নিজস্ব প্রতিবেদন: আরএসএস-এর গর্ভগৃহে তাদেরই মঞ্চে দাঁড়িয়ে 'মৌলবাদী' সঙ্ঘের মুখের সামনে আয়না তুলে ধরেছেন আদ্যন্ত কংগ্রেসি প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রণব বৃহস্পতিবার যে উপদেশ দিয়েছেন তা এবার থেকে মেনে চলুক রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ। তবে, কংগ্রেসের অর্ধ শতকের 'ক্রাইসিস ম্যানেজার' যে আলাপ আলোচনার উপদেশ দিয়েছেন, তার সঙ্গে সহমত নয় রাহুল গান্ধির দল। বৃহস্পতিবার নাগপুরে আরএসএস-এর 'তৃতীয় বর্ষ' সমাবর্তন মঞ্চে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণববাবুর বক্তৃতার পর এটাই কংগ্রেসের দলীয় অবস্থান এবং প্রতিক্রিয়া।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সঙ্ঘের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করার আমন্ত্রণ পেতেই তা গ্রহণ করেছিলেন প্রণববাবু। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই কংগ্রেসের অন্দরে একাংশ প্রণবের এই সিদ্ধান্তে হতবাক হয়ে পড়ে। এরপর যতই দিন গড়িয়েছে রাজনৈতিক জীবনের পঞ্চাশ বছর বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে দিক্ষীত কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী প্রণববাবুর এই সিদ্ধান্তে ক্রমশ সমালোচনার সুর চড়িয়েছে হাত শিবির। এরমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকজন কংগ্রেস নেতা আবার প্রণবকে নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করার অনুরোধও জানিয়েছেন। বাবার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন স্বয়ং প্রণবকন্যা শর্মিষ্ঠা। কিন্তু এসবও যখন কাজে আসেনি, তখন দলীয়ভাবে প্রণব বিরোধীতায় টুইটারে ও প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন কংগ্রেস নেতারা। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার শেষ বেলায় খোদ কংগ্রেসের 'ম্যাডাম' সোনিয়াই না কি কীর্ণাহারের এই ব্রাহ্মণ সন্তানের বিরুদ্ধে দলকে সরব হওয়ার বার্তা দেন। এরপরই বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ আরএসএস-এর মঞ্চে বক্তব্য রাখতে ওঠেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। সঙ্ঘের হবু প্রচারক ও শার্ষ পদাধিকারীদের সামনে ইতিহাস-রাজনীতি-দর্শণে সুপন্ডিত প্রণব তাঁর বক্তৃতায় সহাবস্থান, ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদ ও সহিষ্ণুতার পাঠ দেন। 'বসুধৈব কুটুম্বকম'-এর সুমহান ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বার্তাই শোনান প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রণবের এই বক্তৃতা শোনার পরই কার্যত ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে কংগ্রেসের। আরও পড়ুন- প্রণবের নামে প্রথম সারির নেতারা কে, কী বলল?


প্রণবের বক্তৃাতায় দৃশ্যতই স্বস্তিতে থাকা কংগ্রেস শিবির এরপরই গেরুয়া শিবিরকে বিঁধতে ময়দানে নামে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালার প্রশ্ন, প্রণববাবুর এই জ্ঞানগর্ভ বার্তা কি বিজেপি-আরএসএস গ্রহণ করতে প্রস্তুত? যদি তারা প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আস্থাশীল হয়, তাহলে কি এবার প্রকাশ্যে নিজেদের ভাবধারা ও মৌলবাদের আদর্শ থেকে সরে আসার কথা ঘোষণা করবে? আরও পড়ুন- আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতাকে 'ভারত মায়ের মহান সন্তান' আখ্যা প্রণবের


তবে, বহুত্ববাদে আস্থা রেখে সহাবস্থানের ক্ষেত্রে প্রণববাবু যে আলোচনার উপদেশ দিয়েছেন, তা গ্রহণ করছে না কংগ্রেস। সূর্যেওয়ালার সাফ জবাব, "আমরা ভিন্ন মতালম্বীদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক আবহে আলোচনার পক্ষে। কিন্তু, কেউ যদি খোলা মনে সেই আলাপ আলোচনায় অংশ নেয় ও নিজেদের বদলাতে আগ্রহী হয়, কেবল তখনই আলোচনা সম্ভব...তবে, এক্ষেত্রে কিছু মৌলিক সত্য রয়েছে। আরএসএস স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়নি এবং এই আন্দোলনকে মেকি আখ্যা দিয়েছিল। ওরা কখনও ভারতের বৈচিত্রে ভরসা রাখেনি। নাথুরাম গডসে তাদের খুবই ঘনিষ্ঠ।" ফলে, আরএসএস-এর সঙ্গে যে তারা আলাপ আলোচনায় বসতে আগ্রহী নয় তা স্পষ্ট।


সার্বিকভাবে প্রণবের বক্তৃতায় কংগ্রেসের জন্য অস্বস্তির উপাদান না থাকলেও, কেন তিনি আরএসএস-এর মঞ্চে উপস্থিতি হলেন, এই শোক থেকে এখনও মুক্তি পাচ্ছেনা একাংশের কংগ্রেস নেতারা। তবে, তাদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এমন বক্তৃতায় আরএসএস এতটুকু অস্বস্তি বোধ করছে না বলেই জানিয়েছেন সঙ্ঘ চালক মোহন ভাগবত। তাঁর দাবি, "প্রণববাবু, প্রণববাবুই থাকবেন। আর আরএসএস-ও আরএসএস-ই থাকবে"। সঙ্ঘ কেবল এক বিশিষ্ট ও বিচক্ষণ মানুষ হিসাবে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এদিন প্রণব নিজের অভিজ্ঞতা সকলের সামনে ভাগ করে নেওয়া সঙ্ঘের সেই উদ্দেশ্য সফল বলেই দাবি করা হয়েছে।