কেবল তিন তালাক নিষিদ্ধ করলেই চলবে না, দাবি মুসলিম সত্যশোধক মণ্ডলের
`আমাদের দাবিদাওয়া যতদিন না মিটছে, লড়াই চলবে। সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে আমরা স্পষ্ট করেছি, তিন তালাক নিষিদ্ধ করেই থামলে চলবে না। সরকারের উচিত তালাকের মতোই হালালা-সহ অন্যান্য অমনাবিক প্রথাগুলিকেও নিষিদ্ধ করতে হবে।`
নিজস্ব প্রতিবেদন: বিজেপি নয়, তাৎক্ষণিক তিন তালাককে নিষিদ্ধ করার পিছনে 'আসল লড়াই' লড়েছে মুসলিম সত্যশোধক মণ্ডল। মুসলিম নারীর ক্ষমতায়নের লড়াই লড়েননি নরেন্দ্র মোদী। সেই লড়ায়ের ময়দানে আমৃত্যু থেকেছেন মহারাষ্ট্রের লড়াকু নেতা হামিদ দালওয়াই। তাই তিন তালাক রধ 'গেরুয়া ধ্বজাকে যতই উজ্জ্বল করুক', নেপথ্য নায়ক হিসেবে কিন্তু চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে মুসলিম সত্যশোধক মণ্ডল এবং 'সংস্কারের পথিকৃৎ' হামিদ দালওয়াই, এমনটাই দাবি। লোকসভায় 'ঐতিহাসিক' তিন তালাক বিল পাস করিয়ে যখন কৃতিত্ব দাবি করছে গেরুয়া শিবির, ঠিক সেই সময়েই ভিন্ন স্বর উঠে এল মুসলিম সত্যশোধক মণ্ডলের পক্ষ থেকে।
কে এই হামিদ দালওয়াই?
ভারতে তিন তালাক প্রথা নিষিদ্ধ করার জন্য প্রথম সরব হয়েছিলেন হামিদ দালওয়াই। রাম মনোহর লোহিয়া, জয়প্রকাশ নারায়ণ, মহত্মা গান্ধীর অনুগামী মহারাষ্ট্রের হামিদ দালওয়াই ১৯৬৬ সালে একটি পদযাত্রার আয়োজন করেছিলেন। ওই পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন ৭ জন প্রতিবাদী মুসলিম মহিলা। তাঁদের মূল দাবিই ছিল বহুবিবাহ বন্ধ করা। ভারতের স্বাধীনতার পরে সেটিই ছিল মুসলিমদের মধ্যে চলা নানা রীতিনীতি সংস্কারে 'প্রথম পদক্ষেপ'।
মুসলিম মহিলাদের ন্যায়বিচারে কথা তুলে ধরতে ১৯৭০ সালে মুসলিম সত্যশোধক মণ্ডল তৈরি করেন হামিদ দালওয়াই। ১৯ শতকে বিপ্লবী মহত্মা জ্যোতিরাও ফুলে যে সত্যশোধক সমাজ গঠন করেছিলেন, তা থেকে অনুপ্রানিত হয়েই মুসলিম সত্যশোধক মণ্ডল তৈরি করেন দালওয়াই। ১৯৭৭ সালে হামিদ দালওয়াইয়ের মৃত্যুর পর 'মুসলিম নবজাগরণের কন্ঠ' কিছুটা ক্ষীণ হলেও বর্তমানে সামসুদ্দিন তাম্বোলির নেতৃত্বে ফের এককাট্টা হচ্ছে সত্যশোধক মণ্ডল।
মুসলিম সত্যশোধক মণ্ডলের লক্ষ্য:
-মুসলিম মহিলাদের ক্ষমতায়ন
- মুসলিম পার্সোনাল ল'র সংস্কার
- সার্বিক শিক্ষার অগ্রগতি এবং ঘরে ঘরে আধুনিক ও প্রগতিশীল শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া
- জাতির সার্বিক সংস্কার এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিস্তার
- জাতিভেদ দূরীকরণ
- পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং পরিবেশ চেতনার বৃদ্ধি করা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা
বিল পাশ করিয়ে আইন নিয়ে আসতে চলেছে মোদী সরকার, নিষিদ্ধ হতে চলেছে তাত্ক্ষণিক তিন তালাক প্রথা। এর আগেই সুপ্রিম রায়ে অসংবিধানিক তকমা পেয়েছে তাত্ক্ষণিক তিন তালাক। এবার আইন বলবত্ হলে তাত্ক্ষণিক তিন তালাক দিলে শাস্তিও পেতে হবে। হামিদ দালওয়াইয়ের অভিযোগ, তাৎক্ষণিক তালাক নিয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানে গেরুয়া শিবির 'রাজনৈতিক ফয়দা' তুলতে সচেষ্ট হলেও, মুসলিম সত্যশোধক মণ্ডল মনে করছে মুসলিম সমাজের নবজাগরণ এখনও বহুদূরের পথ।
আরও পড়ুন- নিষিদ্ধ হতে চলেছে তাত্ক্ষণিক তালাক
বহুবিবাহের মত প্রাচীন প্রথা বন্ধ না করে তালাক-কে সমূলে উৎখাত করা কার্যত অসম্ভব, একথা বহু আগেই বলেছেন হামিদ দালওয়াই। মুসলিম সত্যশোধক মণ্ডলের দাবি, সরকার এই বিষয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করুক এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আর মুসলিম সত্যশোধক মণ্ডলের এই নীতির সঙ্গে সহমত হয়েছে ভারতের অন্যান্য অনগ্রসর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও।
আরও পড়ুন- ঠেলার নাম বাবাজি! তিন তালাক দেওয়া স্ত্রীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের বিয়ের সিদ্ধান্ত স্বামীর
দালওয়াইয়ের মতবাদকে সমর্থন করে সমাজতান্ত্রিক নেতা ভাই বৈদ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া-কে বলেন, "আমাদের দাবিদাওয়া যতদিন না মিটছে, লড়াই চলবে। সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে আমরা স্পষ্ট করেছি, তিন তালাক নিষিদ্ধ করেই থামলে চলবে না। সরকারের উচিত তালাকের মতোই হালালা-সহ অন্যান্য অমনাবিক প্রথাগুলিকেও নিষিদ্ধ করা।" একই সঙ্গে আরএসএস-কে সরাসরি নিন্দা করে বৈদ্য বলেন,"আরএসএস কখনও মুসলিম জীবনের সংস্কারের কথা বলেনি, উল্টে এই সম্প্রদায়কে তারা শত্রুর চোখেই দেখে এসেছে। দালওয়াই বরাবরই বলে এসছেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া উচিত।"