকুইটি পার্টনার (অংশীদার) তাঁকে শেয়ার ‘বাই ব্যাক’-এর জন্য চাপ দিচ্ছেন। প্রাইভেট ইকুইটি পার্টনারটি কেকেআর বলে মনে করা হচ্ছে। 



পাওনাদারদের চাপের সামনেই কি হার মানলেন সিসিডি-র প্রতিষ্ঠাতা? এর জবাবও রয়েছে সেদিনের চিঠিতে। সংস্থার বোর্ডের সদস্য ও কর্মীদের দেওয়া চিঠিতেই সিদ্ধার্থ লিখেছেন, "শেয়ার বাই ব্যাক করার চাপের সামনে হাল ছেড়ে দিয়েছি। অনেক লড়াই করেছি, কিন্তু আজ হাল ছেড়ে দিলাম।" ওই চিঠিতে সিদ্ধার্থ জানান, ৬ মাস আগে একটি বন্ধুর থেকে বেশ বড় অঙ্কের টাকা ধার নিয়ে বেশ কিছু পাওনাদারের শেয়ার বাই ব্যাক করেন তিনি। কিন্তু, এর পরেও অন্যান্য পাওনাদাররা ক্রমাগত ভীষণ চাপ সৃষ্টি করায় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন। লিখেছিলেন সিদ্ধার্থ। 


এনিয়ে জি মিডিয়ার কাছে মুখ খুললেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিসিডি কর্তা। তিনি বলেন, 'প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম ও পাওনাদারদের গ্রেফতার করা উচিত'। কেকেআর নামের এক প্রাইভেট ইক্যুইটি সংস্থার বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। জানান, অত্যাধিক সুদসহ ধার শোধ করতে সিদ্ধার্থকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিল কেকেআর। তাঁর দাবি,'ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের থেকে ৮% হারে ধার নিয়েছে কেকেআর। অথচ সিদ্ধার্থকে ২৫% হারে সুদ চেয়ে চাপ দিত কারা। চাপের মুখেই জীবন শেষ করে দিলেন সিদ্ধার্থ।' তাঁর স্বগতোক্তি, 'কেকেআর না সেবি- সিদ্ধার্থর অকালমৃত্যুর জন্য কে দায়ী?' 


তবে, সিদ্ধার্থের চিঠিতে উল্লিখিত চাপ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে সিসিডি-এর পরিচালক পর্ষদ। জানিয়েছে, ব্যবসায় যাতে কোনও রকম বাধা না আসে সে বিষয়ে খেয়াল রাখবে তারা।


৪টি বিদেশি কর্পোরেট সংস্থার প্রায় ২২.৩৫% শেয়ার আছে সিসিডি-তে। এনএলএস মরিসাস-এর শেয়ারের পরিমাণ ১০.৬১%। অন্যদিকে কেকেআর মরিসাস প্রাইভেট ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্টস টু লিমিটেড নামের একটি সংস্থার শেয়ারের পরিমাণ ৬.০৭%। 


বাজার সূত্রে খবর, বিদেশি নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থাগুলির মূল কারবার সুদে টাকা খাটানো। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির থেকে কম সুদে ধার নিয়ে সেই টাকাই ভারতেরই বিভিন্ন সংস্থাকে ২২-২৫% হারে ধার দিয়ে থাকে ওই সংস্থাগুলি। চটজলদি বিনিয়োগের জন্য ওই সংস্থাগুলির থেকে ধার নিয়ে থাকে বিভিন্ন ভারতীয় সংস্থা। কিন্তু, প্রচুর পরিমাণ সুদের বোঝা মেটাতে গিয়ে ল্যাজেগোবরে অবস্থা হয়।


এক শিল্পপতির মতে, 'ব্যবসা করার উপযুক্ত পরিবেশের অভাব ও চড়া সুদের হারই অনেক ভারতীয় সংস্থার কফিনে শেষ পেরেক গেঁথে দেয়।' সেই সুরে এক বিনিয়োগকারী জানান, ভারতের বাজারে অবাধে ব্যবসা করে এই বিদেশি প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্মগুলি। এদের সুদের চাপেই শেষ হয়ে যাচ্ছেন শিল্পপতিরা। এর ফলে ভারতীয় সংস্থাগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বাজার দখল নিচ্ছে বিদেশি সংস্থাগুলি।


আরও পড়ুন- ভারতে কামড়ে মশা ওপার বাংলায় চলে গেল, ওপারে কামড়ে এপারে এল, ডেঙ্গি নিয়ে মমতা