নিজস্ব প্রতিবেদন : পাকিস্তানের মাটিতে কুলভূষণ যাধবের মা ও স্ত্রীর হেনস্থা তাঁকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ৯ বছর আগেকার স্মৃতি। লাহোর জেলে বন্দি ভাই সর্বজিতের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ঠিক একইরকমভাবে হেনস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে ও সরবজিতের স্ত্রীকে। চূড়ান্ত অপমান করা হয়েছিল তাঁদের। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানালেন সরবজিতের দিদি দলবীর কউর।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

২০০৮ সালে লাহোর জেলে বন্দি সরবজিতের সঙ্গে দেখা করতে যান দিদি দলবীর কউর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সরবজিতের স্ত্রী সুখপ্রীত কউর ও দুই মেয়ে স্বপনদীপ ও পুনম। দলবীর জানিয়েছেন, যেভাবে কুলভূষণের মা ও স্ত্রীর গলা থেকে পাকিস্তান মঙ্গলসূত্র ও কপালের টিপ খুলে নেয়, ঠিক একইরকমভাবে সুখপ্রীতের কপাল থেকেও সেদিন সিঁদুর মুছে দেওয়া হয়েছিল। 'বিধবার বেশে' স্বামী সরবজিতের সঙ্গে দেখা করেছিলেন সুখপ্রীত।


দলবীর কউর জানিয়েছেন, পাকিস্তানে পৌঁছেই তাঁদের চূড়ান্ত হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছিল। পাকিস্তান পুলিসের এক মহিলা কনস্টেবল রুমাল দিয়ে সুখপ্রীতের কপাল থেকে সিঁদুর মুছে দেয়। এরপর তাঁকে ও সুখপ্রীতকে চুল থেকে হেয়ারপিন খুলে ফেলতে বলা হয়। দুর্ব্যবহার করা হয় সরবজিতের দুই কিশোরী কন্যার সঙ্গেও। তিনি এর প্রতিবাদ করলে তাঁদের সঙ্গে আরও অসভ্যতা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন দলবীর কউর। জানিয়েছেন, কুলভূষণের মা ও স্ত্রীর গলা থেকে মঙ্গলসূত্র খুলে নেওয়ার মতই তাঁর ও সুখপ্রীতের হাত থেকে খুলে নেওয়া হয়েছিল 'কড়া' (ব্রেসলেট)।


আরও পড়ুন, ভারতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে পাকিস্তান, কুলভূষণ ইস্যুতে তোপ সুষমার


এখানেই শেষ নয়। পাক জেলে বন্দি সরবজিতের সঙ্গে দেখা করার সময় তাঁদের জন্য অপেক্ষা করেছিল আরও অত্যাচার। সর্বজিতের খুব পছন্দের একটি খাবার ছিল 'ভরওয়ান করেলা'। বাড়ি থেকেই তা রান্না করে সর্বজিতের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর দিদি ও স্ত্রী। দলবীর কউর জানিয়েছেন, লাহোর জেল কর্তৃপক্ষ পাত্র খুলেই সেই খাবার প্রথমে তাদের মুখে ঠুসে দেন। ওই খাবারে যে কোনও 'বিষাক্ত কিছু' নেই, খেয়ে তা প্রমাণ দিতে বলা হয় তাঁদের।  


জেলে সরবজিতের সঙ্গে দেখা করার আগে লাহোরের একটি গুরুদ্বারে গিয়েছিলেন দলবীর ও সুখপ্রীত কউর। দলবীর জানিয়েছেন, সেখানে তাঁদের কাছ থেকে পাসপোর্টগুলি নিয়ে রেখে দেওয়া হয়। পরে সেই পাসপোর্ট নিয়েও তাঁদের হেনস্থা করে পাক কর্তৃপক্ষ। ২০১১ সালে আরও একবার জেলে গিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেয়েছিলেন দলবীর কউর। জানান, সেইসময় জোর করে তাঁর কাছ থেকে 'কৃপাণ' কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। বারংবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও দলবীর কউরের ধর্মীয় ভাবাবেগকে সম্মান জানায়নি পাক কর্তৃপক্ষ।


কুলভূষণ যাধবের মতই সন্ত্রাস ও চরবৃত্তির অভিযোগে সর্বজিতকেও বন্দি করেছিল পাকিস্তান। ১৯৯১ সালে সরবজিতকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় পাক আদালত। বেশ কয়েকবছর টানাপোড়েনের পর ২০০৮ সালে সরবজিতের মৃত্যুদণ্ডাদেশের উপর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করে পাক সরকার। এরপর ২০১৩ সালে লাহোর জেলের ভিতরেই বন্দিদের হাতে আক্রান্ত হন সরবজিত।


আরও পড়ুন,  সাক্ষাতেও 'অমানবিকতা'র দেওয়াল তুলল পাকিস্তান


দলবীর কউর বলেন, সেইসময় তিনি, সুখপ্রীত কউর ও সরবজিতের দুই মেয়ে আবার লাহোর গিয়েছিলেন অসুস্থ সর্বজিতকে দেখতে। কিন্তু তখন আর সর্বজিতের ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি তাঁদের। দূর থেকে মাত্র একঝলকের জন্য তাঁরা সরবজিতকে দেখতে পান। পরে হাসপাতালেই সরবজিতের মৃত্যু হয়।


২০০৮ থেকে ২০১৭, মাঝে ৯ বছর কেটে গেলেও পাকিস্তানের অমানবিক ও অভব্য আচরণে কোনও ফারাক ঘটেনি। ইতিমধ্যেই কুলভূষণের পরিবারের সঙ্গে পাক প্রশাসনের দুর্ব্যবহার নিয়ে সরব হয়েছে ভারতের সংসদ। এদিন সরবজিতের পরিবারেরও অনুরূপ অভিজ্ঞতা সামনে আসায় পাকিস্তানের প্রতি কূটনৈতিক চাপে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হল বলে মনে করা হচ্ছে।