ওয়েব ডেস্ক: কাশ্মীরে মৃত বুরহানকে লেখা প্রাক্তন এক সেনা আধিকারিক মেজ়র গৌরব আরিয়ার লেখা একটি খোলা চিঠি। এই চিঠি, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি মেজরের উপলব্ধি এবং যাঁরা কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি সহনাভূতিশীল তাদের জন্যও।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

চিঠিতে লেখা-
প্রয়াত বন্ধু,
কাশ্মীর এখন উত্তপ্ত। ২৩ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে হিংসায়। কেন এই মৃত্যু, কীসের হিংসা, আমার জানা নেই। বেশিরভাগই তোমার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে উদ্যত। কিন্তু, তা হওয়া উচিত ছিল না। একজন পুলিশকর্মীকে জ্যান্ত গাড়ির মধ্যে বন্দি করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। দমবন্ধ হয়ে জলে ডুবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আমি তোমার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং সমবেদনা জানাচ্ছি সেইসব মৃত মানুষদের পরিবারকেও। তুমি ঘৃণ্য হলেও, তোমার পরিবার তো কোনও অন্যায় করেনি।


তুমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারতে। একজন স্থপতি বা সফটওয়্যার প্রোগ্রামার হওয়া যেত। কিন্তু, তুমি সোশাল মিডিয়ার বিশ্বে বিপথ চালিত হলে। রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেতে ভিন্নপথ বেছে নিয়েছ তুমি। ইন্টারনেটে পোস্ট করা একটি ছবিতে তোমাকে দেখলাম ভাইয়ের সঙ্গে, কাঁধে অ্যাসল্ট রাইফেল ও হাতে রেডিও সেট নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছ। এক লহমায় মনে হল হলিউডের কোনও ছবি দেখছি। তোমার কাঁধে নিশ্চিন্ত আরামে শুয়ে আছে আগ্নেয়াস্ত্রটি। আমি জানি এ বিষয়ে তোমায় উপদেশ দিতে অনেক দেরি করে ফেললাম, কিন্তু, অপারেশনাল এরিয়ায় এই ধরনের কাজকর্ম করা মুর্খামি।


কাশ্মীরে বিক্ষোভ সামলাতে সংবাদপত্র ও কেবল টিভি সম্প্রচার বন্ধ করল মেহবুবা সরকার


তোমার ছবি যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলল, তুমি তখন চিরনিদ্রায়। তুমি কাশ্মীরবাসীদের একাংশকে উদ্বুদ্ধ করেছ ভারতীয় সেনাকর্মীদের খুন করতে। সুন্দর চেহারার জন্য তোমার মহিলা ভক্তের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তুমি বাইশ বছর বয়সে মারা গেছ। যদি বেঁচেও থাকতে, হয়ত তেইশে মারা যেতে। কিন্তু, এসবই ক্যালেন্ডারের তারিখ মাত্র। হিংসার আঁচ এবং তার ফলাফল একই থাকত।


তোমার সঙ্গে আগে দেখা হলে, অবশ্যই তোমাকে কতগুলো কথা বলতাম। হুরিয়ত কনফারেন্সের নেতারা এক একজন গিরগিটি। তারা মানুষের রক্ত চোষে। তারা কাশ্মীরের যুবকদের ভারতীয় সেনার সামনে ফেলে দেয়। এটা একরকমের যুদ্ধ। যেন সিংহের সামনে একটা ভেড়াকে ফেলে দেওয়া। তুমি বেঁচে থাকলে আমি তোমাকে দেখিয়ে দিতে পারতাম, ওইসব নেতাদের দ্বিচারিতা। ওদের ছেলে মেয়েরা বিদেশে পড়াশোনা করছে, ভুলেও জিহাদের ধারপাশ মারাচ্ছে না। তাদের টাকা পয়সাও যথেষ্ট পরিমানেই। কিন্তু, তারা তোমাদের মতো যুবকদের সম্মুখ সমরে ঠেলে দিচ্ছে। হুরিয়ত কনফারেন্সের প্রধান সইদ আলি গিলানির এমন একজন আত্মীয়ের নাম বলতে পারবে আমাকে যে তথাকথিত 'ভারতের অপশাসনের বিরুদ্ধে' 'আজাদ কাশ্মীরের' দাবিতে 'জিহাদ' করছে? গিলানির ছেলে নঈম গিলানি, রাওয়ালপিন্ডির একজন ডাক্তার এবং পাকিস্তানি আইএসআই-এর ছত্রছায়ায় দিব্যি সুখে আছে। সইদ আলি গিলানির দ্বিতীয় পুত্র জাহুর দক্ষিণ দিল্লিতে থাকেন। মিরওয়াইজ উমর ফারুকের বোন রাবিয়াও একজন ডাক্তার, আমেরিকায় তার বসবাস। এইরকম আরও অজস্র উদাহরণ আছে। কাশ্মীরের কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার আপনজনেরাই কাশ্মীরে থাকেন না। সবাই সুখে, স্বাচ্ছন্দ্যে কাশ্মীরের বাইরে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে রয়েছেন। আর জিহাদটা শুধু 'অন্যদের' জন্য।


তারা ভালই থাকল, শুধু, তোমার বাবা-মায়ের এক সন্তানের মাথাটাই এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেল। সকলেই ভারতীয় সেনাকর্মীদের দায়ী করছে তোমাকে মারার জন্য। কিন্তু, কেউ হুরিয়ত নেতাদের এই প্রশ্নটা করছে না, কেন তাদের পরিবার থেকে একটাও বুরহানকে পাওয়া যাচ্ছে না?


দেখছি, পাকিস্তানি মিডিয়ায় আনন্দ ঝড়ে পড়ছে কারণ, এইবার কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে ঈদ পালন করছে না, তারা পাকিস্তানকে বেছে নিয়েছে উত্সবের সঙ্গী হিসাবে। ১৪০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম চাঁদ দেখার পরিবর্তে ঈদ পালন হচ্ছে পাকিস্তানকে দেখে। অসাধারণ!


টানা ৮ দিন কার্ফু জারি কাশ্মীরে, মৃত বেড়ে ৩৮


হুরিয়তীরা জানে, বিশ্বের মানচিত্র থেকে কাশ্মীরের প্রাসঙ্গিকতা লোপ পেয়েছে। কারণ, কেউই একে আর ধর্তব্যের মধ্যেই আনেন না। সকলেই জানে, পুরোটাই তৈরি করা কৃত্রিম যুদ্ধের পরিবেশ। পাকিস্তানও জানে, ভারতীয় সেনাকর্মীদের ব্যস্ত রাখার একমাত্র সস্তার রাস্তা এটাই।


তুমি একজন সন্ত্রাসবাদী ছিলে। তুমি ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলে। ফল হিসাবে, অতীতেও তোমার পূর্বসুরিদের সঙ্গে যা হয়েছে, তোমার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। যখন তুমি ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পথ বেছে নিয়েছিলে, তখন তোমার জানা উচিত, তারা তেমাকে মেরে ফেলবেই।


তোমার সমর্থনকারীরাও রক্তপাতই চায়। সুতরাং, তাই হোক।


উল্লাস!
মেজ়র গৌরব আরিয়া (প্রাক্তন)