জ্যোতির্ময় কর্মকার: পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া তনঠ মাতার মন্দির থেকে লঙ্গেওয়ালা চেকপোস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪৪ কিলোমিটার কংক্রিট রাস্তা চলে গিয়েছে মরুভূমির বুক চিরে। দু’দিকে তাকালে শুধুই ধূ-ধূ বালির রাশি। মাঝে মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় এলোমেলো গুটি-কয়েক ঘর। ভারত-পাক সীমান্ত রেখায় যে ক’টি গ্রাম রয়েছে, তার মধ্য একটি হল ‘গাজে সিং কি কুয়া’। রাজস্থানের ভোটের মুখে কেমন আছেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা? তাঁদের হাল-হকিকত নিতে গ্রাম ঘুরে দেখল জ়ি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING


গ্রামের নাম ‘গাজে সিং কি কুয়া’। এমন অদ্ভুত নাম? নাম নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। বহুল জনশ্রুতি হল এমনটাই, কোনও এক সময় গাজে সিং নামে এক জনৈক দলবল নিয়ে জয়সলমের থেকে এই পথে দিয়ে আরও পশ্চিমে সফর করেছিলেন। জনপদ-হীন ধূ-ধূ প্রান্তরে তৃষ্ণা মেটাতে এখানে খোঁড়া হয় একটি কুয়া। পরবর্তীকালে এই কুয়াকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে জনবসতি। সেই থেকেই এই গ্রামের নাম ‘গাজে সিং কি কুয়া।’



আরও পড়ুন- গীতার শ্লোক তুলে ধরে মোদীর হিন্দুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রাহুল গান্ধী


রাজস্থানে পূর্বে ভোটের হাওয়া যতটা প্রবল, পশ্চিমে এগোলে ক্রমশ ক্ষীণ হয়েছে সেই হাওয়া। আর এই গ্রামে তার কোনও ছিটেফোঁটাও নেই। এদিক-ওদিক ছিটিয়ে ৩০টি মাটির বাড়ি। সবমিলিয়ে কমপক্ষে ৭০ ভোটার হবে। না আছে পানীয় জলের ব্যবস্থা। না আছে ওষুধের দোকান। ভীম রাও নামে এক প্রৌঢ় বলেন, “সামান্য জ্বর হলে ওষুধ আনতে হয় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকে।” হাসপাতাল তো দূরাস্ত, স্কুল পর্যন্ত নেই।


ভিডিও সৌজন্য:নিশান্ত কুমার ত্রিপাঠী


আরও পড়ুন- জাতপাতে বীতশ্রদ্ধ, এবারে কোনও দলকেই ভোট দেবে না ‘মুকুলের সোনার কেল্লা’


জীবিকা বলতে একমাত্র উট পালন। ছাগল-গরুও পালন করা হয়, তাও নির্ভর করে বৃষ্টির উপর। ভীম রাও-কে আক্ষেপের সুরে বলতে শোনা যায়, যে বছর বৃষ্টি হয় না, সে বছর অনাহারে মরতে হয় গরু-ছাগলদের। তাদের বাঁচাতে ন্যূনতম খাবারও জোগাড় করতে পারেন না তাঁরা। গর্ভবতী মহিলার প্রসব থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে উটই একমাত্র ভরসা। উট বিক্রি করলে কিছু কাঁচা পয়সা হাতে মেলে। তবে বছরে মাত্র চার মাস। পর্যটনের সময়। মোদীর অচ্ছে দিনের আলো কি এখানে পৌঁছয়নি? বছর পঁচিশের যুবক গজেন্দ্র কুমার বলেন, “উন্নয়ন তো হয়েছে। ওই দেখুন না বিজলি পোস্ট বসেছে রাস্তায়। কিন্তু ওইটুকুই।” বোঝা গেল, রাতে টিমটিম করে বিজলির আলো তো জ্বলে, পেট ভরাতে চুলা তাদের জ্বলে না। গজেন্দ্র জানায়, প্রখর গ্রীষ্মে বালির ভিতর আটার মণ্ড চাপা দিয়ে রুটি তৈরি করে খেতে হয় তাঁদের।


ভোট নিয়ে প্রশ্ন করলে মজার কথা শোনালো গজেন্দ্র। প্রচার তো দূর সারা বছর রাজনৈতিক নেতাদের টিকি দেখা যায় না। তবে, ভোটের দিন সকাল সকাল গাড়ি এসে পৌঁছয়। যে দলের গাড়ি প্রথম এসে পৌঁছবে এই গ্রামের সব ভোট তাদের। গজেন্দ্র বলেন, ওই দিন গ্রামবাসীর খাওয়া-দাওয়ার ভার নেয় সেই রাজনৈতিক দলই। ভোট নিয়ে দারুণ একটি প্রবাদও রয়েছে- ‘জিসকো দুলহা বান না হ্যায়, উসকা গাড়ি আতা হ্যায়।’



তবে, গজেন্দ্রর আক্ষেপ, গাড়ি তো আসে, কিন্তু উন্নয়নের রাস্তা ফুরিয়েছে গ্রামে ঢোকার অনেক আগেই...