নির্ভয়া গণধর্ষণকাণ্ড : প্রাণভিক্ষা চেয়ে শেষ আকুতি, মধ্যরাতে বসল আদালত, একনজরে সওয়াল জবাব
রাষ্ট্রপতির খারিজ করে দেওয়া প্রাণভিক্ষার আবেদনের উপর সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনা করার এক্তিয়ার সীমিত। কারণ সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতারও সীমাবদ্ধতা আছে।
নিজস্ব প্রতিবেদন : দীর্ঘ ৭ বছর ৩ মাসের আইনি লড়াই। হাল ছাড়েননি আশা দেবী। মেয়ে নির্ভয়ার উপর হওয়া পাশবিক অত্যাচারের উপযুক্ত শাস্তি দিতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়েছেন। আইনি জটিলতায় ধাক্কা খেয়েছেন। আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরেও বার বার দিন স্থগিত হয়ে গিয়েছে। অভিযুক্তের আইনজীবী চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, কোনওভাবেই ফাঁসি কার্যকর হতে দেবেন না তিনি। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আশা দেবী। আবার চোয়াল শক্ত করে লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। মেয়ে নেই। আর কোনওদিন ফিরেও আসবে না মেয়ে। কিন্তু মেয়ের বেঁচে থাকাকে দুঃসহ করে দিয়ে মৃ্ত্যুমুখে ঠেলে দিল যারা, তাদেরকে কোনওভাবে রেয়াত নয়।
অবশেষে শুক্রবার কাকভোরে কার্যকর হল ফাঁসির সাজা। দোষীদের বাঁচার জন্য আইনি লড়াইয়ের সব পথ শেষ হয়ে গিয়েছিল বৃহস্পতিবারই। কালই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল, ২০ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টা দিল্লির তিহাড় জেলে ফাঁসি দেওয়া হবে নির্ভয়া গণধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত পবন গুপ্তা, বিনয় শর্মা, অক্ষয় ঠাকুর ও মুকেশ সিংকে। কিন্তু তারপরেও মধ্যরাতে আবার বসে আদালত। শেষবারের মতো প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ৪ অপরাধী।
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত আড়াইটে। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি আর ভানুমতী, বিচারপতি অশোক ভূষণ ও বিচারপতি এএস বোপান্নার ডিভিশন বেঞ্চে শুরু হল শুনানি। একনজরে সওয়াল জবাব-
১) অভিযুক্তদের আইনজীবী এপি সিংয়ের জোরাজুরিতে আদালতকে সলিসিটর জেনারেল বলেন অক্ষয় ঠাকুর ও পবন গুপ্তার পরিবার তাদের সঙ্গে ১০ মিনিটের জন্য দেখা করতে চায়। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। যেহেতু এই স্তরে সেই নিয়ম নেই।
২) সলিসিটর জেনারেল আরও বলেন, "এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা হবে। একটি শিশুর মনে এটি সারাজীবনের জন্য ক্ষত তৈরি করে দেবে।" ডিভিশন বেঞ্চ একথা মেনে নেয়। কিন্তু দেখা করার বিষয়টি সলিসিটর জেনারেলের সিদ্ধান্তের উপর ছাড়ে।
৩) এপি সিং তখন আবার আবেদন করেন। বলেন, অক্ষয় ঠাকুরের ৮ বছরের একটি সন্তান আছে। তাকে একবার দেখা করতে দেওয়া হোক। বেঞ আবারও স্পষ্ট জানায়, "বিষয়টি আমরা সলিসিটর জেনারেলের উপরই ছেড়েছি।"
৪) সলিসিটর জেনারেল বলেন, এটা কোনওভাবেই অনুমতি দেওয়া যায় না। কারণ এটা দু তরফের জন্য-ই বেদনাদাক। দোষীদের আইনজীবী খোয়াজা তখন বলেন, কোনটি বেশি বেদনাদায়ক সে বিষয়ে পরিবারকে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হোক। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হোক।
৫) আইনজীবী এপি সিং তখন বলেন, মাত্র ১০ মিনিটের জন্য দেখা করার অনুমতি দেওয়া হোক। সলিসিটর জেনারেল তখন বলেন, জেলের নিয়মাবলী অনুযায়ী অনুমতি থাকলে, কোনও সমস্যা নেই। বেঞ্চও সেই কথায় সায় দেয়। কিন্তু জেলের নিয়মাবলীতে দেখা যায়, এই স্তরে তার অনুমোদন নেই। ফলে খারিজ হয়ে যায় পরিবারের সঙ্গে দেখা করার আবেদন।
৬) এরপরই বিচারপতি আর ভানুমতী বলেন, রাষ্ট্রপতির খারিজ করে দেওয়া প্রাণভিক্ষার আবেদনের উপর সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনা করার এক্তিয়ার সীমিত। কারণ সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতারও সীমাবদ্ধতা আছে। আরও বলেন, জেলের ভিতর অত্যাচার করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ অপরাধী করেছে, তাতেও তাদের অপরাধ লঘু হয়ে যায় না।
আরও পড়ুন, ফাঁসির আগে সারারাত অদ্ভূত আচরণ নির্ভয়ার ৪ দোষীর,শেষ ইচ্ছেয় অঙ্গদান করতে চায় মুকেশ
একের পর এক খারিজ হয়ে যায় অপরাধীদের প্রাণভিক্ষার সমস্তরকম আবেদন। ঘণ্টাখানেকের এই শুনানি পর্ব চলাকালীন বারংবার আদালতের পর্যবেক্ষণ অপরাধীদের পৌঁছে দেওয়া হয়। শেষে সোয়া ৫টা নাগাদ তাদের সেল থেকে বের করে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ভোর সাড়ে ৫টায় দিল্লির তিহাড় জেলের ৩ নম্বর কক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয় ৪ অপরাধীকে।