Radha Gobinda Kar: আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ তো সকলেই চেনেন, এর পিছনের মানুষটিকে জানেন?

Soumitra Sen Tue, 23 Aug 2022-5:31 pm,

আজ, ২৩ অগস্ট রাধাগোবিন্দ করের জন্মদিন। ১৮৫২ সালের এই দিনে হাওড়ায় (মতান্তরে পূর্ববঙ্গে অধুনা বাংলাদেশে) জন্মেছিলেন প্রতিভাবান ও কর্মী এই মানুষটি। হাওড়া জেলার রামরাজাতলা স্টেশনে নেমে মিনিট পনেরোর পথ পেরোলেই পৌঁছনো যায় বেতড় নামের এক জায়গায়। সেখানেই বিখ্যাত কর-বাড়ি। রাধাগোবিন্দ করের জন্মভিটে।

ড. রাধাগোবিন্দ কর ভারতে ফিরে এসে কলকাতায় একটি জাতীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তৈরির কথা ভাবলেন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি একটি বৈঠক আহ্বান করেন। সেকালের বিখ্যাত সব মানুষ সেই বৈঠকে ছিলেন। ড. মহেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, ড. অক্ষয়কুমার দত্ত, ড. বিপিনবিহারী মৈত্র, ড. এম. এল. দে, ড বি জি ব্যানার্জী প্রমুখ। 

বৈঠকে ব্রিটিশ শাসকদের অধীনে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথক একটি মেডিক্যাল স্কুল স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক বৈঠকখানা বাজার রোডে ক্যালকাটা স্কুল অব মেডিসিন প্রতিষ্ঠিত হয় যদিও শীঘ্রই সেটি বৌবাজার স্ট্রিটে স্থানান্তরিত হয়। ড. রাধাগোবিন্দ করই এর প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল রাখা হয়।

১৯০৪ সালে ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল এবং অপর একটি বেসরকারি চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল একত্রিত হয়ে দ্য ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল তৈরি হয়। ১৯১৬ সালে যেটির বেলগাছিয়া মেডিক্যাল কলেজ নামে উদ্বোধন হয়। ড. রাধাগোবিন্দ কর এর প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে এই কলেজ তাঁরই নামানুসারে রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, যাকে আমরা সকলে আর.জি.কর নামেই চিনি। আর জি করের নানা বিশেষত্ব। ১৯৩৩ সাল অধ্যাপক গিরীন্দ্রশেখর বসুর তত্ত্বাবধানে এই এখানেই এশিয়ার প্রথম সাধারণ হাসপাতাল মনোরোগ বিভাগ চালু হয়।

আজকের আর জি করের আরও আদি ইতিহাস আছে। শোনা যায়, ১৮৯৮ সালে শ্যামবাজার এবং বেলগাছিয়ার মধ্যবর্তী একটি স্থানের জমি ২৫,০০০ টাকায় কেনা হয়। প্রথমে এখানে ৭০,০০০ টাকা খরচ করে ৩০ শয্যার একটি একতলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৮৯৯ সালে তৎকালীন বাংলার লেফটেনেন্ট গভর্নর স্যার জন উডবার্ন দ্বারভাঙার মহারাজ, ড. মহেন্দ্রলাল সরকার, রাজা প্যারীমোহন মুখার্জী প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। ১৯০২ সাল থেকে এটি চালু হয়।

চিকিৎসা, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ড. রাধাগোবিন্দ করের আর এক বিরল কৃতিত্ব আছে। তিনি সেই সময়েই বাংলা ভাষায় বেশ কিছু ডাক্তারি বই লিখেছিলেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'ধাত্রীসহায়', 'ভিষগ সুহৃদ', 'ভিষগ বন্ধু', 'সংক্ষিপ্ত শারীরতত্ত্ব', 'কর সংহিতা', 'সংক্ষিপ্ত ভৈষজ্যতত্ত্ব', 'প্লেগ', 'স্ত্রীরোগচিকিৎসা', 'স্ত্রীরোগের চিত্রাবলী ও সংক্ষিপ্ত তত্ত্ব', 'গাইনিকল্যাজি', 'সংক্ষিপ্ত শিশু ও বাল চিকিৎসা', 'রোগীর পরিচর্যা' প্রভৃতি। সেই সময়ে, যখন বাংলা ভাষাই ততটা আধুনিক হয়নি, তৈরি হয়নি প্রায় কোনও পরিভাষাই, সেই পরিস্থিতে বাংলায় বিজ্ঞানধর্মী বই রচনার ক্ষেত্রে তিনি দারুণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link