জ্যোতির্ময় কর্মকার: মন ভাল নেই ‘মুকুলের বাড়ির’ লোকেদের। এই ‘মুকুলের বাড়ি’ আসলে জয়সলমেরের ‘সোনার কেল্লা।’ এ বারের নির্বাচনে ওই কেল্লার বাসিন্দারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রার্থী যে-ই হোক না কেন, কাউকেই ভোট দেবেন না তাঁরা। কেন?


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সোনার কেল্লার বাসিন্দাদের মোদ্দা কথা, চরম জাতপাতের রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বিজেপি-কংগ্রেস এক পথে হাঁটছে বলে অভিযোগ তাঁদের। সমস্যা নানাবিধ - কিন্তু তাঁদের কথা ভাবছে কে? শুধু বসুন্ধরা রাজে নন তাঁদের ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে মোদী সরকারের উপরেও। অভিযোগ, গত চার বছরে জাতপাতের রাজনীতি চরমে উঠেছে। সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত সোনার কেল্লার বাসিন্দারা।



একমাত্র ‘লিভিং ফোর্ট’ নামে পরিচিত জয়সলমেরের এই দুর্গে কিছু দিন কাটাতে প্রতি বছর ভিড় জমান কয়েক হাজার পর্যটক। আর এখানেই বাস করছে প্রায় ৩ হাজার রাজপুত পরিবার। কয়েকশো বছর ধরে। যার ফলে ঐতিহ্যশালী এই দুর্গের কৌলিন্যও হারাচ্ছে বলে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। ওই পরিবারদের উত্খাত করে কেল্লা সংরক্ষণ করতে চাইছে সরকার। সে নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের। এর সঙ্গে জমির পাট্টা সমস্যায় জেরবার তাঁরা। কেল্লার ভিতর জলের সঙ্কটও দীর্ঘদিনের। কিন্তু অভিযোগ, এ সব বিষয়ে মাথাব্যাথ্যা নেই রাজনৈতিক নেতাদের। জাতপাতকেই সামনে রেখে এবার ভোটে লড়ছে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দা ব্রিজ কে গোপার নেতৃত্বে কেল্লাবাসীরা একজোট হয়েছেন। তাঁদের এখন একটাই স্লোগান, “ভোট ফর নোটা।”


আরও পড়ুন- অশান্তির জের, স্যালাইনের মাধ্যমে স্ত্রীর শরীরে এইডসের জীবাণু ঢুকিয়ে দিলেন স্বামী!



উল্লেখ্য, এই কেল্লাকে ঘিরে একটি প্রথা রয়েছে জয়সলমেরের রাজনীতিতে। কেল্লার ভিতর রাজপরিবারের মূল মন্দিরে পুজো দিয়েই ভোটের প্রচার শুরু করেন সব দলের প্রার্থীরা। তাই পুজো দিতে মন্দিরে এক বার ঢুঁ মারতেই হচ্ছে নেতাদের। সে সময় ‘ভোট ফর নোটার’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।  কেল্লার আনাচ-কানাচ ঢেকে গিয়েছে এই পোস্টারে ।


আরও পড়ুন- ‘উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে হারের আশঙ্কায় সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে হাতিয়ার করেন মোদী’



তবে, প্রশ্ন উঠছে হঠাত্ জাতপাতের রাজনীতি নিয়ে এত সরব কেন স্থানীয়রা?


জাতপাত নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে কেল্লাবাসীদের একাংশের। জয়সলমের আসনটি অসংরক্ষিত হলেও তফসিলি সম্প্রদায়ের প্রার্থী সংঘসিং ভাটিকে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসেও একই পথে হেঁটেছে। তফসিলি সম্প্রদায়ের রূপারাম মেঘাওয়ালকে দাঁড় করানো হয়েছে। উচ্চবর্ণের কোনও প্রার্থী না দাঁড়ানোয় রাজপুত পরিবারের মধ্যে তৈরি হয়েছে চাপা ক্ষোভ। অন্য দিকে জয়সলমেরে তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি থাকায় ভোট ব্যাঙ্কে চিড় ধরাতে রাজি নয় কোনও দলই।


'মুকুল' কেকে পারেখ। নিজস্ব চিত্র 

‘সোনার কেল্লার’ কথা যখন উঠল পরিচালক সত্যজিত রায়-ই বাদ যান কেন? ‘মুকুলের বাড়ি’ দেখতে প্রতি বছর যে পর্যটকরা আসেন তাঁদের মুখে মুখে ফেরে সত্যজিতের নাম। এমনকি সেখানকার দোকানে ঢুঁ মারলেই দেখা যায় সত্যজিত্ রায়ের ফোটো। অমোঘ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পর্যটকরা। আর দোকানদার বলছেন, কীভাবে জয়সেলমের দুর্গ সোনার কেল্লায় পরিণত হল, তার গল্প। তেমনই কে কে পারেখ নামে এক জৈন বাঙালি শোনালেন সোনার কেল্লার এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা। কিশোর বয়সে মুর্শিদাবাদ থেকে চলে আসেন তিনি। এখানেই স্থানীয় হস্তশিল্পের একটি দোকান খোলেন। পারেখ বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সত্যজিত্ রায়ের সঙ্গে এক বার দেখা করার। তাঁর পুত্র সন্দীপ রায়-ও আমাকে নিয়ে ডকুমেন্ট্রি তৈরি করেছেন। এখানে আমি ‘মুকুল’ নামে বেশি পরিচিত। এই ‘মুকুলের’ কথাতেও উঠে এল  জাতপাতের রাজনীতি। সিনেমার মুকুলের মতো পারেখেরও আজ মনে হয়, এই সোনার কেল্লা যেন তাঁর বাড়ি নয়। মন হয়তো বলে ‘এটা আমার কেল্লা নয়, আমি বাড়ি যাবো, মুর্শিদাবাদে।’