জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: হিংসাদীর্ণ মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা। তিনি জানালেন, ভয়ংকর ঘটনা ঘটে চলেছে মণিপুরে। আর তার আঁচ এসে পড়ছে মিজোরামেও। প্রাণভয়ে মণিপুর থেকে পালিয়ে আসা উদ্বাস্তুরা ভিড় করছে পড়শি মিজোরাম রাজ্যে। মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে জাতি হিংসার কারণে সংঘর্ষের ফলে মণিপুরের পরিস্থিতি গত ৩ মাস ধরেই বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত। একের পর এক বিভীষিকার ছবি সামনে আসছে মণিপুরে। এই পরিস্থিতিতে এনডিএ-এর সহযোগী তথা মিজোরামের মুখ্য়মন্ত্রী জোরামথাঙ্গা মুখ খুললেন মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বিরেন সিংয়ের পদত্যাগ ও কেন্দ্রের পদক্ষেপ


জোরামথাঙ্গা বলেন, দিনে দিনে মিজোরামে মণিপুরী উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাড়ছে। যা মিজোরামের জন্য সমস্যার কারণ হয়েই দাঁড়াচ্ছে। কারণ, মিজোরামের মতো একটি ছোট রাজ্য আর্থিকভাবে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে। পাশাপাশি, তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বিরেন সিংয়ের পদত্যাগ করতে না চাওয়ার প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন। কেন্দ্রীয় সরকার এবং মণিপুর সরকার সেখানকার পরিস্থিতিকে বুঝতে ভয়ঙ্করভাবে ভুল করেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, জোরামথাঙ্গা বলেন, "আমি বিশ্বাস করি যে তারা তাদের সেরা চেষ্টা করেছে। তবে তাদের সেই সেরা চেষ্টা করাটাও যথেষ্ট ভালো ফল দিচ্ছে না। তাদের উচিত আরও বেশি কিছু করা। কারণ সেখানে অনেক দুর্ভোগ, প্রচুর মৃত্যু এবং অনেক লজ্জাজনক জিনিস ঘটেছে। আর সমস্যাটির সমাধান মণিপুর সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার উভয়েরই করা উচিত।"


মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন


এই হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল কিনা জানতে চাওয়া হলে, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা বীরেন সিংয়ের উপর নির্ভর করে যে তিনি পদত্যাগ করবেন কি করবেন  না। দিল্লি বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর পরামর্শ করা উচিত। যা ঘটছে তার বিচারে তাঁরা ভালো বুঝতে পারবেন কী করতে হবে।” মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার সম্ভাবনা সম্পর্কে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা ভাল কি না সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত মণিপুর সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। কারণ তারা ভাল জানেন, কীসে কী সেরা হবে।" প্রসঙ্গত, মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) বিজেপি-নেতৃত্বাধীন নর্থ ইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনইডিএ)-এর সদস্য এবং কেন্দ্রে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) একটি অংশ।


এনডিএ-কে সমর্থন ইস্যু


এখন মণিপুরে যা কিছু ঘটেছে তার প্রেক্ষাপটে তিনি এনডিএ-র প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্বিবেচনা করবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে জোরামথাঙ্গা আরও বলেন, “পুনর্বিবেচনার দরকার নেই। অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে শুরু থেকেই আমরা এনডিএ-র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলাম। আমরা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ গোষ্ঠীর সঙ্গে ছিলাম না। এনডিএ-র প্রতি আমাদের সমর্থন ইস্যু-ভিত্তিক। তবে হ্য়াঁ,  এনডিএ-এর কোনও নীতি যদি মিজোরামের জনগণের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে এমন হয়, সেক্ষেত্রে আমরা দৃঢ়ভাবে তার সঙ্গে সহমত হব না। কিন্তু প্রসঙ্গ যখন উন্নয়ন, রাজনৈতিক ইস্যু এবং এনডিএ-র সদস্য হয়ে আমরা একসঙ্গে করতে পারি এমন কোনও জিনিসের বিষয়ে হবে, তবে সেক্ষেত্রে আমরা আনন্দের সঙ্গে তাদের সমর্থন করব।" যদিও জোরামথাঙ্গা এটা স্পষ্ট করে দেন যে, “আমরা বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং (এখন) মণিপুর থেকে আসা শত শত এবং হাজার হাজার শরণার্থী গ্রহণ করার জন্য সত্যিই প্রস্তুত নই। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য চাই।"


বিভীষিকার মণিপুর


জোরামথাঙ্গা জানান, এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে উপাদান ও অর্থের সাহায্যের প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, সংরক্ষণের দাবিতে আজকে প্রায় ৩ মাস ধরে মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে জাতি হিংসার কারণে উত্তপ্ত মণিপুর। এই মেইতেইরা মণিপুরের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই। মূলত ইম্ফল উপত্যকায় বাস মেইতেইদের। ওদিকে কুকি ও জো সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষরা থাকেন পাহাড়ি অঞ্চলে। মেইতেইদের সংরক্ষণের অধিকার দাবির বিরোধিতা করেছে কুকিরা। এই নিয়ে গত ৩ মে প্রথম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারপর থেকেই অশান্তির আগুনে পুড়ছে মণিপুর।


হিংসাদীর্ণ মণিপুরে একের পর এক বিভীষিকার ছবি সামনে আসছে। স্বাধীনতা সংগ্রামীর আশি বছরের বৃদ্ধা স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে। এটি মণিপুরের কাকচিং জেলার সেরউ গ্রামের ঘটনা। ওদিকে পূর্ব ইম্ফলে ২১ জুলাই একটি এফআইআর হয়েছে।  সেখানে এক ১৮ বছরের তরুণী অভিযোগ করেছেন, তাঁকে গণধর্ষণ করেছে কালো পোশাক পরিহিত অস্ত্রধারী ৪ যুবক। কিন্তু তাঁর পরের কথাগুলি আরও মারাত্মক। ওই তরুণী পুলিসকে জানিয়েছেন, তাঁকে অপহরণ করে মহিলাদের একটি দল। তারপর তাঁকে তুলে দেওয়া হয় অস্ত্রধারী ওই ৪ যুবকের হাতে। 


এর পাশাপাশি ঘরে ঢুকে ২ বোনকে গণঘর্ষণের পর খুনের অভিযোগ সামনে এসেছে ইম্ফলে। নির্যাতিতাদের বাবার অভিযোগ, ৪ মে ঘটনাটি ঘটে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত, ঘটনার ৮০ দিন পরেও এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিস। ওদিকে, মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলার এক লোকালয়ে একটি বাড়ির বাঁশের বেড়ার মাথায় উদ্ধার হয়েছে একটি কাটা মুণ্ডু। বাঁশের বেড়ার মাথায় টাঙানো ছিল কাটা মুণ্ডুটি। ঘটনার বীভত্সতা ও নৃশংসতা চমকে দিয়েছে সবাইকে। এই ভিডিয়োটিও ভাইরাল। এই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠছে সবাই। যে-ব্যক্তির কাটা মুণ্ড পাওয়া গিয়েছে, তাঁকে শনাক্তও করা গিয়েছে। তিনি কুকি সম্প্রদায়-ভুক্ত।


উল্লেখ্য, মণিপুরের ২ মহিলাকে গণধর্ষণ ও তাঁদের নগ্ন হাঁটানোর ভিডিয়ো সামনে আসতেই তোলপাড় হয় দেশ। ৪ মে মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় এই ঘটনা ঘটে। ভাইরাল ভিডিয়ো ঘিরে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। ওই দুই নির্যাতিতার মধ্যে একজন কার্গিল যোদ্ধার স্ত্রী বলেও জানা যায়। দোষীদের অবিলম্বে শাস্তির দাবি ওঠে। বিরোধীদের ক্রমাগত দাবির মুখে শেষপর্যন্ত মণিপুর ইস্যুতে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। ভাইরাল ভিডিয়োকাণ্ডে কড়া বিবৃতি দেন। দোষীদের কোনওভাবেই রেয়াত করা হবে না। আইন আইনের পথে চলবে বলে জানান তিনি। এখনও পর্যন্ত সেই ন্যক্কারজনক ঘটনায় ৫ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। ওদিকে মণিপুর ইস্যুতে বাদল অধিবেশনে এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোনও বিবৃতি না দেওয়ায়, অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে কংগ্রেস। সেই প্রস্তাব গৃহীতও হয়েছে।


আরও পড়ুন, Raghav Chadha | AAP: রাঘব চাড্ডাকে কাকের ঠোক্কর! বিজেপির কটাক্ষ,'ঝুট বোলে কাউয়া কাটে'



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)