নিজস্ব প্রতিবেদন: ২০১৪ সালে ছিল 'অচ্ছে দিন'-এর প্রতিশ্রুতি। ভরসা করেছিল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। তিন দশক আগের দুই সাংসদের দল প্রথমবার পেয়েছিল একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা। পাঁচ বছরের শাসনকালের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল অসহিষ্ণুতা, গোরক্ষা, নোটবন্দি, জিএসটি, নীরব মোদী-মেহুল চোকসির পলায়ন ও রাফাল দুর্নীতির অভিযোগ। কিন্তু মোদী ঝড়কে আটকানো গেল না। বরং এবার ধেয়ে এল মোদী সুনামি। আর তাতে খড়কুটোর মতো উড়ে গেল বিরোধীরা। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

নরেন্দ্র মোদীর অতি কট্টর সমালোচকও স্বীকার করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মতো জনপ্রিয় রাজনীতিক বর্তমানে ভূভারতে নেই। পোশাক থেকে বাচনভঙ্গি- ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মায় মোদীর ধারেকাছে কেউ নেই। মোদীর মুখকে সামনে রেখে ভোটে লড়াই করেছিল বিজেপি। আর সাংগঠনিক রণনীতি সাজিয়েছিলেন অমিত শাহ। ঠিক যেন মহাভারতের কৃষ্ণ-অর্জুনের জুটি। লক্ষ্যভেদে অব্যর্থ অর্জুন মোদী, আর রথের রশির দায়িত্ব অমিত শাহের হাতে। দুই গুজরাটির সামনে কুলকিনারা পেল না বিরোধীরা।


মোদী ঝড় রুখতে একটা চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু সেটা তেমন দানা বাঁধতে পারেনি। উত্তরপ্রদেশে সপা-বসপা ও আরএলডি মহাজোট করেছিল। মনে হচ্ছিল, সেই জোটের মুখে বিজেপি বড়সড় ধাক্কা খেতে চলেছে। কিন্তু তেমন ক্ষতি হল না গেরুয়া শিবিরের। উত্তরপ্রদেশের লোকসান পুষিয়ে দিল পশ্চিমবঙ্গ। এরাজ্যে প্রথমবার ১৮টি আসন পেল বিজেপি। হ্যাঁ, বাংলায় পোক্ত সংগঠন ছাড়াই এমন অভাবনীয় সাফল্যর কৃতিত্ব রাজ্য নেতানেত্রীদের চেয়েও বেশি নরেন্দ্র দামোদর মোদীর। মোদীকে দেখেই ভোট দিয়েছেন মানুষ।


শুধু বাংলা কেন? গোটা দেশজুড়েই ভোট হয়েছে, মোদীর পক্ষে অথবা বিপক্ষে। আর মোদীর পক্ষে ভোটদান সহজ করে দিয়েছে বিরোধীরাই। মহাজোটের ভবিষ্যত রূপরেখা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ কোনও কিছুই জনতার সামনে তুলে ধরতে পারেননি মমতা, চন্দ্রবাবুরা। প্রথম থেকে বলে এসেছেন, মোদীকে হঠাতে হবে আগে। এতে আরও বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে। নরেন্দ্র মোদীও প্রচারে বারবার বলেছেন, অনেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা সরকার না থাকলে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। দুর্বল সরকারকে দেশকে পিছিয়ে দেবে। নরেন্দ্র মোদীর কথা মনে ধরেছে ভোটারদের, সেটা জনাদেশেই স্পষ্ট। স্বার্থের জন্যেও এক হতে পারেননি বিরোধী নেতারা। দিল্লিতে রাহুল-সীতারাম-মমতা একসঙ্গে বৈঠকে থাকছেন। আর বাংলায় তাঁরাই আলাদা। একে অপরকে নিশানা করছেন। জিও-র সস্তার ইন্টারনেটের যুগে এমন ভণ্ডামি মানুষের চোখে পড়েছে। তা নিশ্চিতভাবে অ্যাডভান্টেজ দিয়েছে মোদীকে।


তাও রাফাল, জিএসটি-র মতো ইস্যুতে লাভ তোলার সুযোগ ছিল বিরোধীদের। কিন্তু সেই সুযোগও মাঠে মারা যায় পুলওয়ামার পর। দেশজুড়ে প্রবল জাতীয়তাবাদের ঝড় তোলে বিজেপি। তার তীব্রতা বাড়ে বালাকোটে এয়ারস্ট্রাইকের পর। বালাকোটের এয়ারস্ট্রাইকে সেনা সাফল্য দাবি করলেও বিরোধীরা নাক কুঁচকেছেন। সেটাও হিতে বিপরীতে গিয়েছে। জাতীয়তাবাদ এদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এদিন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংও স্বীকার করেছেন, পাক সেনাপ্রধানের সঙ্গে কোলাকুলি করলে (পড়ুন সিধু) দেশবাসী মেনে নেবেন না। 


নির্বাচনী প্রচারের মাঝেও কৌশল বদল করেছে বিজেপি। এখানেও তারা বিরোধীদের গোল দিয়েছে। শুরুটা হয়েছিল দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ দিয়ে। নরেন্দ্র মোদীর সেনার নামে ভোটও চেয়ে বসেন। কিন্তু মাঝপথে আবার কৌশল বদল। রাজীব গান্ধীকে টেনে আনেন মোদী। সেই ফাঁদে পা দেয় কংগ্রেস। ৮৪-র শিখ হিংসা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন রাহুল গান্ধীর গুরু স্যাম পিত্রোদা। এর মধ্যে আবার এসেছে হিন্দুত্বও। ভোপাল থেকে সাধ্বী প্রজ্ঞাকে প্রার্থীকে মোক্ষম চাল দেন অমিত শাহ। খুঁচিয়ে তোলেন কংগ্রেসের জমানায় 'গেরুয়া সন্ত্রাস'। বিজেপি কৌশল বদলাতে থেকেছে, তখন বিরোধীদের সেই একই চর্বিত চর্বন- মোদী হঠাও। মোদী হঠা তো দূর, আরও প্রবলভাবে ফিরে এলেন 'হিন্দু হৃদয় সম্রাট'।