নিজস্ব প্রতিবেদন: দফায় দফায় মুলতবি। চরম হইহট্টগোলের জেরে শেষমেশ দিনের মতোই মুলতুবি হয়ে গেল রাজ্যসভা। অর্থাত্ এ বছরে আর তিন তালাক বিল পাস করাতে পারল না সরকার। পরবর্তী অধিবেশেন শুরু হবে আগামী ৩ জানুয়ারি।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

তিন তালাক বিল পাস করা নিয়ে সবার চোখ ছিল সংসদের উচ্চকক্ষের দিকে। লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিরোধীদের শত আপত্তি সত্ত্বেও অনয়াসে ওই বিল পাস করিয়ে নেয় সরকার। কিন্তু রাজ্যসভায় কার্যত ‘সংখ্যালঘু’ এনডিএ। তার উপর বৃহস্পতিবার দেখা গিয়েছে লোকসভায় বিল পাস করানোর সময় তাদের অন্যতম প্রাক্তন শরিক বিজেডি সমর্থন করেনি। ওয়াক আউট করেন আইডিএমকের সাংসদরাও। সে ঝড়ও রাজ্যসভায় আছড়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু তাদের ‘বজ্রআঁটুনি’ সিদ্ধান্তে অনড় অমিত শাহেরা। কোনওভাবেই যৌথ সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো যাবে না বিলটিকে।


আরও পড়ুন- নওগামে হত অনুপ্রবেশকারীদের একজন পাক কমান্ডো, দেহ নিয়ে যেতে বলবে সেনা


সকাল থেকেই কোমর বেঁধে নেমেছিলেন বিরোধীরাও। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদের ঘরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তাঁরা। সিদ্ধান্ত হয়, সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর জন্য প্রস্তাব করা হবে। সেই প্রস্তাব গৃহীত না হলে ভোটাভুটির পথে এগোবে বিরোধীরা। কিন্তু সে সুযোগ না দিয়েই দফায় দফায় মুলতুবি করা হয় অধিবেশন।



এ দিন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, এই কক্ষের ৯০ শতাংশ সাংসদ চাইছেন, বিলটিকে নিয়ে আরও আলোচনা করতে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক। কংগ্রেস কখনও বিলটির বিরোধিতা করছে না, ওই বিলের ত্রুটি নিয়ে আলোচনা চাইছে। বিরোধী দলনেতার আরও দাবি, তিন তালাক বিলটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, যা কোটি কোটি মানুষের জীবনে ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সেই বিলটিকে সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে না পাঠিয়ে পাস করানো যায় না। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, সব বিরোধী দল নির্বেশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর। এর আগে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, তিন তালাক বিল নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানিয়েছে দল।



এনডিএ-র প্রাক্তন শরিক বিজু জনতা দল এদিনও তিন তালাক বিল পাসের বিরোধিতা করে। বিজেডি নেতা প্রসন্ন আচার্য সংসদে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তা আমরা সমর্থন করছি। ওই বিল পাস হওয়া উচিত। কিন্তু বিলটি ত্রুটিপূর্ণ। সেটি সংশোধন করে যত দ্রুত সম্ভব পাস করানো উচিত। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি তিন তালাক বিল সম্পর্কে বলেন, বিজেপি যে বিল নিয়ে আসছে আমাদের পারিবারিক জীবনে আরও সমস্যা তৈরি করবে। অর্থনৈতিকভাবেও নারী-পুরুষের সমস্যা তৈরি হবে বলে জানান একদা বিজেপির সঙ্গে জোট করা পিডিপি-র সুপ্রিমো।


আরও পড়ুন- আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক জয়ের পর প্রথম শুভেচ্ছা মোদীর, ধন্যবাদ জানালেন হাসিনা  


তবে, সংসদীয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বিজয় গোয়েল বলেন, তিন তালাক আইন তৈরিতে দেরি করাচ্ছে কংগ্রেস। দেশের নাগরিকের জানা উচিত, কয়েক কোটি মুসলিম মহিলার ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত ওই বিলটির কীভাবে বিরোধিতা করছে কংগ্রেস। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, কয়েক হাজার মহিলার জীবন জড়িয়ে রয়েছে এই বিলটির মধ্যে। তাই, রাজনীতি করা উচিত নয়। বিশেষ কোনও সম্প্রদায়কে আঘাত করার জন্য বিলটি পাস করা হচ্ছে না।



বিলটির মধ্যে যে ৩ বছরের শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে, তার বিরোধিতা করছেন কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধীরা। তিন তালাকের মতো সামাজিক ইস্যুটিকে ফৌজদারি হিসাবে চিহ্নিত করায় আপত্তি জানায় বিরোধীরা। এই বিলটির মধ্যে স্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রেও স্পষ্ট নয়। সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাক ‘অবৈধ’ বললেও কোনও শাস্তি বিধানের কথা বলেনি। এর আগে লোকসভায় বিলটি পাস হলেও, উচ্চকক্ষে সংখ্যালঘু হওয়ায় বিরোধীদের আপত্তিতে আটকে যায়। অধ্যাদেশ এনে বৃহস্পতিবার ফের লোকসভায় বিলটিকে পাস করানো হয়।