ওয়েব ডেস্ক: ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২। দিল্লির রাজপথে চলন্ত বাসে প্যারা মেডিক্যাল ছাত্রীর গণধর্ষণ ও তার উপর চলা পৈশাচিক যৌন নির্যাতনের ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি আজও গোটা দেশের শিরদাঁড়ায় ঠাণ্ডা স্রোত বহন করে। কিছুদিন আগেই এই ঘটনা নিয়ে বিবিস্যার একটি তথ্যচিত্রের কথা সামনে আসায় হইচই পড়ে যায়। এই তথ্যচিত্রে নির্ভয়ার অন্যতম ধর্ষক-খুনি মুকেশ সিংয়ের ধর্ষণের পক্ষে নির্লজ্জ সওয়াল, মেয়েদের আচরণ বিধি কী ধরণের হওয়া উচিৎ সম্পর্কিত 'জ্ঞান দান' ও 'ভালো' এবং 'খারাপ' মেয়ের 'সংজ্ঞা নির্ধারণ' প্রকাশ্যে আশার পর থেকেই প্রতিবাদে গর্জে ওঠে সারা দেশ। রাজ্যসভায় এই নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। এ দেশে তথ্যচিত্রটির সম্প্রচারণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। সারা বিশ্বে তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার আবেদন করেন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

নির্ভয়া কাণ্ডের পর বহু প্রতিবাদ-আন্দোলনের রেশ ধরে এদেশের ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু একটুও কি বদলেছে বাস্তব চিত্রটা? বদলেছে কি সামগ্রিকভাবে মেয়েদের সম্পর্কে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা? মেয়েদের কে মানুষ হিসাবে মেনে নেওয়ার দিকে একটুও কী এগিয়েছে এই দেশ? কিছুদিন আগেই বেঙ্গালুরুর একটি এনজিও-এর ১১টি রাজ্যে করা একটি সমীক্ষাতে উঠে এসেছে ভয়াভ এক তথ্য। এ দেশের ৪৪% কলেজ পড়ুয়াদের মতে মহিলাদের কিছুটা পরিমাণে যৌন নির্যাতন মুখ বুঝে মেনে নেওয়াই উচিৎ।


মানসিকতার পরিবর্তনতো দূরের কথা। নির্ভয়া গণধর্ষণ-হত্যা কাণ্ডের পর আইনের পরিবর্তন হলেও সত্যিই তার প্রয়োগ হয়েছে কতটুকু?


১৬ ডিসেম্বর ২০১২ সালের সেই ভয়াবহ রাতের ১২ মাসের মধ্যে সারা দেশে ১৮,০০০ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত যথাযথ প্রমাণের অভাবে আইনি পরিভাষায় বেকসুর খালাস হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।  


ন্যাশনল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো অনুযায়ী ২০১৩ সালে ২৫,৩৮৬ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের মধ্যে আদালতে দোষী সব্যস্ত হয়েছে মাত্র ৬,৮৯২জন।  বহুক্ষেত্রে আইনজীবী ও বিচারকরা স্বীকার করে নিয়েছেন ঘটনার সত্যতা বুঝতে পেরেও স্রেফ যথেষ্ট প্রমাণ জোগাড় করতে না পারায় মুক্তি পেয়েছে বহু।


এর অর্থ এই মুহূর্তে ১৮,৪৯৪ জন ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত খুল্লামখুল্লা রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।


২০১৩ সালে ৩৩,০০০ মহিলা তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। যার অর্থ প্রতিদিন গড়ে এদেশে ধর্ষিত হন ৯০জন। মনে রাখা ভাল এই পরিসংখ্যানটা পুলিসি খাতায় অভিযোগের ভিত্তিতে। এখনও যৌন লাঞ্ছনার কথা সর্বসমক্ষে স্বীকার করতে লজ্জা, ভয় পান এদেশের অধিকাংশ মহিলাই। তাই দৈনিক গড়ে ধর্ষিত হওয়ার সংখ্যাটা যে এর থেকে অনেক বেশি তা বোধহয় বলাই বাহুল্য।


দিল্লির একটি সিক্যুইরিটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। ইন্সটিটিউট ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অজয় সাহনির ভাষায় ''সমস্যাটা এটা নয় যে একজন ধর্ষক একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছে। সমস্যাটা এটাই যে ওই জঘন্য ঘটনার দু'বছর পরেও পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। অপরাধীদের শাস্তির জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই কেউই মাথা ঘামায় না। ''  


শাস্তি কঠোর করলেই সমাধান হবে না এই সমস্যার, বরং শাস্তি যাতে হয়ই আগে নিশ্চিত করতে হবে সেটাই। বহুদিন ধরেই এই দাবি জানিয়ে আসছেন পুলিস আধিকারিকরা।


সাহনির মতে এই সাক্ষাৎকারটি আসলে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে।