নিজস্ব প্রতিবেদন: মুম্বইয়ের ধারাভিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রবীণের মৃত্যুর পর থেকেই ঘুম উড়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। সে দিনই সরকারি আধিকারিক কিরণ দিঘাভকর বুঝেছিলেন যে ধারাভিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তার ফল পেতে হবে গোটা মুম্বইকে। দেশের বাণিজ্যনগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা অচিরেই কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে কেবল এই একটি জায়গা থেকেই। ফলে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আগেই প্রতিটা মুহূর্ত যে বড় একটা চ্যালেঞ্জ, তা জানতেন কিরণ।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

চলতি মাসের শুরুতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৫৬ বছর বয়সী এক ধারাভিবাসীর। সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে ধারাভি সংলগ্ন ৪০০ স্কোয়্যার ফুটের ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। ফলে, সংক্রমণ ছড়ানোর প্রথম ধাপটাই সবচেয়ে চিন্তায় ফেলে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। আর ধারাভিতে একবার গোষ্ঠী সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) শুরু হলে তা রুখে দেওয়া এক কথায় অসম্ভব হবে।


কেন ধারাভিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে বাড়তি চিন্তিত সেখানকার পুরসভার অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার দিঘাভকর? তিনি জানান, এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল বসতি এলাকা ধারাভি। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ধারাভির কিছু সুলভ শৌচালয় দিনে ৮০ জনেরও বেশি ব্যক্তি ব্যবহার করেন। কারণ বেশিরভাগ বাড়িতেই নেই শৌচালয়ের ব্যবস্থা। আর তা থাকবেই বা কী করে! ধারাভির সরু সরু গলির দুই ধার ঘেঁষে গায়ে গায়ে অগুণতি ছোট ছোট ঘর। এক একটা ১০০, ২০০ স্কোয়্যার ফিটের ঘরে এক সঙ্গে বাস ৫-৬ জনের পরিবারের। রাস্তার ধারের কলগুলিই জলের উত্স প্রতিটা পরিবারের কাছে। ফলে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার হাতিয়ার এখানে প্রয়োগ করা এক কথায় অসম্ভব। যেখানে মানুষের বাড়িতে পানীয় জলের জোগান নিয়েই টানাটানি, সেখানে হাত ধোওয়ার কথা ভাবাটাই অলীক স্বপ্ন। দিঘাভকর জানান, গোদের উপর বিষফোঁড়া বেশিরভাগ পরিবারে সামান্য সচেতনতার অভাব। করোনাভাইরাসে মৃত প্রবীণের পরিবারের ৭ সদস্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে চূড়ান্ত অসহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।


আরও পড়ুন- বিজেপির ৪০ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে করোনা মুক্ত ভারতের ডাক দিলেন নমো!


দিঘাভকর ও তাঁর দলের সদস্যরা ওই প্রবীণের গত ১৫ দিনের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন খুঁজে বার করেন। কোথায় কোন কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা খুঁজে বার করে পুরসভা। তারপর তাঁদের প্রত্যেককে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রাথমিক লক্ষণ আছে এমন ব্যক্তিদের আইসোলেশনে রাখার ও নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের উপরেও শুরু হয় নজরদারি।


ক্রমশ দেশের করোনাভাইরাস এপিসেন্টার হয়ে দাঁড়াচ্ছে মুম্বই। করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ৩,৩৭৪টি কেসের মধ্যে তার ১০ শতাংশই মুম্বইয়ে ঘটেছে। ফলে ধারাভির সংখ্যাটা সময় থাকতে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।