National Herald Case: পরপর ম্যারাথন জেরা রাহুলকে; ইডি-র তলব সোনিয়াকেও! কিন্তু কী এই ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা?
২০০৮ সালে ন্যাশনাল হেরাল্ড বন্ধ করার সময়, কংগ্রেসের কাছে এজেলে-র ঋণ ছিল ৯০০ মিলিয়ন। ২০১০ সালে, কংগ্রেস এই ঋণটি ইয়াং ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডকে হস্তান্তর করে। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা যা ঘটনার কিছু মাস আগে তৈরি করা হয়। সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধী এর পরিচালন পর্ষদে রয়েছেন এবং তারা দুজনেই কোম্পানির ৩৮ শতাংশ করে মোট ৭৬ শতাংশের মালিক।
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ দুর্নীতির অভিযোগে সোমবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র দফতরে হাজিরা দেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে রাহুল গান্ধী এবং তার মা, কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীকে তলব করেছে ইডি।
রাহুল গান্ধী তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং দলের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে রাজধানী দিল্লিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র অফিসে যান মিছিল করে।
রাহুল গান্ধী যখন ইডির প্রশ্নোত্তরের মুখিমুখি হন সেই সময় একটি বিক্ষোভ চলাকালীনদিল্লি পুলিস কংগ্রেসের কিছু সদস্যকে আটক করে। এর মধ্যে ছিলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী, কেসি ভেনুগোপাল এবং অশোক গেহলোতের মতো সিনিয়র নেতা। মঙ্গলবার আবার ইডির মুখোমুখি হন রাহুল গান্ধী।
সোনিয়া গান্ধী কোভিড আক্রান্ত হয়ে রবিবার হাসপাতালে ভর্তি হন। ইডি নতুন সমন জারি করে তাঁকে ২৩ জুন ফের তলব করেছে।
মামলাটি করেন দেশের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্য সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তিনি অভিযোগ করেন গান্ধী পরিবার দলের তহবিলের অপব্যবহার করে ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকার প্রকাশক সংস্থাকে কিনে নেয়।
কী এই ন্যাশনাল হেরাল্ড?
১৯৩৮ সালে ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকাটি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু শুরু করেন।
সংবাদপত্রটি প্রকাশ করে অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড (এজেএল)। ১৯৩৭ সালে ৫,০০০ অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীকে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয় এজেএল। সংস্থাটি আরও দুটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করে। উর্দুতে কওমি আওয়াজ এবং হিন্দিতে নবজীবন নামে প্রকাশিত হয় ওই দুটি পত্রিকা।
সেই সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারা চালিত ন্যাশনাল হেরাল্ড ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে। দেশের জাতীয়তাবাদী সংবাদপত্র হিসাবে খ্যাতি অর্জন করে এই পত্রিকা। সংবাদপত্র তার উগ্র এবং তীক্ষ্ণ লেখার জন্য ব্রিটিশ সরকারের রোষে পরে ১৯৪২ সালে নিষিদ্ধ ঘষিত হয়। যদিও তিন বছর পরে আবার চালু হয় এই প্রকাশনা।
১৯৪৭ সালে দেশের স্বাধীনতার পরে এই পত্রিকার চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন জওহরলাল নেহেরু। কংগ্রেস দল এই সংবাদপত্রের মতাদর্শ গঠনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৩ সালে ন্যাশনাল হেরাল্ডের রজত জয়ন্তীতে একটি বার্তায়, নেহেরু নিজেই বলেন "স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি" বজায় রেখে "সাধারণত কংগ্রেস নীতির পক্ষে" বলে এই পত্রিকা।
কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে পত্রিকাটি আবার বন্ধ হয়ে যায় ২০০৮ সালে। যদিও ২০১৬ সালে, এটি একটি ডিজিটাল পত্রিকা হিসাবে পুনরায় প্রকাশ পায়।
কী অভিযোগ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে?
২০১২ সালে স্বামী ট্রায়াল কোর্টে এই মামলা করেন গান্ধীদের বিরুদ্ধে। স্বামীর অভিযোগ গান্ধীরা কংগ্রেস পার্টির তহবিল ব্যবহার করে ২০ বিলিয়নের বেশি টাকার সম্পত্তি দখলে চেষ্টায় AJL অধিগ্রহণ করেছে।
২০০৮ সালে ন্যাশনাল হেরাল্ড বন্ধ করার সময়, কংগ্রেসের কাছে এজেলে-র ঋণ ছিল ৯০০ মিলিয়ন। ২০১০ সালে, কংগ্রেস এই ঋণটি ইয়াং ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডকে হস্তান্তর করে। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা যা ঘটনার কিছু মাস আগে তৈরি করা হয়। সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধী এর পরিচালন পর্ষদে রয়েছেন এবং তারা দুজনেই কোম্পানির ৩৮ শতাংশ করে মোট ৭৬ শতাংশের মালিক।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী পাওয়ার? দিল্লি পৌঁছেই শরদের দরবারে মমতা
বাকি ২৪ শতাংশ রয়েছে কংগ্রেস নেতা মতিলাল ভোরা, অস্কার ফার্নান্ডেস, সাংবাদিক সুমন দুবে এবং উদ্যগপতি স্যাম পিত্রোদার হাতে। তাদের নামও রয়েছে এই মামলায়।
স্বামীর অভিযোগ গান্ধীরা "অনৈতিক" উপায়ে মূল্যবান সম্পদ "দখল" করার জন্য সাবটারফিউজ ব্যবহার করে। বিজেপি নেতার অভিযোগ দিল্লি, লখনউ, মুম্বই এবং অন্যান্য শহরে অবস্থিত AJL এবং এর রিয়েল এস্টেটের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইয়ং ইন্ডিয়া।
কী বলছে কংগ্রেস?
এই মামলার মাধ্যমে বিজেপির বিরুদ্ধে "রাজনৈতিক প্রতিহিংসার" অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। তারা জানিয়েছে হেরাল্ড প্রকাশক এজেএলকে আর্থিক সমস্যায় সাহায্য করে কংগ্রেস। কংগ্রেস AJL-কে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন টাকা ধার দেয়। তাদের আরও দাবি ২০১০ সালে, AJL ঋণমুক্ত হয় যখন তারা ইক্যুইটির সঙ্গে তাদের ঋণ বদল করে এবং নতুন তৈরি হওয়া ইয়ং ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডকে শেয়ার বরাদ্দ করে।
কংগ্রেস জানিয়েছে ইয়ং ইন্ডিয়া একটি "অলাভজনক সংস্থা" এবং এর শেয়ারহোল্ডার এবং পরিচালকদের কোনও লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি। তারা আরও জানিয়েছে AJL ন্যাশনাল হেরাল্ডের মালিক, মুদ্রক এবং প্রকাশক হিসাবে থাকবে এবং সম্পত্তির কোনও পরিবর্তন অথবা হস্তান্তর হয়নি।
কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি জানিয়েছেন সরকার ইডি এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ব্যবহার করছে।