নিজস্ব প্রতিবেদন: বছর তিরিশের শাবানা পারভিন গর্ভবতী। দিল্লির করওয়াল নগর ছেড়ে যাওয়ার উপায় নেই তাঁর। হিংসার আবহে, একের পর এক বাড়ি তালা পড়লেও, তিনি যেতে চাননি। কয়েক দিনের মধ্যেই হয়ত তাঁর সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে। তাই শ্বশুরবাড়িই থেকে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু কে জানত, সোমবারের রাত তাঁর কাছে বিভীষিকা হয়ে দাঁড়াবে!


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পারভিনের শাশুড়ি নাসিমা বলেন, “রাতে হঠাত্ দুষ্কৃতীরা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তখন আমরা ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। অতর্কিত হামলায় পালিয়ে যেতে পারিনি।“ নাসিমার কথায়, “পারভিনের ওই অবস্থায় কীভাবেই বা পালিয়ে যাই! দুষ্কৃতীরা ধর্ম তুলে গালিগালাজ করে।“ তাঁর ছেলেকে মারধর করে বলে অভিযোগ। তাঁকে পারভিন বাধা দিতে গেল, তাঁর উপরও হামলা চালানো হয়। অভিযোগ, পেটে লাথি মারে দুষ্কৃতীরা। এরপরই পারভিনের শুরু হয়ে যায় প্রসব যন্ত্রণা।


আরও পড়ুন- দুধ কিনে ফিরে দেখি মা জ্বলছে, ছেলেরা বলছে, “পাপা বাঁচাও আমাদের”


তখন উন্মত্ত জনতা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল রাজধানীর বুকে। দোকানের পর দোকান জ্বলছে। রাস্তায় ইট-পাটকেল, কাচের টুকরো, লোহার রড এদিক-ওদিক ছড়িয়ে। বাতাসে গুমোট আতঙ্ক। জাফরাবাদ, মৌজপুর-সহ উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকার ছবি কার্যত এক। ওই অবস্থায় প্রসব যন্ত্রণায় কাতর স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তাঁর স্বামী। প্রথমে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভর্তি নিতে অস্বীকার করে ওই হাসপাতাল। বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। হারিয়ে গেছে মাথা গোঁজার ঠিকানা। কোনওভাবে পারভিনকে হারাতে চান না তাঁর স্বামী। ছুটে যান অল-হিন্দ হাসপাতালে।


বুধবার পরভিন জন্ম দেন পুত্র সন্তানের। মা ও সন্তান দু’জনেই সুস্থ বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন। যে সঙ্কটজনক অবস্থায় পরভিন ছিলেন, তাতে সদ্যোজাত যে সুস্থ, তা দেখে অবাক চিকিত্সকরা। তাঁরা বলছেন, পরভিন ‘মিরাক্যাল বেবি’-র জন্ম দিয়েছেন। স্বভাবতই খুশি পরভীন স্বামী ও শাশুড়ি। হ্যাঁ মিরাক্যালই, ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই দুষ্কৃতীর পাঞ্জা থেকে পালাতে পারে, সে শিশু মিরাক্যালই। কিন্তু সদ্যোজাতকে নিয়ে এখন যাবে কোথায় পরভিন? বাড়ি তো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে! পরভিনের ৬ বছরের আর এক সন্তান আলি বলে, “চিন্তা করো না মা, ভাঙা বাড়িতেই চলো। ভাইকে তো বুকে আগলে রাখব...”