গরিব থেকে আরও গরিব হলেন মানিক
মানিক বলেছেন, `ত্রিপুরার মানুষ আমার সন্তান`।
নিজস্ব প্রতিবেদন: যেখানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নেতা-মন্ত্রীদের আয়ের পরিমান, সেখানে পকেট ফাঁকা মানিকের। কমিউনিস্ট নেতা কার্যত কপর্দকশূন্য।
৫ বছর আগেও ব্যাঙ্কে আমানত ছিল ৯,৭২০ টাকা ৩৮ পয়সা। এখন সঞ্চয় ২,৪১০ টাকা ১৬ পয়সা। আর হাতে নগদ রয়েছে ১,৫২০ টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে ত্রিপুরার ছ'বারের মুখ্যমন্ত্রীর মোট অর্থের পরিমাণ হল ৩,৯৩০ টাকা ১৬ পয়সা। সোমবার ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচক আধিকারিকের কাছে মানিক সরকার নিজের স্থাবর এবং অ-স্থাবর সম্পত্তির নথি জমা করতেই সামনে এল এই অবাক করা তথ্য। মনোনয়ন জমা দিয়ে এসেই ভারতের 'সব থেকে দরিদ্র' মুখ্যমন্ত্রীর হুঙ্কার, "আমরা এবার বিরাট ব্যবধানে জিতব, যা দেশের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।"
সোমবার মানিক সরকারের সঙ্গেই মনোনয়ন জমা করেন রাজ্যের চার মন্ত্রীসহ ২০ জন বাম বিধায়ক। উল্লেখ্য, এবারও ত্রিপুরার ধানপুর বিধানসভাকেন্দ্র থেকেই লড়বেন মানিক সরকার। একই সঙ্গে বক্সানগর থেকে লড়বেন ত্রিপুরা সরকারের ক্রীড়ামন্ত্রী শহিদ চৌধুরী। এছাড়াও সোমবার মনোনয়ন জমা করা সিপিএম প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বনমন্ত্রী নরেশ জামাতিয়া (বাগমা) এবং রতন ভৌমিক (কাকরাবন) শিক্ষামন্ত্রী তপন চট্টোপাধ্যায় (চাঁদিপুর)। মঙ্গলবার মনোয়ন পেশ করেছেন রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী বাদল চৌধুরী। উল্লেখ্য, ৩১ জানুয়ারি মনোয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। ত্রিপুরায় ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি, ফল ঘোষণা ৩ মার্চ।
মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর মানিক সরকার যখন অষ্টম বাম সরকার গঠনের জন্য 'ভোট ভিক্ষা'য় নেমেছেন তখন পাল্টা প্রচারে নেমেছেন বিজেপি। "আপ কি বার, নো মানিক সরকার", এই স্লোগানেই জোরদার প্রচার চালাচ্ছে গেরুয়া শিবির।
আরও পড়ুন- চালকের ভুলো মন, 'সেন্ট্রাল লক' বিভ্রাটে নাজেহাল তৃণমূল বিধায়ক
কয়েকদিন আগেই মানিক সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা রোজভ্যালি কেলেঙ্কারি নিয়ে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। এমনও শোনা যায়, ভোটে লড়তেই নাকি নারাজ ছিলেন 'গরিব মানিক'। এমন অবস্থায় নিজের 'খাজানা' খুলে দিয়ে বিরোধীদের সপাটে চড় কষালেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী, এমনই মত বাম মনস্ক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
১৯৯৮ সাল থেকে ত্রিপুরার ব্যাটন একা হাতেই সামলাচ্ছেন মানিক সরকার। ৯৩ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানিক সরকারই ত্রিপুরার সবথেকে দীর্ঘ সময়ের মুখ্যমন্ত্রী। এবার জিতলে তৈরি হবে বিরল নজির। যা পারেনি বাংলার বামেরা, তা করে দেখানোর সুযোগ রয়েছে ত্রিপুরা সিপিএম-এর কাছে। আর সেজন্যই ত্রিপুরার গরিবি হঠাতে গরিব মুখ্যমন্ত্রীকেই মুখ করেছে লাল ব্রিগেড। ৬৯ বছর বয়সী এই কমিউনিস্ট নেতা নিজের রোজগারের সম্পূর্ণটাই দান করেন দলকে। মুখ্যমন্ত্রী পদে কাজ করার জন্য যে ২৬,১৩৫ টাকার মাসিক বেতন মানিক সরকার পান তার পুরোটাই কমিনিউস্ট পার্টি মার্ক্সবাদীর তহবিলে দিয়ে দেন তিনি। ব্যবহার করেন না কোনও ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও। তবে স্ত্রী পাঞ্চালী সরকারে ব্যাঙ্কে আছে ১২ লক্ষ ১৫ হাজার ৭১৪ টাকা। নগদ রয়েছে ২০ হাজার ১৪০ টাকা। এছাড়াও মানিকের স্ত্রীর রয়েছে ২০ গ্রাম সোনা।
আরও পড়ুন- 'নব বঙ্গে'র মোড়কে লোকসভায় নজর মোদীর
নিঃসন্তান মানিক সরকার এতদিন যে পরিষেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন, সেই কাজেই আরও একবার নিজেকে সমর্পণ করতে চান। আর সে কারণেই ভোটের বাজারে মানিক বলেছেন, "ত্রিপুরার মানুষ আমার সন্তান"। আর মানিকের এই বক্তব্যকে পাথেও করেই লড়াইয়ে নেমেছে বামজোট।