মাসে মাসে বাড়বে রান্নার গ্যাসের দাম, মার্চের মধ্যেই ইতি হবে `ভর্তুকি সংস্কৃতির`
নয়া দিল্লি: প্রতি মাসে ৪ টাকা করে বাড়তে চলেছে রান্নার গ্যাসের দাম। শুধু তাই নয়, এতদিন পর্যন্ত দেশের আম আদমি রান্নার গ্যাসে যে ভর্তুকি কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে পেত, সেটাও আগামী অর্থবর্ষের শুরুতেই বন্ধ হতে চলেছে, ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। এদিন লোকসভায় দেশের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান একটি লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, "আগামী মাস থেকে ৪ টাকা করে দাম বাড়বে রান্নার গ্যাসের এবং আগামী অর্থবর্ষ অর্থাৎ ২০১৮-এর মার্চ মাসের মধ্যেই রান্নার গ্যাসে সমস্ত রকম ভর্তুকিও তুলে নেবে সরকার"। > ভারতীয় হিসাবে আপনি কত নম্বর নাগরিক?
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই মাস থেকেই রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল কেন্দ্রের মোদী সরকার। সরকারের যুক্তি, ভর্তুকি দিয়ে একটি পাকাপোক্ত অর্থনৈতিক পরিকাঠামো টিকিয়ে রাখা যায় না। তাই এই সিদ্ধান্ত! ভর্তুকির রাজনীতিকে যে কোনও ভাবেই আমল দেবে না মোদী মন্ত্রিসভা, এদিন লোকসভায় পরোক্ষভাবে এই বার্তাও দিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। আর সেই মতো ইন্ডিয়ান ওয়েল, হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম, ভারত পেট্রোলিয়ামের মত সংস্থাগুলোকে ইতিমধ্যেই সিলিন্ডার প্রতি গ্যাসে (১৪.২ কেজি) ৪ টাকা করে দাম বাড়ানোর কথাও জানিয়েছে ভারত সরকার।
রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা সামনে আসতেই মধ্যবিত্তের মাথায় হাত। একদিকে স্টেট ব্যাঙ্কে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত, অন্যদিকে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর, মধ্যবিত্তের ঘারে একেবারে জোড়া কোপ। দারিদ্র সীমার নিচে থাকা মানুষ, যারা এতদিন পর্যন্ত রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি পেয়ে এসেছেন, মার্চের পর আর তারা ভর্তুকি পাবেন না, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কড়া ভাষায় নিন্দা করছে বিরোধীরা।
কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা করে জানিয়েছেন, "এই সরকার অর্থনীতিতে অজ্ঞ। মূর্খ। তারা মনে করছে মধ্যবিত্ত মানুষের পকেট থেকে টাকা কেটে নিলে কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগার সমৃদ্ধ হবে। প্রতিমাসে প্রত্যেক নাগরিকের সঞ্চয় থেকে ৪ টাকা করে কেটে নিয়ে সরকারের এমন কোনও উন্নতি হবে না, এটা ওদের বোঝা উচিত"। আরও একধাপ এগিয়ে প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, "রাজ্যসভায় আমাদের নেতা গোলাম নবি আজাদের সঙ্গে কথা বলব। এই সরকারকে চরম চ্যালেঞ্জের দিকে ঠেলে দিয়ে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য করাতে হবে"। কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
রান্নার গ্যাস থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মত, "ভর্তুকিতে মধ্যবিত্ত তো বটেই গরিবেরও খরচ বাঁচে। এই সরকার ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া উন্নয়নের কথা ভাবছেন। এই সিদ্ধান্ত গরিব মানুষের ওপর প্রভাব ফেলবে। তাছাড়াও এলপিজি-তে রান্নার ফলে সাধারণের স্বাস্থ্যের ক্ষতিটাও কম হত। কেরোসিন বা অন্য জ্বালানি অবশ্যই বেশি ক্ষতিকারক, এটাও ভাবা দরকার সরকারের"।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত, সরকারের এই সিদ্ধান্ত একেবারে পরিকল্পিত। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই প্ল্যানিং কমিটি (পঞ্চবার্ষিকি পরিকল্পনা) ভেঙে ফেলা থেকে শুরু করে নোট বন্দি, এক নতুন অর্থনৈতিক পরিকাঠামো তৈরির পথেই হেঁটেছে এই সরকার। রাজনৈতিক বিরোধীরা অবশ্য বলছে, "কথার খেলাফ করছে কেন্দ্র সরকার"। আগামী দিনে বিরোধীরা এই বিষয়কে হাতিয়ার করেই পথে নামবে, এমনই মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।