জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: পৃথিবীর ইতিহাসে ঈশ্বরকে আত্মভাবে সেবার নানা নিদর্শন, নানা কাহিনি আছে। কিন্তু তাই বলে ভগবানের বিচার, তাঁকে শাস্তিদান? হ্যাঁ, গল্প নয়। এটাই বাস্তব। ছত্তীসগঢ়ের বস্তার জেলার এক গ্রামে প্রতি বছর বর্ষার সময়ে দেবতার ট্রায়াল তথা বিচার চলে। সেই গ্রামে আদিবাসীরা একজোট হয়ে বসে দেবতার অন্যায় নিয়ে আলোচনা করেন। এবং যদি এই সওয়াল-জবাবে দেবতা দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তাঁকে শাস্তিও দেওয়া হয়। গ্রামের ভাঙ্গারাম দেবীর মন্দিরে এই ট্রায়ালের আসর বসে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: Kolkata Doctor Rape And Murder Case: সুদূর হংকংয়েও সন্দীপের লালসার ছবি! আচমকা নার্সের নিতম্ব ও যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে তিনি বলেছিলেন...


একটি বহুল প্রচলিত গল্প আছে। বাবা তার ছোট ছেলের হাতে ঠাকুরসেবার ভার দিয়ে বেরিয়েছেন। ছেলেকে বার বার বলে গিয়েছেন, পুজো করে ঠাকুরকে নৈবেদ্য দিতে, মানে, ঠাকুরকে খেতে দিতে ছেলে যেন না ভুলে যায়! বাবা কাজে বেরিয়ে গিয়েছেন। ছেলে যথারীতি পুজোটুজো করে ঠাকুরকে ভোগ দিয়েছে। তবে, বাবার চেয়ে তার কাজের ভঙ্গিটা একটু আলাদা। কেননা, সে ঠাকুরকে খাবার দিয়ে ঠায় বসে আছে, দেখছে ঠাকুর কখন এসে খান! এদিকে ঠাকুর তো আর আসেন না। ছোট ছেলে বাবার কথাটা একেবারে খাঁটি সত্য বলে ধরেছে যে, ঠাকুরকে খেতে দিতে হবে। আর কাউকে খেতে দিলে সে কী করে? এসে খায়। কিন্তু ঠাকুর তো আসে না। সে প্রথমে কাকুতি-মিনতি করে, কাঁদে-কাটে, তাতেও কিছু হয় না। শেষে সে একটি লাঠি নিয়ে আসে আর ঠাকুরকে শাসাতে থাকে যে, ঠাকুর আজ খাবার না খেলে একটা অনর্থ ঘটাবে সে! আর তখনই ম্যাজিক! ঠাকুর এসে বসে খেয়ে একগাল হেসে চলে যান।


বাবা এসে জিগ্যেস করেন, হ্যাঁরে, ঠাকুরকে ভোগ দিয়েছিলি? ছেলে বলে, হ্যাঁ। বাবা বলেন, তাহলে প্রসাদ নিয়ে আয়, খাই। ছেলে আশ্চর্য হয়ে জবাব দেয়, প্রসাদ আবার কী? ঠাকুর তো এসে সব খেয়ে গেল! শুনে বাবার তো ভয়ানক চমকে ওঠার পালা। ঠাকুর এসে খেয়ে গেলেন, মানে? শেষে ছেলের সঙ্গে কথা বলে সবটা শুনে, তিনি হাউহাউ করে কাঁদতে থাকেন। তিনি বোঝেন, শুদ্ধ বুদ্ধি শুদ্ধ মন শুদ্ধ আত্মা বালকের কাছে এসে ধরা দিয়েছিলেন ভগবান। কিন্তু সারাজীবন নিষ্ঠাভরে পুজোআচ্চা করলেও তাঁর কাছে আবির্ভূত হননি ঈশ্বর। তাঁর দুরকম অনুভূতি হয়-- নিজের জন্য করুণা আর পুত্রের জন্য গর্ব।


এই গল্প আসলে, ভগবানকে আত্মভাবে সেবা করার এক রূপক-কাহিনি। বালকটি একেবারে নিশ্চিত জানে যে, মানুষ যেভাবে খেয়ে যায়, সেভাবেই খেয়ে যাবেন ঠাকুরও। এতে যে কোনও ব্যত্যয় হতে পারে, সরল বিশ্বাসে এ তার মনেই হয়নি!


আরও পড়ুন: Kolkata Doctor Rape And Murder Case: নির্যাতিতার পা দু'টি ৯০ ডিগ্রিতে ছিল কেন? 'সোয়াব' ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করা হয়নি কেন?


ভগবানের এই মানব-ব্যবহার ঈশ্বর-আরাধনার এক পন্থা। কিন্তু গল্পের, রূপকের পন্থা যে খোদ এই একুশ শতকেও দেখা যাবে, কে জানত? সেটাই দেখাল বস্তার। তিন দিন ধরে এখানে বসে এই জন আদালত। সেখানে ভগবানের বিচার চলে। তাঁর অপরাধের বিচার চলে। অন্যায়ের বিচার চলে। কী অন্যায়-অপরাধ? এই আদিবাসীদের জীবন কেন এত ব্যর্থ, এত নিষ্ফল, এত অকিঞ্চিৎকর, কেন তাদের এত কষ্ট? কেন তারা এত রোগে ভোগে? কেন এবার তাদের ফসল ভালো হয়নি? শাস্তিস্বরূপ দেবতাকে সারা রাত মন্দিরের বাইরে রাখা হয়। যে যে ইস্যুতে আদিবাসীরা দেবতাদের শাস্তিবিধান করেন, তা মিটে গেলেই আবার দেবতাদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়। প্রায় আড়াইশো গ্রামের মানুষ এই ট্রায়ালে অংশ নেন।


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)