নিজস্ব প্রতিনিধি : ইয়া বড় একখানা হৃদয় ছিল তাঁর। হয়তো বড় সাম্রাজ্য ছিল না। কিন্তু নিজের পৃথিবীতে তিনি নিজেই সম্রাট। ৩৫২ বছর আগে শাহজাহানের অস্বিত্বের কথা আমরা শুধু পড়েছি। জেনেছি, সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী মুমতাজের জন্য গড়েছিলেন সৌন্দর্যের প্রতীক তাজমহল। শাহজাহান-মুমতাজের ভালবাসা নিয়ে ইতিহাস আরএ কত গল্পই না বলে! কিন্তু সবটাই আমাদের শুনতে হয়। দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে দুধের স্বাদ যেন ঘোলে মিটিয়ে দিয়েছিলেন এ যুগের শাহজাহান। নিজের সাম্রাজ্যে যিনি বেতাজ বাদশা। ফইজুল হাসান কাদরি। স্ত্রী তাজমুল্লি বেগমের জন্য যিনি বানিয়েছিলেন তাজমহল। কিন্তু তাঁর ভালবাসার কাজ অসম্পূর্ণই থেকে গেল। ৮৩ বছরের কাদরি চলে গেলেন আচমকা। পথ দুর্ঘটনায়।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন-  ‘যা ভালো বুঝেছি সেটাই করেছি’, রাজ্যে একাধিক শহরের নাম বদল নিয়ে সাফ কথা যোগীর


লোকে তাঁকে ডাকে, বুলন্দশহরের শাহজাহান নামে। সাধারণ পোস্টমাস্টার হয়েও যিনি অসাধারণ কাজ করার সাহস দেখিয়েছিলেন। উত্তরপ্রদেশের দেবাই তহসিলের কাসের কালান গ্রামে গড়ে তুলেছিলেন তাঁর সাধের তাজমহল। শাহজাহানের তাক লাগানো মহলের সঙ্গে কাদরির ভালবাসার তাজমহলের তুলনা করা বোকামি। আকার, জৌলুস, ঐতিহ্যে হয়তো আগ্রার তাজমহল কয়েক আলোকবর্ষ এগিয়ে। কিন্তু ভালবাসায়? সেখানে কোনও খামতি নেই। সাধ ও সাধ্য মিলিয়ে সাধারণ পোস্টমাস্টার গড়ে তুলেছিলেন ভালবাসার রংমহল। স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালবাসা না থাকলে এ কাজ কি সম্ভব! কাদরি অবশ্য কাজটা শেষ করে যেতে পারলেন না। একটা সময় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব লখনৌতে তাঁর সঙ্গে দেখা করে ছিলেন। কাদরিকে কিছু টাকা দিতে চেয়েছিলেন তিনি। যাতে তাঁর সাধের তাজমহলের কাজ তিনি শেষ করতে পারেন। কাদরি নেননি। উল্টে বলেছিলেন, সেই টাকায় যেন গ্রামে মেয়েদের জন্য একটা কলেজ স্থাপন করা হয়। তার জন্য জমিও দিয়েছিলেন তিনি। সেই কলেজ এখন গমগম করে। কাদরি তাঁর তাজমহলের জন্য মার্বেল আনাতে তিল তিল করে জমিয়েছিলেন দুই লক্ষ টাকা। জয়পুর থেকে মার্বেল আনাবেন বলে মনস্থির করেছিলেন। কিন্তু সে সুযোগ হল না। কাদরি চলে গেলেন।


আরও পড়ুন-  ছত্তিসগঢ়ের 'কুমারস্বামী' হয়ে উঠতে পারেন অজিত যোগী


১৯৫৩ সালে তাজমুল্লি বেগমের সঙ্গে নিকাহ হয় কাদরির। ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে তাজমুল্লি বেগম মারা যান ২০১১ সালে। ৫৮ বছরের বিবাহিত জীবন থমকে যায় এক মুহূর্তে। পরের বছরই বেগমের সমাধির উপর তাজমহল বানানোর পরিকল্পনা করেন কাদরি। সাধারণ পোস্টমাস্টারের চাকরি করে যা সঞ্চয় করেছিলেন, সবটাই ঢেলে দিলেন তাজমহলের জন্য। তাতে কুলোল না। প্রাথমিক ইমারত হল বটে। কিন্তু অর্থের অভাবে আটকে গেল কাজ। তবে কাদরির পরিবারের লোকজন বলছেন, জমানো দুই লক্ষ টাকা দিয়ে মার্বেল আনানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। তার আগেই এক বাইক ধাক্কা মেরে পালিয়ে গেল তাঁকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল কাদরিকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। স্ত্রীর পাশেই থাকতে চেয়েছিলেন কাদরি। তাঁর সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানানো হবে। বেগমের পাশেই সমাধিস্থ হবেন বুলন্দশহরের শাহজাহান।