তলোয়ার দম্পতির মুক্তি-কে চ্যালেঞ্জ, আরুশি হত্যাকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে গৃহীত সিবিআই-এর আবেদন
সিবিআই-এর দাবি, গাজিয়াবাদ ট্রায়াল কোর্ট এই মামলাটি প্রথম থেকে গভীরভাবে বিচার করেছে। কিন্তু, এলাহাবাদ হাইকোর্ট সেই বিচারকে সে ভাবে গুরুত্ব দেয়নি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: আরুশি হত্যাকাণ্ডে রাজেশ ও নুপুর তলোয়ারকে বেকসুর খালাসের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা সিবিআই-এর আবেদন গ্রহণ করল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৭ সালের অক্টোবরে আরুশি ও হেমরাজকে হত্যার মামলা থেকে প্রমাণের অভাবে আরুশির বাবা-মা অর্থাত্ রাজেশ ও নুপুর তলোয়ারকে বেকসুর মুক্তি দেয় এলাবাদ হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চলতি বছর মার্চেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি। শুক্রবার সেই আবেদন গ্রহণ করল সুপ্রিম কোর্ট।
২০০৮ সালে ঘটা আরুশি হত্যাকাণ্ডে গাজিয়াবাদের সিবিআই আদালত তলোয়ার দম্পতিকে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। এই মামলায় চূড়ান্ত রায় দানের আগে সিবিআই ক্লোজার রিপোর্ট দিয়ে আদালতকে জানায়, প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় ও অপর্যাপ্ত প্রমাণের কারণে তাদের পক্ষে খুনের অভিযোগ রুজু করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু, সিবিআই-এর সেই ক্লোজার রিপোর্ট খারিজ করে দিয়ে আদালত জানিয়ে দেয়, এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে যার দ্বারা আরুশির বাবা-মাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়। এরপরই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেয় গাজিয়াবাদের সিবিআই আদালত।
সিবিআই আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন পেশায় চিকিত্সক তলোয়ার দম্পতি। সেই মামলার রায় যায় তলোয়ার দম্পতির পক্ষে। ৯ বছর (২০০৮ থেকে) কারাবাসের পর ১২ অক্টোবর'২০১৭ মুক্তি পান রাজেশ ও নুপুর তলোয়ার। এরপরই এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে সিবিআই। জানা যাচ্ছে, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল পি নরসিমা-র সমর্থন পেয়ে এই আবেদন করেছে সিবিআই। তাদের দাবি, গাজিয়াবাদ ট্রায়াল কোর্ট এই মামলাটি প্রথম থেকে গভীরভাবে বিচার করেছে। কিন্তু, এলাহাবাদ হাইকোর্ট সেই বিচারকে সে ভাবে গুরুত্ব দেয়নি। তাদের আরও দাবি, এই ধরনের মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া না যাওয়ায় অন্যান্য তথ্য প্রমাণের উপরই ভিত্তি করতে হয়। কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্ট তা করেনি। খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই আরুশির বাবা-মায়ের আচরণ এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি সিবিআই-এর। কিন্তু, হাইকোর্ট সেইসব বিষয়ে আমল দেয়নি।
২০০৮ সালের ১৫-১৬ মে-র মধ্যে নয়ডা নিবাসী দন্ত চিকিত্সক দম্পতি ডাঃ রাজেশ ও নুপুর তলোয়ারের একমাত্র মেয়ে আরুশি (১৩ বছর) ও পরিচারক হেমরাজ (৪৫ বছর)-এর মৃত দেহ উদ্ধার হয়। আরুশির মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পরদিন অর্ধেক পচন ধরা অবস্থায় হেমরাজের দেহও খুঁজে পাওয়া যায় তলোয়ারদেরই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে। পুলিসের অনুমান, আরুশি ও হেমরাজকে আপত্তিজনক অবস্থায় দেখে ফেলার পরই মেয়ে ও পরিচারককে হত্যা করে বাবা-মা। অথবা, ডাঃ রাজেশ তলোয়ারের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পেরে গিয়েছিলেন হেমরাজ। সে কথা তিনি আরুশিকে জানানোর ফলেই তাঁদের দুজনকে মরতে হয় বলে অনুমান পুলিসের।
ঘটনা সামনে আসার মুহূর্ত থেকেই ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রবল আলোড়ন ফেলে এই ঘটনা। ৯ বছর ধরে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরতে পরতেও থেকেছে টান টান উত্তেজনা। গত বছর অক্টোবরে তলোয়ার দম্পতি মুক্তি পাওয়ার পর এই উত্তেজনায় সাময়িক ছেদ পড়েছিল। কিন্তু, সিবিআই এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করায় ফের আলোচনার কেন্দ্রে চলে এল আরুশি হত্যা মামলা। আরও পড়ুন- রাজ্যসভায় সংশোধিত তিন তালাক বিল পেশের সম্ভবনা