জাতীয় খাবার নয়, `ব্র্যান্ড ইন্ডিয়া ফুড` হচ্ছে খিচুড়ি
নিজস্ব প্রতিবেদন : খিচুড়িকে জাতীয় খাবারের তকমা দেওয়ার খবরটি জনশ্রুতি বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী হরসিমরত কউর বাদল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, চাল-ডাল ও বিভিন্ন সবজি সহযোগে তৈরি খিচুড়ি আসলে 'ব্র্যান্ড ইন্ডিয়া ফুড' হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সিআইআই ও খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রক যৌথভাবে দিল্লিতে ৩ নভেম্বর থেকে তিনদিন ব্যাপী 'ওয়ার্ল্ড ফুড ইন্ডিয়া' নামে একটি ইভেন্টের আয়োজন করেছে। সেই খাদ্য মেলায় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বিখ্যাত শেফ সঞ্জীব কাপুর। ৪ নভেম্বর সেই খাদ্য মেলাতেই ৮০০ কিলোগ্রাম খিচুড়ি বানাবেন সঞ্জীব কাপুর। ৭ ফিট ব্যাসের এক বিশাল কড়াইতে তৈরি হবে সেই খিচুড়ি। জানা গেছে, বিশ্বে খিচুড়িকে 'ব্র্যান্ড ইন্ডিয়া ফুড' হিসেবে তুলে ধরার জন্যই এই রেকর্ড পরিমাণ খিচুড়ি রান্নার আয়োজন।
কিন্তু এই খবর সামনে আসতেই শুরু হয় বিভ্রান্তি। অনেকেই মনে করেন যে, খিচুড়িকে জাতীয় খাবারের তকমা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এমন ধারণা খারিজ করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী। মন্ত্রীর সাফ বক্তব্য, খিচুড়ি ভারতের মূলমন্ত্র 'বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য' চেতনার প্রতীক। দেশের ধনী-গরিব সকল মানুষের কাছেই সমান প্রিয় এই সাবেকি পদটি। তাই 'ব্র্যান্ড ইন্ডিয়া ফুড' হিসেবে খিচুড়িকে নির্বাচন করা হয়েছে।
৪ নভেম্বর সঞ্জীব কাপুরের রান্না করা সেই খিচুড়ি ৬০ হাজার অনাথ শিশু ও উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে। এমনকি অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিদেশি কূটনীতিকদেরও রেসিপি সহযোগে খিচুড়ি দেওয়া হবে। সরকারি তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সারা বিশ্বে খিচুড়ি যাতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ভারতের বাইরে বিদেশেও বিভিন্ন রেস্তরাঁয় মেনুতে খিচুড়ি ঠাঁই পায়, তাই এই উদ্যোগ।
উল্লেখ্য, নানা ভাষা, নানা পরিধানের দেশ ভারতে খিচুড়ির আদর সর্বত্রই। এক খিচুড়িই সমাদৃত হয় বহু নামে। পশ্চিমবঙ্গে যা খিচুড়ি, কর্নাটকে সেটাই বিসি বেলা ভাত। আবার তামিলনাড়ুতে একে বলা হয় ভেন পোঙ্গল। ঐতিহাসিকবিদরা খিচুড়িকে বলেছেন, "ভারতের প্রাচীনতম খাবার।" একটি সূত্র বলে, খিচুড়ি কথাটা এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'খিচকা' থেকে। এই 'খিচকা'র মানে হল ভাত ও ডাল দিয়ে তৈরি একটি পদ। আবার বৈদিক শাস্ত্রেও এই খিচুড়ি জাতীয় খাবারের উল্লেখ রয়েছে। বৈদিক সাহিত্যে 'ক্রুসারন্ন' নামে এক পদের হদিশ মেলে। বিভিন্নরকম সবজি, দুধ, দই, তিল সহযোগে ভাতকে রান্না করে তৈরি হত এই 'ক্রুসারন্ন' । ইতিহাসবিদদের গবেষণা বলছে, পরবর্তীকালে মুঘল আমলে রাজ মর্যাদা আদায় করে নেয় খিচুড়ি। রাজ পরিবারের মেনুতে জায়গা পায় খিচুড়ি। আকবর-বীরবলের গল্পে উল্লেখ রয়েছে সেই খিচুড়ির।
আরও পড়ুন, একলাফে ৯৩ টাকা দাম বাড়ছে ভর্তুকিবিহীন রান্নার গ্যাসের