যোগীর গড়েই বিজেপিকে ধাক্কা দিল পিসি-ভাইপোর জুটি
`বুয়া-ভাতিজা জিন্দাবাদ`, স্লোগান উত্তরপ্রদেশের রাস্তায়। ২০১৯ সালের আগে বিজেপিকে অশনিসংকেত দিল উপনির্বাচনের ফলাফল।
নিজস্ব প্রতিবেদন: "বুয়া-ভাতিজা জিন্দাবাদ" ধ্বনিতেই এই মুহূর্তে উদ্বেলিত উত্তরপ্রদেশের পথ ঘাট। খোদ মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর গড়ে হানা দিয়ে চরম সাফল্য পেয়েছে মায়াবতী-অফিলেশ জুটি। বিরোধীদের ধূলিস্যাত্ করে দিয়ে এক বছর আগের উত্তরপ্রদেশে গেরুয়া ঝড় তুলে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। সেই উত্তর প্রদেশেই এবার দুটি অত্যন্ত মর্যাদার দুটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে গোহারা শাসক দল বিজেপি। ১৯৮৯ সাল থেকে বিজেপির দখলে গোরক্ষপুর। ওই কেন্দ্রে ২১,৮৮১ ভোটে জিতেছেন সমাজবাদী প্রার্থী প্রবীণ কুমার নিশাদ। ফুলপুরে ৫৯,৬১৩ ভোটের ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করেছেন সপার নাগেন্দ্র প্রতাপ সিং প্যাটেল।
বুধবার গণনা খানিকটা এগোনোর পর জয়ের ইঙ্গিত স্পষ্ট হতেই উত্সব শুরু করে দেন বসপা ও সপা কর্মীরা। স্লোগান ওঠে, 'বুয়া-ভাতিজা জিন্দাবাদ'। পরে বসপা সুপ্রিমো মায়াবতীর সঙ্গে দেখা করে ধন্যবাদ জানান উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা সপা নেতা রাম গোবিন্দ চৌধুরী। বিজেপি নেতা তথা উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রতাপ মৌর্যের কথায়, ''সপার বাক্সে বসপার ভোট চলে যাবে, তা প্রত্যাশা করিনি আমরা। ২০১৯ সালে কংগ্রেস-সপা-বসপা জোট বাঁধবে, সেটা মাথায় রেখেই এবার আমাদের কৌশল নির্ণয় করতে হবে।''
উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে সপা-বসপা চিরকালের যুযুধান। মুলায়ম-মায়াবতী একে অপরের মুখদর্শন করতেন না। কিন্তু সেসব অতীত সরিয়ে রেখে, শুধুমাত্র সময়ের ডাকে সমঝোতা করেছেন অখিলেশ-মায়াবতী। আপাতভাবে দুটি আসনেই প্রার্থী দেননি বসপা নেত্রী, প্রতীকী লড়াইয়ে থেকেছে কেবল সাইকেল। কিন্তু হাতির ওজন যে বিরোধীদের পাল্লা অনেকটাই ভারী করে দিয়েছে তা মানছে সাইকেল শিবিরও। আর এর সঙ্গে ছিল বাবা-কাকার গুন্ডামির পরম্পরা ভেঙে অখিলেশের স্বচ্ছ রাজনৈতিক ভাবমূর্তি।
২০১৭ সালে যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর গোরক্ষপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন ৫ বারের সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ। উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে কেশব প্রসাদ মৌর্যও পদত্যাগ করেন ফুলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে। আর এবার মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীর ছেড়ে যাওয়া দুই কেন্দ্রেই ধরাশায়ী বিজেপি। ফলে এই পরাজয় ভীষণভাবে ধাক্কা দিয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিরোধীরা একজোট হলে বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়াকেও যে রুখে দেওয়া যায়, সে কথাই প্রমাণ করে দিল এই দুই হাই ভোল্টেজ কেন্দ্রের ফলাফল।
আরও পড়ুন- 'লভ জিহাদ' তদন্তে নয়া মোড়; সম্মোহিত করে ধর্মান্তরণ, জানাল এনআইএ
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দশ জনপথে ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধীর আমন্ত্রণে নৈশভোজে উপস্থিত হয়েছিলেন দেশের ২০ বিজেপি বিরোধী দল। অখিলেশের সপার তরফ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন রামগোপাল যাদব। বসপা নেতৃত্বও উপস্থিত ছিল এই বৈঠকে। ২০১৯ সালে মোদীর দলকে রুখে দেওয়ার নীতি নির্ধারণ করতেই এই নৈশভোজের আয়োজন হয়েছিল। আর তারপর দিনই এমন ফলাফল দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে যে ভীষণভাবে উজ্জ্বীত করবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে ২০১৯ সালের আগে বিজেপির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে রয়েছে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
আরও পড়ুন- যোগীর রাজ্যে উপনির্বাচনে পিছিয়ে বিজেপি, অখিলেশ-মায়াকে আগাম শুভেচ্ছা মমতার