দেখে নিন বাজপেয়ীর জীবনের ২০টি অজানা তথ্য

Thu, 16 Aug 2018-6:27 pm,

দীর্ঘ রোগভোগের পর বৃহস্পতিবার নয়া দিল্লির এইমসে প্রয়াত হয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। আইনজ্ঞ, কবি ও সুবক্তা হিসাবে অটল বিহারীর খ্যাতি গোটা বিশ্বে। আরএসএস-এর একনিষ্ঠ প্রচারক অটলবিহারী বাজপেয়ী ছিলেন অবিবাহিত। দেশের জন্য তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবন স্মরণ করছে কোটি কোটি ভারতীয়। এক নজরে দেখে নিন অটল বিহারী বাজপেয়ীর জীবনের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। 

মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়রে জন্মগ্রহণ করেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। বাবা ছিলেন কৃষ্ণ বিহারী বাজপেয়ী। অটল বিহারীর পৈত্রিক গ্রাম যদিও ছিল উত্তর প্রদেশের আগ্রা জেলার বটেশ্বরে। সেখান থেকে মধ্য়প্রদেশে গিয়ে বসবাস শুরু করেন অটল বিহারীর ঠাকুরদা শ্যামলাল বাজপেয়ী। 

ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন অটল বিহারী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন তিনি।

কৈশোরেই গ্বালিয়রে আর্য কুমার সভায় যোগদান করেন তিনি। কৈশোরে বামপন্থার দিকে ঝোঁক ছিল বাজপেয়ীর। তবে বাবাসাহেব আপ্টের বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৩৯ সালে আরএসএস-এ যোগদান করেন তিনি। ১৯৪৭ সালে আরএসএস-এর প্রচারক হিসাবে কাজ শুরু করেন। 

 

১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগদান করায় বাজপেয়ী ও তাঁর দাদা প্রেম-কে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিস। 

কানপুরের আইন কলেজ থেকে এরই সঙ্গে আইনে স্নাতক হন অটল বিহারী ও তাঁর বাবা কৃষ্ণ বিহারী। একই ক্লাসে পড়তেন তাঁরা। হোস্টেলের একই ঘরে থাকতেন বাবা - ছেলে।

ছোটবেলা থেকেই সাংবাদিকতা করার ইচ্ছা ছিল অটল বিহারীর। স্বপ্ন সফল করতে দীনদয়াল উপাধ্যায় প্রকাশিত রাষ্ট্রধর্ম, পাঞ্চজন্য পত্রিকায় কাজ করতে শুরু করেন তিনি। একই সঙ্গে কাজ শুরু করেন বীর অর্জুন ও স্বদেশ নামে দু'টি সংবাদপত্রে। 

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অন্ধ ভক্ত ছিলেন অটলবিহারী। কাশ্মীরে যেতে বিশেষ অনুমতি পত্রকে বাধ্যতামূলক করার বিরোধিতায় ১৯৫৩ সালে আমরণ অনশনে বসেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। একই সঙ্গে অনশনে বসেছিলেন অটল বিহারীও। এই আন্দোলন চলাকালীনই শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যু হলে ভেঙে পড়েন অটল বিহারী। 

১৯৫৭ সালে দেশের দ্বিতীয় লোকসভা নির্বাচনে দু'টি আসন থেকে লড়াই করেন অটল বিহারী। উত্তর প্রদেশের মথুরা ও বলরামপুর আসন থেকে ভোটে লড়েন তিনি। মথুরা আসনে পরাজিত হলেও বলরামপুর আসনে জিতে প্রথমবার সংসদে যান বাজপেয়ী। 

হিন্দিতে তাঁর দক্ষতার জন্য সংসদে বার বার প্রশংসিত হয়েছে বাজপেয়ীর বক্তৃতা। এমনকী, অটল বিহারী একদিন প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু।

 

১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাইয়ের সরকারে বিদেশমন্ত্রী ছিলেন অটলবিহারী। সেই সময়ের একটি ঘটনা বাজপেয়ী সহিষ্ণুতা ও সৌজন্যবোধের প্রতীক হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন অনেকে। বিদেশমন্ত্রী হিসাবে দিল্লির সাউথ ব্লকে ঢুকেই বাজপেয়ী দেখেন, একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর ছবি। সঙ্গে সঙ্গে অটলবিহারী আধিকারিকদের ছবিটি পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। 

প্রথম ব্যক্তি হিসাবে বাজপেয়ীই রাষ্ট্রসংঘের মঞ্চে হিন্দিতে ভাষণ দেন। হিন্দির প্রসারে সব সময় সক্রিয় ছিলেন তিনি। 

মোট তিন বার প্রধানমন্ত্রী হন অটল বিহারী। ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার চলেছিল মাত্র ১৫ দিন। ১৯৯৮ সালে ১৩ মাসের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বাজপেয়ী। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে পুরো ৫ বছরের কার্যকাল পূরণ করেন তিনি। 

১৯৯৮ সালের ১৩ মে রাজস্থানের পোখরানে ভূগর্ভস্থ পরামণু বিস্ফোরণ ঘটায় বাজপেয়ী সরকার।  এর পরই বিশ্বের পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের তালিকায় নাম তোলে ভারত। 

১৯৯৯ সালে দিল্লি ও লাহৌরের মধ্যে বাসযাত্রা শুরু করে এনডিএ। সৌহার্দের বার্তা দিতে প্রথম বাসে দিল্লি থেকে লাহৌরে যান অটল বিহারী স্বয়ং। 

২০০০ সাল থেকেই ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন বাজপেয়ী। পরের বছর তাঁর হাঁটু প্রতিস্থাপন করাতে হয়। ২০০৯ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর বাকশক্তি হারান অটল বিহারী। 

উত্তর প্রদেশের সঙ্গে আত্মার যোগাযোগ থাকলেও গোটা দেশে সমান জনপ্রিয় ছিলেন অটল বিহারী। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি গোটা জীবনে চারটি আলাদা রাজ্য থেকে ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছেন। উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাট থেকে সাংসদ ছিলেন তিনি। 

রাজনীতিবিদ হলেও মনেপ্রাণে একজন কবি ছিলেন বাজপেয়ী। তাঁর লেখা কবিতা হিন্দি পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। এক সাক্ষাত্কারে অটল বিহারী বলেছিলেন, 'রাজনীতিতে আমার কোনও উত্সাহ নেই। আমি তো কবি হতে চাই।'

উত্তর ভারতীয় ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে হলেও আমিষ পদই পছন্দ ছিল বাজপেয়ীর। পুরনো দিল্লির করিম ছিল তাঁর পছন্দের রেস্তোরাঁ। 

মোট ৪৭ বছর সাংসদ ছিলেন তিনি। ১১ বার লোকসভার সাংসদ ছিলেন তিনি। ২ বার সাংসদ ছিলেন রাজ্যসভায়। 

 

২০১৪ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীকে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ভারতরত্ন প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ বাজপেয়ীর বাসভবনে গিয়ে তাঁকে সম্মান প্রদান করেন তত্কালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link