নিজস্ব প্রতিবেদন: বীরেন্দ্র সহবাগ তখন প্রতিদিনই মাতিয়ে দিচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটের আসর। তাঁর অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলিও তাঁকে খুব পছন্দ করেন। একবার একটি ম্যাচে সহবাগ দারুণ খেলেছেন। প্রেস মিটে সৌরভকে তা নিয়ে জিগ্যেস করা হলে তিনি সহাস্যে বলেন, বীরু কত দুধ খায় জানেন? মানে, মজা করে সৌরভ বলতে চেয়েছিলেন, যে অত দুধ খায় তার তো দারুণ এনার্জি! সে তো খেলবেই!


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে দুধ আসলে অঙ্গাঙ্গি। রুরাল এরিয়া থেকে দুধ  সংগ্রহ করে তা কীভাবে তা শহর-নগরে ছড়িয়ে দিতে হবে তার একটা বিজ্ঞানভিত্তিক রূপরেখা তৈরি করাও আধুনিক দুধ-ব্যবসার বড় দিক। আশ্চর্যের হল, গ্রাম্য এলাকা দুধ এনে নগরে তাকে কাজে লাগানোর নজির রয়েছে মহাভারতেই! কংসরাজা যখন মথুরায় মল্লযুদ্ধের আসরে কৃষ্ণ-বলরামকে আহ্বান জানালেন তখন তিনি নন্দরাজ ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, মল্লযুদ্ধের আসরে প্রচুর দুধ-দই-ক্ষীর-ছানা লাগবে, ফলে নন্দগাঁও থেকে যেন সেসব সরবরাহ করা হয়। ভাবা যায় না! সেই কতকাল আগে দুধ রফতানি, দুধবিপণনের ছবি! 


অথচ, কী আশ্চর্য, ভারতের দুধ-সংস্কৃতি অত্যন্ত প্রাচীন হলেও এই সেদিন পর্যন্ত দুধের জন্য কোনও উদযাপন-দিন ছিল না এ দেশে! দুধের জন্য ভারতে একটি 'দিবস' নির্দিষ্ট করা হল মাত্র ২০১৪ সালে, আজকের দিনে। ২৬ নভেম্বর এ দেশে পালিত হতে শুরু হল 'জাতীয় দুগ্ধ দিবস' হিসেবে।


১৯৭০ সালের ভারতে 'সাদা বিপ্লব' ঘটে। দুধের উৎপাদন-বিপণন ইত্যাদি নিয়ে ঘটানো সেই বিপ্লবের জনক হলেন কেরলের মানুষ ভার্গিস কুরিয়েন। তাঁর জন্মদিন ২৬ নভেম্বরই। ফলে দু'টি বিষয়কে জুড়ে এই তারিখটিকেই 'জাতীয় দুধ দিবস' হিসেবে নির্দিষ্ট করা হল। ঘটনাচক্রে তাঁর জন্মশতবর্ষের উদযাপনও শুরু হবে এ বছর। ১৯২১ সালে তাঁর জন্ম। সে দিক থেকে এ বারের দুগ্ধদিবস পালন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের ডেয়ারি ফার্মিং ও দুধ উৎপাদন নিয়ে কুরিয়েনের ব্যতিক্রমী কাজের জন্য তিনি স্মরণযোগ্য। এ জন্য কুরিয়েনকে ভারতের 'মিল্কম্যান'ও বলা হয়। ভারতকে দুধ উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে কাজ করেছেন তিনি। 'আমূলে'র সঙ্গেও তিনি অঙ্গাঙ্গি। 


গোটা বিশ্বেও যে দুগ্ধদিবস অনেকদিন আগে থেকেই পালিত হয়ে আসছে, তা-ও নয়। ২০০১ সাল থেকে জুনের ১ তারিখে 'ওয়ার্ল্ড মিল্ক ডে' পালিত হচ্ছে। আসলে এরই অনুসরণে ভারতে 'ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনে'র তরফে 'ন্যাশনাল মিল্ক ডে'র উদযাপন শুরু। তবে ২০০১ ধরলে দুগ্ধদিবসের বয়স দেখতে-দেখতে কুড়ি বছর হল!


পানীয় হিসেবে দুধের কোনও বিকল্প নেই। ক্য়ালশিয়াম ও ন্যাচারাল নিউট্রিয়েন্টসে ভরপুর। দুধকে পানীয়  হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলা তাই এ দিনটির একটি লক্ষ্য। ভারতের কৃষিঅর্থনীতিরও অন্যতম জোরের জায়গা হল দুধ। এ দিনটির মাধ্যমে দুধ-সংক্রান্ত সব বিষয়গুলিই তাই ছুঁয়ে যাওয়া হয়। সাধে কি গানের বিষয় বাছতে গিয়ে  এ শহরের এক গানের দল লিখে ফেলে 'দুধ না খেলে হবে না ভাল ছেলে'!


আরও পড়ুন: ২৬/১১ হামলায় জীবন দিয়ে দেশ বাঁচিয়েছিলেন এই পাঁচ নায়ক