ভাষা রাজনীতিতে খাসা চাল মোদীর
ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল কিন্তু ঘরের ভাষায় কথা বলল না। কিন্তু এছেলে তো এমন করে না। ছেলে যত `বড়ই` হয়ে যাক, মাতৃভূমিতে তাঁর মুখে তো এতদিন মাতৃভাষাই শোভা পেত। তাহলে কী এমন হল যে গুজরাটি ছেড়ে হিন্দির হাত ধরতে হল ভূমিপুত্র নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীকে! আসলে ভোট বড় বালাই।
ওয়েব ডেস্ক: ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল কিন্তু ঘরের ভাষায় কথা বলল না। কিন্তু এছেলে তো এমন করে না। ছেলে যত 'বড়ই' হয়ে যাক, মাতৃভূমিতে তাঁর মুখে তো এতদিন মাতৃভাষাই শোভা পেত। তাহলে কী এমন হল যে গুজরাটি ছেড়ে হিন্দির হাত ধরতে হল ভূমিপুত্র নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীকে! আসলে ভোট বড় বালাই।
গুজরাটে ভোট আসন্ন। কুড়ি কুড়ি বছর পার, সেরাজ্যে নাগাড়ে ক্ষমতায় ভারতীয় জনতা পার্টি। তার মধ্যে এক যুগের বেশি সময় মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে থেকেছেন স্বয়ং দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। রাজ্য জুড়ে গেরুয়া বাহিনীর দুর্ভেদ্য সংগঠন। কিন্তু তবুও হার্দিক প্যাটেল নামক বছর তেইশের এক 'নেহাত ছোঁকড়া' দেশের মাটিতেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে অজেয় মোদী-শাহ জুটিকে। পতিদার সম্প্রদায়ের মানুষদের দীর্ঘদিনের 'বঞ্চনার প্রতিবাদ ও সংরক্ষণের দাবি'কে সংগঠিত করে গড়ে তুলেছেন আন্দোলন। আর তাতেই আশঙ্কার মেঘ ঘণীভূত হয়েছে গেরুয়া আকাশে। সামনেই ভোট, পতিদারদের ভোট যদি ফস্কে যায় তাহলে তো এতদিনকার বিজয় রথকে বেগ পেতে হতে পারে। আর যদি সত্যিই কোনও 'অঘটন' ঘটে যায়, সেক্ষেত্রে তো নিজের রাজ্যে হারার দায়ে দেশ জুড়ে মুখ পুড়বে ব্র্যান্ড নমোর। তাই সুরক্ষিত করা প্রয়োজন পতিদার সমর্থন। আর সেজন্যই পতিদারদের ঘাঁটি বলে সুপরিচিত সুরাটে পতিদারদের অর্থেই তৈরি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উদ্বোধনে গিয়ে গুজরাটি ছেড়ে হিন্দিতে মুখ খুললেন 'ঘরের ছেলে' মোদী।
সবই তো ঠিক আছে, কিন্তু, পতিদারদের মাঝে গুজরাটি ছেড়ে হিন্দি কেন? পতিদাররা তো হিন্দিতে কথা বলেন না! ঠিকই। কিন্তু এখানেই সবার থেকে আলাদা নমো। তাঁর অতি বড় বিরোধীরাও বলে থাকেন, রাজনীতি ছাড়াও 'মার্কেটিংটা তাঁর কাপের চা'। আর সবাই জানেন, পরিণত রাজনীতিক জনতার নাড়ির স্পন্দন সঠিক সময়ে নির্ণয় করতে পারেন। গতকাল মোদী যেন সেটাই আবার প্রমাণ করলেন। গুজরাটে বিজেপি সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ পতিদারদের মহল্লায় তাঁদেরই তৈরি হাসপাতালের উদ্বোধনে গিয়ে মদী বললেন, "আমি এখানে আসার সময় একটা দ্বন্দ্বে ভুগছিলাম, হিন্দিতে কথা বলব না গুজরাটিতে। কিন্তু তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম, আপনারা যেহেতু একটা অসাধারণ কাজ করেছেন, তাই আমি হিন্দিতে বক্তৃতা দেব। যাতে সারা দেশের মানুষ পতিদারদের এই কাজের কথা জানতে পারেন..."। মোদী মুখে একথা শুনেই হাততালিতে ফেটে পড়ে অনুষ্ঠান স্থল। আর বোঝা যায় আবেগের সঠিক ভরকেন্দ্রে সঠিক তিরটিই বিঁধিয়েছেন নরেন্দ্র দামোদর দাস। প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন স্বীকৃতি পেয়ে আপ্লুত পতিদারদের একটা বড় অংশ।
এখন দেখার আগামী বিধানসভা ভোটে পতিদাররা কতটা উদার হয় মোদীর বিজেপির উপর। কিন্তু সেই বিষয়টি তো ভবিষ্যতের গর্ভে। আপাতত যা বলা যায়, তা হল ভাষা রাজনীতিতে খাসা ফলাফল করেছেন নমো।