ফিরে দেখা গোধরা কাণ্ড : দেড় দশকের `পোড়া` ইতিহাস
নিজস্ব প্রতিবেদন: ভারতীয় রাজনীতি ও সমাজে সাড়া ফেলে দেওয়া গোধরা কাণ্ডে প্রাণদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনের সাজাকে কমিয়ে সোমবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিল গুজরাট হাইকোর্ট। হাই ভোল্টেজ এই মামলায় ২ বছর আগে শুনানি শেষ হয়ে গেলেও, চূড়ান্ত রায় প্রকাশ পেল আজ। এরই সঙ্গে রাজ্য সরকার এবং রেলকে নির্দেশ দেওয়া হয় গোধরা কাণ্ডে নিহতদের নিকট আত্মীয়কে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার। এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, বিগত ১৫ বছর ধরে কোন খাতে বইল এই মামলা-
২৭ ফেব্রুয়ারি'২০০২- গুজরাটের গোধরা এলাকায় আগুন লাগানো হয় সবরমতী এক্সপ্রেসে। ওই ট্রেনের ঝলসে যাওয়া এস৬ কামরায় থাকা ৫৯ হিন্দু যাত্রীর মৃত্যু হয়।
বিভিন্ন সূত্রে খবর অনুযায়ী, ট্রেনে অগ্নিসংযোগ এবং পরবর্তী উত্তেজনা আবহে ৩ দিন ধরে গুজরাট জুড়ে প্রাণ যায় ৭৯০ মুসলিম ও ২৫৪ হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের। এই প্রেক্ষাপটে এক লক্ষ মুসলিম ও ৪০ হাজার হিন্দু ঘর ছাড়া হন। এখনও নিরুদ্দেশ ১৩০ জন।
গুজরাট সরকার নিযুক্ত নানাবতী কমিশন ঘটনার তদন্ত করে জানায়, ট্রেনের কামরায় আগুন লেগে যায়নি, লাগানো হয়েছে।
সংঘ পরিবার দাবি করে, ট্রেনে অগ্নিদগ্ধদের অধিকাংশই অযোধ্যা থেকে ফিরতি করসেবক।
গান্ধীনগর ফরেন্সিক স্টাডিজ ল্যাবরেটরির তত্কালীন ডিরেক্টর মহিন্দর সিং দাহিয়া তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, "কামরার প্যাসেজে ৭২ নম্বর সিটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কোন এক ব্যক্তি প্রায় ৬০ লিটার দাহ্য তরল ঢেলে দেন কামরায় এবং তারপরই আগুন জ্বলতে শুরু করে"।
১ মার্চ'২০১১ বিশেষ সিট আদালত এই মামলায় ৩১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ৬৩ জনকে নিরাপরাধী ঘোষণা করে। দোষী সাব্যস্ত ৩১ জনের মধ্যে ১১ জনকে প্রাণদণ্ড এবং ২০ জনকে যাবজ্জীবন সাজা শোনায় আদালত।
দোষী সাব্যস্তদের অনেকে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদন করেন। পাশাপাশি ৬৩ জনকে নিরাপরাধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলে সরকার।
এই ঘটনায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে নরেন্দ্র মোদী সহ বিবিধ রাজনৈতিক নেতাদের যুক্ত থাকার অভিযোগে তদন্ত করে সিট। পরবর্তী সময়ে সিট ক্লোজার নোটিস জমা দেওয়ায় ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নাগাদ মুক্ত হন মোদী ও অন্যান্য কয়েক জন নেতা।
সে সময় আমেদাবাদের নারোদা-পাটিয়া এলাকায় দাঙ্গা লাগানোর অভিযোগে অন্য একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা পান তত্কালীন মোদী সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী মায়া কোদনানি। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেন কোদনানি এবং ২০১৪ সাল থেকে তিনি জামিনে রয়েছেন।
এরপর আজকের এই রায়।