সুদেষ্ণা পাল


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পড়াশোনা করতে চেয়েছিল বলে বাবা-মা কোনও সম্পর্ক রাখেনি। দিন আনি দিন খাই পরিবারে যেখানে দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাড় করতে কালঘাম ছুটে যায়, সেখানে পড়াশোনার 'বিলাসিতা'? সেদিন থেকেই বাবা-মা সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছিল। এদিকে মেয়েও নাছোড়বান্দা। হাড়ে সমস্যা, কিন্তু সে  নিয়েই হাড়ভাঙা পরিশ্রম। অবশেষে স্বপ্ন হাতের মুঠোয়। ৪২০তম স্থান পেয়ে, UPSC পরীক্ষায় সফল ২৮ বছরের উম্মাল খের।


বর্তমানে দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের PhD-র ছাত্রী উম্মাল। কিন্তু উম্মালের সাফল্যের এই রাস্তা ছিল অত্যন্ত কঠিন। আদতে রাজস্থানের বাসিন্দা উম্মালরা দিল্লি চলে আসে যখন তার বয়স ৫। বাবা পেশায় ফেরিওয়ালা। বরাপুল্লার কাছে এক বস্তিতে থাকতে শুরু করে উম্মালরা ৫ জন।


জিনগত ত্রুটির কারণে জন্ম থেকেই হাড়ের সমস্যার শিকার হতে হয় উম্মালকে। ১৬ বার ভেঙে যায় তার শরীরের হাড়। অপারেশন হয় মোট ৮ বার। এমনকি একটা সময় তাকে এক বছর হুইলচেয়ারে বন্দিও হয়ে যেতে হয়। কিন্তু স্বপপূরণের জেদ কখনও ছাড়েনি উম্মাল।


প্রতিবন্ধীদের স্কুল থেকে ক্লাস ফাইভ পাশ করার পরই বাড়ি থেকে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয়। ইতিমধ্যে বস্তি উচ্ছেদ হয়ে গেছে। নতুন জায়গায় উঠে যেতে হয় উম্মালদের। শুরু হয় উম্মালের একার লড়াই। বাড়ি ছেড়ে বস্তিতেই একা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে কিশোরী উম্মাল। নিজের পড়ার খরচ জোগাড় করতে শুরু করে বস্তির ছেলেমেয়েদের টিউশন পড়ানো, বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা।



এভাবেই চলতে থাকে উম্মালের লড়াই। প্রথমে স্কুল ফাইনাল। তারপর ৯০ শতাংশেরও বেশি নম্বর নিয়ে ক্লাস টুয়েলভ পাশ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গার্গী কলেজে ভর্তি হয় উম্মাল। কিন্তু ২০১২-তে ভয়াবহ কঠিন পরিস্থতির মুখোমুখি হতে হয় উম্মালকে। এক দুর্ঘটনায় গোটা এক বছর সে হুইলচেয়ারে বন্দি হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে চলতে থাকে লড়াই। সুস্থ হতেই ফের ঝাঁপিয়ে পড়ে লক্ষ্য সাধনের উদ্দেশে।


উম্মাল জানিয়েছেন, ছোট থেকেই 'পাবলিক সারভ্যান্ট' হয়ে মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। স্নাতক হওয়ার পর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ নিয়ে মাস্টার্স করতে জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন উম্মাল। সেখান থেকেই এম ফিলের পর বর্তমানে PhD পাঠরতা উম্মাল।


চরম দারিদ্র্য, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, বাবা-মায়ের অসহযোগিতা, কঠিন লড়াইকে সঙ্গী করে লক্ষ্যে অটল উম্মালের মুখে এখন সাফল্যের চওড়া হাসি। বাবা-মা চাননি মেয়ে 'শিক্ষিত' হোক। পাশে থাকেননি তাঁর। কিন্তু, মেয়ের কাছে আজ এসব কিছুই তুচ্ছ। অবহেলা নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। বরং, বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের দিনগুলিকে আনন্দে ভরিয়ে দিতে চায় IAS মেয়ে।


আরও পড়ুন, স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে ৪ স্কুল পড়ুয়ার সমাজ বদলের ভাবনা!