‘যেরকম হওয়া উচিত সেরকমই হয়েছে এবারের বাজেট’
অনেক স্কিম দেওয়া হয়েছে। কৃষিমুখী, খাদ্য ও শস্য বিতরণ নিয়ে অনেক সঠিক চিন্তভাবনা করা হয়েছে। রূপায়ন কীভাবে হবে সেটা আর একটা ব্যাপার
সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জী
১ লা ফেব্রুয়ারি ২০২০। পেশ হল বাজেট। বাজেট বক্তৃতা বেশ দীর্ঘ। অনেক কিছু বলা আছে। পরের লোকসভা নির্বাচন ১৯ শে মে ২০২৪। এই বাজেটে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল অবধি একটি রোড ম্যাপ দিয়েছে বলেই মনে হল।
সাধারণ লোকের কথা মাথায় রেখে আয়কর ছাড়। এছাড়াও পুরনো আয়কর সংক্রান্ত যা যা মামলা চলছে , যদি করটা শুধু দিয়ে দেওয়া হয় ৩১ শে মার্চের মধ্যে তাহলে আর সুদ এবং পেনাল্টি কিছুই দিতে হবে না। এটা ভাল পদক্ষেপ, কেননা ১০ লক্ষের বেশি মামলা ঝুলে আছে। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে সুবিধা হবে। কোম্পানির ডিভিডেন্ড ডিস্ট্রিবিউশন ট্যাক্স এখন আর দিতে হবে না। এতে কোম্পানির অনেকখানি ট্যাক্স বাঁচবে। আশা করা যায় সেই বাঁচানো ট্যাক্স দিয়ে কোম্পানিদের ব্যবসা আরও ভালো দিকে যাবে।
বিলগ্নিকরণের টার্গেট ধরা হয়েছে ২.১ লক্ষ কোটি যা গত বছর ছিল ১.০৫ লক্ষ কোটি। বিষয়টি হল এই বিলগ্নিকরণ সম্ভব কিনা? প্রতিবছর এই খাতে একটা টার্গেট করা হয় এবং তারপর দেখা যায় সেটা হয়ে উঠছে না। তবে লাইফ ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশনের শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে। সেখান থেকে অনেকগুলো টাকা পাওয়া উচিত। এই প্রস্তাবে বর্তমানে যেসব লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার বাজারে আছে তাদের শেয়ারের দামে হ্রাস এল। এতে লগ্নি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বা হবে। হরেদরে শেয়ার বাজারে বড় পতন। বম্বে সূচক সেনসেক্স হ্রাস পেয়েছে প্রায় হাজার পয়েন্ট।
সবাই খুব চিন্তিত কেন সূচক এতটা পড়ল? আসলে বাজেটের জন্য সূচক পড়েনি। পড়েছে, বিশ্বে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে তাতে আমেরিকা তথা চিনের বাজার যথেষ্ট পড়বে বা পড়ছে। তারই রেশ টেনে আমাদের শেয়ার বাজারের এই ভোগান্তি। ভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য যেভাবে আসছে তাতে বিশ্ব অর্থনীতি ছোট খেতে পারে। এই আশঙ্কাটা বড়রকম। আয় ও ব্যয়ের হিসেটায় বাজার সন্তুষ্ট নয়। এখন যা হিসাব, বাজার মনে করে হিসাব আগামিদিনে আরও উল্টে যাবে। সেরকমই ঘটেছিল গতবছর। এই বছর তার ব্যতিক্রম হবে তা ভাবা মুসকিল।
অনেক স্কিম দেওয়া হয়েছে। কৃষিমুখী, খাদ্য ও শস্য বিতরণ নিয়ে অনেক সঠিক চিন্তভাবনা করা হয়েছে। রূপায়ন কীভাবে হবে সেটা আর একটা ব্যাপার। শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক জোর। প্রায় এক লক্ষ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এটা ভবিষ্যতের ভারত গড়তে সাহায্য করবে। তবে এগুলো হল সরকারের সদিচ্ছা। বাজার সন্দেহের চোখে দেখছে। মোদ্দা কথা শোয়ার অনেকদিন ধরে যথেষ্ট উঁচুতে ছিল এবং অর্থনীতির প্রকৃত ছবিকে অবজ্ঞা করেছিল। সেই অবজ্ঞা করার জন্যই শেয়ার বাজারে এখন সংশোধন শুরু হল। থাকবেও কিছুদিন। তার থেকেই তৈরি হবে সুযোগ বিনিয়োগ করার। প্রতিবারই এরকম হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
বাজেট কী রকম হল এনিয়ে সবাই প্রশ্ন করে। যেরকম হওয়া উচিত সেরকমই হয়েছে। কোনও চমক নেই। আর চমক দেওয়ার জায়গাও নেই। হাতে টাকা না থাকলে নতুন নতুন চমক হবে কোথা থেকে! অর্থনীতি ঠিক করার প্রকৃত ইচ্ছে রয়েছে। তবে কীভাবে সেটা করা যাবে বা করা হবে সেই নিয়ে খুব একটা কথাবার্তা এই বাজেটে পাওয়া গেল না। যা যা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা অর্থনীতিকে সঠিক পথে নিয়ে যাবে এই রকম একটা চিন্তাভাবনা নিয়েই বাজেট। সেই ভাবনাচিন্তা যে অর্থনীতিকে ঠিক করবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। যেহেতু অনিশ্চয়তা সেহেতু শেয়ার বাজারে এরকম একটা সংশোধন দেখাতে পেলাম। কারণ অনিশ্চয়তা ভারতে নয়, সারা বিশ্বে। সেই অনিশ্চিয়তা না কাটলে শেয়ার বাজার সম্বিত্ ফিরে পাবে কিনা সেই নিয়ে সন্দেহ থাকছে। তারই জন্য সন্দেহের বাজারে আর যাই হোক শেয়ারের দাম টিকে থাকতে পারে না।
আশার বাজেট। আবার অন্য দিক দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। যে সব জায়গায় থাকবে না সেগুলো এতবড় মন্দা অর্থনীতিকে সঠিকপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এই মুহূর্তে বিশ্ব অর্থনীতির দিকে তাকানো ছাড়া আর অন্য কোনও কথা ভাবা যাচ্ছে না।
-লেখক-অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ