দিল্লি: "সীতারাম ইয়েচুরিজির এখানে অনুপস্থিতি কেবল বিরোধীদের ক্ষতি নয়, গোটা সদনের লোকসান", রাজ্যসভায় ইয়েচুরির বিদায়ী সংবর্ধনায় এই কথাই বললেন বর্ষীয়ান নেতা তথা সংসদের উচ্চকক্ষে কংগ্রেসের প্রধান মুখ গুলাম নবি আজাদ। "এখানে অনেকেই এসেছেন যারা কেবল কোনও একটি দলের প্রতিনিধিত্ব করেনি। প্রত্যেক দশকেই এমন নেতার জন্ম দিয়েছে এই রাজসদন, যারা কেবল দলের নেতা নন, দেশের সম্পদও বটে। সীতারাম ইয়েচুরি তাঁদের মধ্যে একজন", রাজ্যসভায় এভাবেই সীতারাম ইয়েচুরিকে সম্মানিত করলেন তাঁরই সতীর্থ সাংসদ গুলাম নবি আজাদ।    


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সীতারাম ইয়েচুরির নিজের দল এবং আদর্শের প্রতি নিষ্ঠার প্রশংসা করে গুলাম নবি আজাদ বলেন, "সমাজতন্ত্রের হাত, সাম্যবাদের হাত আপনি কখনও ছাড়েননি। এখানে অনেকেই আছেন যারা ডুবুরির মত এক জায়গায় ডুবেছেন অন্য কোথাও উঠেছেন, আবার অন্য কোথাও ডুবে এখানে উঠেছেন। কিন্তু আপনি কখনও আপনার দল আর আপনার মতাদর্শের সঙ্গ ত্যাগ করেননি। এত কম বয়সে যেভাবে আপনি আপনার দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যে উচ্চতায় আপনি পৌঁছেছেন তার জন্য আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন"। 


রাজ্যসভায় সীতারাম ইয়েচুরির বিদায়ী সংবর্ধনায় আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়তে দেখা যায় সমাজবাদী পার্টির সাংসদ তথা অধ্যাপক রামগোপাল যাদবকেও। "আপনার অনুপস্থিতি সবসময় আমাকে ব্যাথিত করবে। আমি মিস করব আপনাকে", একথা বলতে বলতেই সংসদে কেঁদে ফেলেন সীতারামের 'বন্ধু' সাংসদ রামগোপাল। এখানেই শেষ নয়, আরও একধাপ এগিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি যেন আবার সংসদে ফিরতে পারনে, সেই আশা রেখে সিপিএমের সংবিধান বদলের কথাও জানান রামগোপাল যাদব। "ভারতের সংবিধান সংশোধিত হতে পারলে, কেন আপনার দলের সংবিধান সংশোধিত হবে না। আপনি এখন আপনার দলের মহাসচিব। আপনাকে অনুরোধ, আপনি দলের সংবিধান সংশোধন করুন", সীতারাম ইয়েচুরির কাছে অনুরোধ জানিয়ে এই কথাই বলেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ অধ্যাপক  রামগোপাল যাদব।    
 
উল্লেখ্য, দলের সংবিধান অনুযায়ী সীতারাম ইয়েচুরি আর কোনওভাবেই রাজ্যসভায় সাংসদ হতে পারবেন না, একথা আগেই জানিয়ে দেয় সিপিএমের পলিটব্যুরো। এরপরও রাজ্য এবং দেশের রাজনীতির 'দাবি' অনুযায়ী তাঁকে তৃতীয়বারের জন্য সাংসদ করার জন্য চেষ্টা করে বেঙ্গল এবং ত্রিপুরা সিপিএম। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। ভোটাভুটিতে কেরলের কাছে হারে বেঙ্গল সহ ত্রিপুরার 'পার্টি লাইন'। এরপরই রাজ্যসভা থেকে সীতারাম ইয়েচুরির বিদায়ে পাকাপোক্ত সিলমোহর পরে যায়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সীতারামকে পুনঃরায় সাংসদে না পাঠানোর সিদ্ধান্তকে সিপিএমের আরও এক 'ঐতিহাসিক ভুল' হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও, ইয়েচুরি এবিষয়ে একটা লাইনেই দাঁড়িয়ে, "দল যা বলবে, সেটাই করব"। আর সেই মতই দলের 'অনুগত সৈনিক' রাজ্যসভায় নিজের শেষ বক্তব্যেও দলের প্রতি এবং রাজ্যসভার প্রত্যেক সাংসদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেলন। যেখানে গোটা সংসদ তাঁর বিদায়ী সংবর্ধনায় আবেগতাড়িত, সীতারাম তখন তাঁর বক্তব্যে নথিভুক্ত করছেন স্বাধীনতার কথা, শ্রমিকের অধিকারের কথা। "ইয়ে আজাদি আজাদি কেয়া, মজদুর কা জিসমে রাজ না হো" (সেই স্বাধীনতার কোনও মূল্য নেই যেখানে শ্রমিকের কোনও রাজত্ব নেই), এই আজাদির জন্যই লড়ে এসেছি, আগামী দিনেও লড়ব, রাজ্যসভায় শেষ বক্তব্যে বললেন ইয়েচুরি। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি শেষ করলেন, "হায়াত লেকে চলো/কায়নাত লেকে চলো/চলো তো সারে জামানে কো সাথ লে কর চলো", এই বলে।