পুলওয়ামার পর ভারতের এই ১০টি পদক্ষেপে কোণঠাসা পাকিস্তান
পাকিস্তানকে দেওয়া সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলেছে ভারত। এর ফলে কিছুটা হলে ধাক্কা খাবে ঋণগ্রস্ত পাকিস্তান। যদিও ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ব্যবসায়িক সম্পর্ক একেবারেই নগণ্য। পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপরে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে ২০০ শতাংশ। ওয়াঘা সীমান্তে কমপক্ষে ৩০০টি ট্রাক পাক পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে। ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্ত লেনদেন খারিজ করে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সিন্ধু জল চুক্তি সই করে ভারত-পাকিস্তান। চুক্তি অনুযায়ী পূর্বের ৩ নদী অর্থাত্ পঞ্জাবের উপর দিয়ে বয়ে চলা ইরাবতী, বিপাশা, শতদ্রুর জলে ভারতের নিয়ন্ত্রণ। আর পশ্চিমের ৩ নদী সিন্ধু, চন্দ্রভাগা, বিতস্তার জলে নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের। কিন্তু, ইরাবতী, বিপাশা, শতদ্রুর প্রায় ৯৩-৯৪% জল ভারত কাজে লাগানোর পর বাকি জল চলে যায় পাকিস্তানে। ওই অব্যবহৃত জলই এবার আটকে দিচ্ছে কেন্দ্র। ওই তিনটি নদীর জল ফেলা হবে যমুনায়।
জইশ-এ-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করার জন্য তদ্বির শুরু করেছে ভারত সরকার। ভারতের এমন উদ্যোগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চিন। তবে ভারতকে খোলাখুলি সমর্থন দিয়েছে ফ্রান্স।
পুলওয়ামা হামলার কড়া নিন্দা করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। ভারতের কূটনৈতিক তদ্বিরের ফলেই রাষ্ট্রসঙ্ঘ কড়া বিবৃতি জারি করেছে। চিন বাধা হওয়ার চেষ্টা করলেও কূটনৈতিকভাবে সফল নয়াদিল্লি। আন্তর্জাতিক আঙিনায় কোণঠাসা পাকিস্তান হাফিজ সইদের দুটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ইসলামাবাদ। এমনকি তার সদর দফতর ঘিরে ফেলেছে পাক সেনাবাহিনী। এটা পাকিস্তানের ধুলো দেওয়ার কৌশল হলেও তারা যে চাপে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
তেহরানে গিয়ে ইরানের ডেপুটি বিদেশমন্ত্রী সইদ মহম্মদ আরাঘচির সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন সুষমা স্বরাজ। পাকিস্তানি ভূখণ্ডে আশ্রিত সন্ত্রাসবাদীরা ইরানেও হামলা চালাচ্ছে। তাদের হামলায় পুলওয়ামার দিন দুই আগে শহিদ হন সে দেশে ২৭ জন জওয়ান। পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় একে অপরের সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত ও ইরান।
সন্ত্রাসবাদীদের হাতে যাতে অর্থ না পৌঁছয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করে ফিনানসিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স। তারা ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে গ্রে তালিকায় ফেলেছে। প্যারিসে এফএটিএফ-এর সম্মেলন গ্রে তালিকা থেকে মুক্তির আশা করেছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু পাকিস্তানের আশায় জল ঢেলে দিয়েছে ভারত। পুলওয়ামা নিয়ে কড়া বিবৃতি জারি করেছে ফিনানসিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স। এমনকি অক্টোবরের মধ্যে সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের জোগান বন্ধ না করতে পারলে কালো তালিকায় পাকিস্তানকে ফেলা হবে বলে সতর্ক করেছে তারা।
পাকিস্তানের সহযোগী দেশগুলির উপরে চাপ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত সরকার। পুলওয়ামা হামলার পরের দিনই ডেকে পাঠানো হয়েছিল সমস্ত দেশের রাষ্ট্রদূতদের। পাকিস্তান যে ঘটনায় জড়িত, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের বন্ধু চিনের রাষ্ট্রদূত লুও ঝোউইয়ের সঙ্গে কথা বলেন বিদেশমন্ত্রকের সেক্রেটারি বিজয় গোখলে। ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে কড়া বিবৃতি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়ার মতো দেশ। নিঃশর্ত সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ইজরায়েল। সৌদি আরবের যুবরাজের ভারত সফরের যৌথ বিবৃতিতেও সন্ত্রাসের মোকাবিলায় কড়া শব্দের প্রয়োগ করা হয়েছিল।
ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। প্রমাণ দিলে তদন্তে রাজি বলেও জানিয়েছেন। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও আলোচনা নয় বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০১৬ সালে উরি হামলার পর আলোচনার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সময়মতো পদক্ষেপ করবে ভারতীয় সেনা।
পুলওয়ামা হামলার পর সেনাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে মোদী সরকার। যে কোনও ঘটনাতেই পালটা দিতে পারবে সেনাবাহিনী। ভারতের প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলে নাগরিকদের সতর্ক করেছে পাকিস্তান। এমনকি পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে সরে গিয়ে জঙ্গি ঘাঁটিগুলি।
কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে অভিযান চালাচ্ছে সেনা। খতম হয়েছে জইশের দুই জঙ্গি। এর পাশাপাশি লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের খুঁজে বের করতে জোর অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। জরুরি ভিত্তিতে শ্রীনগরে পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত ১০০ কোম্পানি আধাসেনা। গত কয়েকদিনে কাশ্মীরের ১৮ বিচ্ছিন্নতাবাদী-সহ ১৫৫ জন নেতার নিরাপত্তা প্রত্যাহার অথবা শিথিল করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। আটক করা হয়েছে ইয়াসিন মালিককে।