টাকার রক্তক্ষরণ অব্যাহত, প্রথমবার ডলারের নিরিখে ৭৪ স্পর্শ করল ভারতীয় মুদ্রা
আরবিআই ঋণনীতি ঘোষণার পরই বড়সড় পতন টাকায়। পড়ল শেয়ার বাজারও।
নিজস্ব প্রতিবেদন: কে আগে একশো ছুঁতে পারে? এ যেন পেট্রোল-ডিজেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে টাকা! ডলারের নিরিখের টাকার রক্তক্ষরণ অব্যাহত। শুক্রবার ঋণনীতি ঘোষণায় রেপো রেট ও রিভার্স রেপো রেট অপরিবর্তিত রাখে আরবিআই। দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের ঘোষণার পরই ডলার নিরিখে পড়তে থাকে টাকা। প্রথমবার প্রতি ডলারে টাকার দাম ৭৪ পার করল। টাকার অবমূল্যায়নের জের পড়েছে শেয়ার বাজারে। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ সূচক সেনসেক্স পড়েছে ৭৯২ অঙ্ক। গত ৬ মাসে সর্বনিম্ন ৩৪,৩৭৬.৯৯ টাকায় পৌঁছল সেনসেক্স। দিনের শেষে সূচক বন্ধ হয়েছে ৩৪,৩৭৬.৯৯ অঙ্কে। ২৮২.৮০ অঙ্ক পড়ে নিফটি থিতু হয়েছে ১০,৩১৬.৪৫ পয়েন্টে।
আর্থিক ঋণনীতি ঘোষণায় রেপো রেট ৬.৫০ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। রিভার্স রেটেও বদল ঘটেনি। তা রয়েছে ৬.২৫ শতাংশেই। বৃহস্পতিবার ডলার নিরিখে ৭৩.৫৮ টাকায় বন্ধ হয়েছিল ভারতীয় মুদ্রা। শুক্রবার আরবিআইয়ের এমন ঘোষণার পর উত্সাহ হারায় শিল্পমহল। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে ডলার-টাকার বিনিময় মূল্যে। ০.৭ শতাংশ পতন বাবা ৫৫ পয়সা পড়ে টাকা। ডলারের নিরিখে টাকার দাম দাঁড়ায় ৭৪.২৩। সত্তরের ঘর পার করার পর এবার ৭৪-এ ঢুকে পড়ল ভারতীয় বিনিময়মুদ্রা।
টাকার অবমূ্ল্যায়নের জেরে পেট্রোল ও ডিজেলের দামের উপরে সরাসরি প্রভাব পড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারে কিনতে হয় অপরিশোধিত তেল। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে তেল বিপণন সংস্থাগুলিকে। আর এই অতিরিক্ত অর্থে তারা তুলবে গ্রাহকদের পকেট থেকে। বৃহস্পতিবারই শুল্ক কমিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পেট্রোল ও ডিজেলের দাম কমেছে ২.৫০ টাকা। তবে এভাবে ডলার নিরিখে টাকার দাম পড়তে থাকলে ফের বাড়তে পারে জ্বালানির দর।
টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাব পড়বে বিদেশি বিনিয়োগের উপরেও। দেশে বিনিয়োগ করা অর্থ তুলেও নিতে পারেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে টাকার রক্তক্ষরণ থামানো সম্ভব নয়। ৭৫টাকা প্রতি ডলারেও পৌঁছতে পারে ভারতীয় মুদ্রা। অনেকের আবার আশঙ্কা, ৮০ টাকার স্তরও পেরিয়ে যেতে পারে।এদিনই আরবিআই নিজের নীতিতে উল্লেখ করেছে, উত্পাদন খরচ বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের খরচ। এর জেরে তৈরি হয়েছে মূল্যবৃদ্ধির শঙ্কা। টাকা অবমূল্যায়নে এবার বিদেশি কাঁচামালের খরচও বেড়ে গিয়েছে।
সবমিলিয়ে আগামিদিনে গভীর সংকটে পড়তে চলেছে দেশের অর্থনীতি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে টাকার অবমূল্যায়ন রোখাই বড়সড় চ্যালেঞ্জ।