Puja 2021: দত্ত-মুন্সিদের এই পুজো দেখতে আসতেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রও!
এদিকে ওদিকে কয়েকটি মন্দির। এগুলিই এখন জমিদারির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। দেখলে মনে হবে পোড়োবাড়ি-- ছাতা ধরা ইট, পলেস্তারা-খসা দেওয়াল। গাছপালার জঙ্গলে ছড়িয়ে রয়েছে মন্দির। ভগ্নপ্রায় বাড়ির একাংশে ভাঙচোরা ঠাকুরদালান। স্তম্ভের উপরে ছাদ ভেঙে পড়ায় দালানের কিছুটা অংশে নতুন ছাদ ঢালা হয়েছে। তার তলাতেই হয় পুজো।
এই হল বিখ্যাত দেবানন্দপুর। 'বিখ্যাত' কারণ, জায়গাটির সঙ্গে অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের স্মৃতি জড়িয়ে। দেবানন্দপুরই কথাশিল্পীর জন্মস্থান। বলতে গেলে শরৎচন্দ্রের গ্রামের পুজো এই দত্ত-মুন্সিদের পুজো। গ্রামের পুরনো মানুষজন বলেন, তাঁরা তাঁদের পূর্বপুরুষের কাছে শুনেছেন, এই পুজো দেখতে নাকি আসতেন স্বয়ং শরৎচন্দ্র!
এহেন দেবানন্দপুরে একটা সময়ে জমিদারি ছিল দত্ত মুন্সিদের। ১৫৮১ সালে কনৌজ থেকে এদেশে এসে জমিদারি পত্তন করেন দত্ত মুন্সিদের পঞ্চদশ পুরুষ কামদেব দত্ত। কামদেবই এখানে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। মূলত কাঠের ব্যবসায় প্রতিপত্তি বেড়েছিল দত্ত মুন্সিদের। সেসময় সপ্তগ্রাম বন্দরে সরস্বতী নদী দিয়ে বাণিজ্য হত। সেই সরস্বতী নদীর পূর্বপ্রান্তে দেবানন্দপুর এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম হিসেবেই তখন পরিগণিত হত।
দত্ত মুন্সিদের পুজোই ছিল আশপাশের গ্রামের একমাত্র পুজো। তাই তাকে কেন্দ্র করে পুজোর দিনগুলিতে উৎসবে মেতে উঠতেন গ্রামের মানুষজন। ক্রমে পরিবার বড় হয়েছে, দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছেন দত্ত-মুন্সিদের পরিবারের সদস্যরা। এখন পুজোর সময়ে কেউ কেউ আসেন বংশের পূর্বজদের হাতে শুরু হওয়া দুর্গাপুজো দেখতে।
বর্তমানে অবশ্য সেই পুজোর জৌলুশ হারিয়েছে। তবে নিয়ম-নিষ্ঠায় কোনও গাফিলতি নেই। ৪৪০ বছর ধরে হয়ে আসছে এই পুজো। দত্ত মুন্সিদের তিনটি পরিবা-- বড় বাড়ি, নতুন বাড়ি ও ফুলিরতলা বাড়ি। পালা করে এই তিন বাড়ি পুজোর দায়িত্ব নেয়।
একচালার পাঁচ পোয়া মাপের দুর্গা প্রতিমার আজও কোনো পরিবর্তন হয়নি। নবমীতে চালকুমড়ো বলি দেওয়ার প্রথা আছে। দশমীতে দত্ত মুন্সি পরিবারের মহিলারা ঠাকুর বরণ করে সিঁদুর খেলেন। তারপর বিসর্জন। আগে জমিদার গিন্নিরা বজরা করে স্নান করতে যেতেন ত্রিবেণীতে। তাঁদের জন্য তৈরি করা ছিল জেলে ঘাট। সরস্বতী নদীর সেই জেলে ঘাটেই প্রতিমা বিসর্জন হয়। বিসর্জনে যাওয়ার আগে শোভাযাত্রা গ্রামের বিশালক্ষ্মী মন্দির ও কালীমন্দিরে থামে।