Rash Behari Bose: শুধু বিপ্লবী হিসেবেই নন, জাপানে রাসবিহারী খ্যাত Indian Curry-র জন্যও!
এ বছর স্বাধীনতা দিবস ৭৫ বছরে পা দিচ্ছে। সাড়ে সাত দশকের স্বাধীনতা-যাপনে দেশবাসীর স্বপ্নপূরণ ও স্বপ্নভঙ্গের নানা ইতিহাস রচিত হয়েছে। কিন্তু সেই `ইতিহাসে`র পথ যাঁরা তৈরি করে দিলেন তাঁদের কীভাবে, কতটা মনে রেখেছে দেশ? প্রায় অনালোচিত বা স্বল্পালোচিত কয়েকজন ব্যক্তিত্বকে ফিরে দেখল Zee 24 Ghanta Digital
সৌমিত্র সেন
বিপ্লবী রাসবিহারী জাপানে এক বহুমান্য ব্যক্তিত্ব। কিন্তু জানলে ভাল লাগবে, জাপানে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক কারণের জন্যও স্মরণীয় হয়ে আছেন এই মানুষটি। তিনিই জাপানে প্রথম কোনও ভারতীয় রান্নার প্রচলন ঘটিয়েছিলেন। এমন পদ, যা আজও টোকিয়োর জনপ্রিয় রেস্তোরাঁগুলিতে তৈরি করা হয়।
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের 'প্রথম বোস' রাসবিহারী বসু। 'দ্বিতীয় বোস' সুভাষচন্দ্রের হাতে দায়িত্বভার অর্পণ করার আগে পর্যন্ত জাপানে, বিশেষত টোকিয়োতে রাসবিহারীই ছিলেন এক অবিসংবাদী ভারতীয় স্বাধীনতাযোদ্ধা। সেখানে তাঁর বিপুল কর্মভার। প্রচুর দায়িত্ব। বিশাল স্বীকৃতি। অসম্ভব জনপ্রিয়তাও। সব মিলিয়েই রাসবিহারী ছিলেন এক অকুতোভয় চরিত্র। দুর্জয় সাহস ও সঙ্কল্পের মিশেলে এক 'ফায়ারি ক্যারাক্টার'! শোনা যায়, অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের 'পথের দাবী' উপন্যাসের প্রধান চরিত্রটি তাঁর আদলেই রচিত।
আরও পড়ুন: Vinoba Bhave: ১৯৪০ সালে তাঁকে দিয়েই অহিংস আন্দোলনের প্রচার শুরু করান গান্ধীজি
১৮৮৬ সালের ২৫ মে জন্ম রাসবিহারীর। জীবনের প্রথম দিকেই তরুণ রাসবিহারী নানা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আলিপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে অভিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে তিনি দেরাদুনে যান। সেখানে চাকরি নেন। কিন্তু গোপনে বাংলা, উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেন। দিল্লিতে গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর বোমা হামলায় নেতৃত্বদানের কারণে পুলিস তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে। তিনি কৌশলে ব্রিটিশ গোয়েন্দার নজর এড়ান। একবছর চন্দননগরে আত্মগোপন করে থাকেন। ১৯১৫ সালের ১২ মে খিদিরপুর থেকে জাপানি জাহাজ 'সানুকি-মারু'তে চেপে ভারতত্যাগ করেন। তবে তার আগে রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়, রাজা প্রিয়নাথ ঠাকুর (P N Tagore) ছদ্মনামে পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। জাপানে পৌঁছে পুরোদমে জাতীয়তাবাদী কাজকর্ম শুরু করে দেন। সিঙ্গাপুরে 'ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি' গঠন করেন, যা পরে 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' নামে পরিচিত হয়।
ভারতে ব্রিটিশ সরকার তখন রাসবিহারীকে নিয়ে এতই শঙ্কিত যে, তাঁকে ধরার জন্য তখনও গোয়েন্দা নিয়োগ করে চলেছে। অবশেষে জাপানে রাসবিহারীর খোঁজ মেলে। কিন্তু ততদিনে সেখানে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির আশ্রয় লাভ করেছেন রাসবিহারী। ফলে জাপান পুলিস তাঁর গায়ে আঁচড়টি কাটতে পারে না। পরে জাপানের সোমা ফ্যামিলিতে আশ্রয় পান রাসবিহারী। এই পরিবারটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি তীব্র ভাবে সহানুভূতিশীল ছিল। তারা রাসবিহারীকে তাদের বাড়ির বেসমেন্টে আত্মগোপন করে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। ধীরে ধীরে পরিবারটির সঙ্গে স্নেহ-মমতা-ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে পড়েন বিপ্লবী। এই পরিবারেরই এক কন্যাকে তিনি বিয়েও করেন। শোনা যায়, এই সময়-পর্বেই রাসবিহারী তাঁর প্রিয় এক ভারতীয় পদ এঁদের রেঁধে খাওয়ান। অচিরেই রাসবিহারীর এই পদ পরিবারটি ভালবেসে ফেলে। ব্যস! ধীরে ধীরে জাপানে কিছু কিছু পরিবারে 'রাসবিহারী কারি' বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আজ সেখানে খাদ্যরসিকদের কাছে সর্বজনপরিচিত জনপ্রিয় এই 'আইটেম'। তা শহরের বিখ্যাত রেস্তোরাঁগুলিতে মেলে।
১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারি সংগঠক, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ অকুতোভয় এই স্বাধীনতা আন্দোলনকারীর মৃত্যু ঘটে। তবে আজও জাপানে তাঁর নাম এবং তাঁর নামাঙ্কিত 'কারি' সেদেশে নীরবে ভারতীয় ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)
আরও পড়ুন: Sarojini Naidu: দেশের কাজের বিপুল চাপেও তাঁর হাতে ধরা থাকত কবিতার জাদুবাঁশি